Tuesday, June 3, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

বিরাট ফাইনালে কোহলির বেঙ্গালুরুর সামনে শ্রেয়সের পাঞ্জাব!‌ আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএল পাচ্ছে নয়া চ্যাম্পিয়ান

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ২০৩/৬ (সূর্যকুমার ৪৪, তিলক ৪৪, ওমরজাই ২/৪৩)
পাঞ্জাব কিংস: ২০৭/৫ (শ্রেয়স ৮৭*, নেহাল ৪৮, অশ্বনী কুমার ২/৫৫)

আত্মবিশ্বাস, সংকল্প ও জেদ। ত্রয়ীয় সংমিশ্রণ। শ্রেয়সের পাঞ্জাব কিংস এরকমই এক সাজানো দল। আইপিএল পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন! কলকাতার পর পাঞ্জাবকে ফাইনালে তুললেন শ্রেয়স, সামনে কোহলিরা। মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারী ফাইনাল যুদ্ধে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি শ্রেয়স আইয়ারের পাঞ্জাব কিংস। রবিবার বৃষ্টির কারণে আইপিএলের কোয়ালিফায়ার ২ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর। সেই ম্যাচ জিতে ফাইনালে পাঞ্জাব কিংস। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে গত বার চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। এ বার ৫ উইকেটে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে পাঞ্জাবকে ফাইনালে তুললেন।

আইপিএলের কোয়ায়লিফায়ার ২ হওয়ার কথা ছিল ইডেন গার্ডেন্সে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ছিল। প্রতিযোগিতা এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে যেতেই বদলে যায় সূচি। নতুন সূচিতে কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল ইডেন থেকে সরিয়ে আহমদাবাদে। বৃষ্টি পিছু ছাড়েনি। রবিবার কলকাতায় বৃষ্টি না হলেও আহমদাবাদে বৃষ্টি। খেলা শুরু হয় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে। আহমেদাবাদে বৃষ্টিতে ম্যাচ শুরু হওয়ায় বিলম্ব, বিসিসিআইকে একহাত নিয়ে বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির অজুহাতে ইডেন গার্ডেন্স থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ম্যাচ। আগের সূচি অনুযায়ী আইপিএলের প্লে অফের একটি ম্যাচ ও ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। ম্যাচগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আহমেদাবাদে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের মতো ম্যাচ ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর শুরু হয়। এই বৃষ্টিবিঘ্নিত বিলম্ব নিয়ে বিসিসিআই’কে কটাক্ষ করে বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন “আমি এই নিয়ে আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে জানিয়েছিলাম, ইডেন থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। আর এদিন তো এই ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়া গেল। ভারতীয় বোর্ড এবং আইপিএলের গভর্নিং বডি যেভাবে আবহাওয়াবিদ হয়ে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বলেছিল, এই সময়ে কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা। তাই কলকাতা থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া হল গুজরাটে। সেই স্যাটেলাইট কি আদৌ আবহাওয়ার খবর দেয়? নাকি এতে কেবল রাজনৈতিক বিষয়ই প্রভাবিত হয়? আসলে ওরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে রিপোর্ট দিয়েছিল। এদিন তা