বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অসাধারন সাফল্য। ২০২৪ জাতীয় গেমস স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলা পদকের তালিকায় প্রথম ১০-এ স্থান করে নিয়েছে। সংস্থার নতুন কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত আপ্লুত বাংলার প্রতিযোগীদের দারুণ পারফরম্যান্সে। নতুন কর্তাদের কথায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ছেলেমেয়েদের অনুপ্রাণিত করে পদকজয়ীদের চাকরির ব্যবস্থার পাশে আর্থিক পুরস্কারও দেওয়ার কথা ঘোষনাও করেন। স্বাভাবিকভাবে অনুপ্রাণিত বাংলার ছেলেমেয়েরা এবারে জাতীয় গেমসে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে পদক এনেছেন। লন বলের পদকজয়ী আগ্নেশ বর্মা, বীণা সাহা, সৌমেন ব্যানার্জি, হর্ষবর্ধন শর্মা ও উসু-র পদকজয়ী দেবেশ সাহু উপস্থিত।
এবছর বাংলার ঘরে মোট ৪৭টি পদকের মধ্যে ১৬টি সোনা, ১৩টি রুপো ও ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক। অভাবনীয় সাফল্য। উচ্ছ্বসিত বিওএ-এর সচিব চন্দন রায়চৌধুরীর কথায়, আমরা গর্বিত। যে সমস্ত প্রতিযোগী বাংলার গৌরবকে তুলে আনার জন্য লড়াই করেছেন, তাঁদের স্যালুট। মাত্র অল্প কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে বাংলা দল এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। বিশেষ করে জিমন্যাস্টিকস, যোগাসন এবং সাঁতার আমাদেরকে সোনা উপহার দিয়েছে। সাঁতারে দুটো সোনা এসেছে। আরও সোনার পদক আসত, তা অল্পের জন্য ছিটকে গিয়েছে। জিমন্যাস্টিকসে ৫টি সোনা, ৫টি রুপো ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক এসেছে। অতীতে জিমন্যাস্টরা পদক উপহার দিতে পারেননি বাংলার ঘরে। টেবল টেনিসে তিনটি সোনার পদক ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক। কোনও রুপোর পদক না পেলেও আক্ষেপ থেকে গেছে আরও কয়েকটি পদক আসতে পারত প্রতিযোগীদের কাছ থেকে। অল্পের জন্য চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে ইভেন্ট শেষ করেন। যোগাসনে তিনটি সোনা ও একটি রুপোর পদক এসেছে। রাজ্য সরকার যেভাবে আমাদের পাশে থেকে সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা প্রতিযোগীদের কাছে বড় হাতিয়ার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সহযোগিতা না পেলে, এভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেতেন না প্রতিযোগীরা।
বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা অজিত ব্যানার্জি বলেন, আমরা জাতীয় গেমস থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আগামী দিনে এই বাংলায় বিভিন্ন একাডেমি যেমন গঠন করা হবে, তেমনই আবার অনুশীলনের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করা হবে। আমরা শুনেছি, বাংলা থেকে সেইভাবে অনুশীলনের জন্য সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়নি বলে তারা ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে পরিকাঠামার কীভাবে উন্নতি করা যায় এবং ভিনরাজ্য থেকে সেইসব প্রতিনিধিদের আবার বাংলায় নিয়ে আসা যায়। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি এবং বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমি গঠন করেছে।
বেঙ্গল আর্চারি অ্যকাডেমির ছাত্র জুয়েল সোনার পদক তুলে নিয়েছেন। তাহলে বিশ্বাস করা যেতে পরে, অ্যাকাডেমির সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্য সরকার বেলেঘাটায় সুভাষ সরোবর সুইমিং পুলটিকে নবরূপে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাঁতারুদের পক্ষে ওই সুইমিং পুলে অনুশীলন করতে কোনও রকম অসুবিধা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বেঙ্গল অলিম্পিকের প্রাক্তন সচিব কমলেশ চ্যাটার্জি বলেন, বাংলায় জাতীয় গেমস আয়োজন করা সম্ভব। এককথায় বলা যায়, এই গেমসের জন্য যা প্রয়োজনীয়, তা সবই বাংলাতে রয়েছে।সংস্থার সবি জহর দাস বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ২০২৯ সালে বাংলাতে জাতীয় গেমস সংগঠিত করা। তার জন্য অবশ্যই আমরা বিড করব।
২০২৫ জাতীয় গেমসে বাংলা রয়েছে আট নম্বরে। ৬৮ সোনা নিয়ে পদক তালিকায় শীর্ষে সার্ভিসেস! ৮ম স্থানে বাংলা, শেষ দিনেও পদক জেতেন বাংলার রিতু-ঐহিকারা। শীর্ষে সার্ভিসেস এবারের প্রতিযোগিতায় মোট পদক সংখ্যা ১২১টির মধ্যে ৬৮টি সোনা, ২৬টি রৌপ্য পদক এবং ২৭টি ব্রোঞ্জ। ২০২৩ সালের গেমসে গোয়ার পিছনে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছিল সার্ভিসেস। ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ এবং ২০২১ সালের গেমসে টানা চারবার তাঁরা সব থেকে বেশি পদক জয়ের নজির গড়েছিল জাতীয় গেমসের আসরে। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা অবশ্য পদক জয়ের নিরিখে সার্ভিসেসের থেকে বেশি থাকলেও সোনার নিরিখে সার্ভিসেসই সবার ওপরে। মহারাষ্ট্র ১৯৮টা পদক পেয়ে দ্বিতীয়, হরিয়ানা তৃতীয় স্থানে। কর্ণাটক এবং মধ্যপ্রদেশ যথাক্রমনে চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে। আট নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ। এবারে বাংলা জিতেছে ১৬টি সোনার পদক ছাড়াও ১৩টা রৌপ্য পদক এবং ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক। প্রথম দশে জায়গা পেয়েছে পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, তামিলনাড়ু।
জিমনাষ্টিকে জোড়া পদক জেতে বাংলাও। ৫টি সোনসহ ১২টি পদক নিয়ে জিমনাস্টিকে দ্বিতীয় হয় বাংলা। মহিলাদের ফ্লোর এক্সারসাইজ ইভেন্টে প্রণতি দাস সোনা জেতেন, মহিলাদের আর্টিসটিক ব্যালেন্স ইভেন্টে বাংলার মেয়ে রিতু দাস সোনা জেতেন। টেবিল টেনিসে মিক্সড ডবলস ইভেন্টে বাংলার অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় এবং ঐহিকা ঘোষ হারিয়ে দেন মহারাষ্ট্রের জুটি চিন্ময়া সৌমাইয়া ও রিত রিশ্য টেনিসনকে।
বাংলা ১৬টি সোনা-সহ মোট ৪৭টি পদক নিয়ে শেষ করেছে অষ্টম স্থানে। জাতীয় গেমসে এটাই বাংলার সবচেয়ে ভাল ফল। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ বার রাজ্যেই জাতীয় গেমস আয়োজনের চেষ্টা শুরু করছে বাংলার অলিম্পিক্স সংস্থা অর্থাৎ বিওএ। সভাপতি চন্দন রায়চৌধুরি এ ব্যাপারে কথাও বলেছেন ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার অর্থাৎ আইওএ সভাপতি পিটি ঊষার সঙ্গে। জাতীয় গেমসের জন্য দেহরাদূন গিয়েছিলেন চন্দন এবং বিওএ-র অন্য কর্তারা। সেখানেই ঊষার সঙ্গে কথা হয়। ঊষা খুবই উৎসাহী হয়ে বাংলাকে ‘বিড’ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এখনও ‘বিড’ করেনি বাংলা। চন্দন রায়চোধুরী জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে ইতিবাচক মনোভাব পেলেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘বিড’ করবেন। পরের বছর জাতীয় গেমস হবে না। ২০২৭ সালের জাতীয় গেমস আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে মেঘালয়। বাংলা চাইছে ২০২৯ সালের জাতীয় গেমস আয়োজন করতে। ১৯৮৫ সাল থেকে আধুনিক জাতীয় গেমস শুরু হওয়ার পর থেকে এক বারও এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেনি বাংলা। এবার জোরকদমে প্রচেষ্টার সম্ভাবনা। মার্চের শেষের দিকে নেতাজী সুভাষ রাজ্য গেমস আয়োজন করতে চাইছে বিওএ। মালদায় এ বারের প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হবে। পরিকাঠামো পর্যালোচনা করতে ইতিমধ্যেই কিছু কর্তা মালদায় হাজির।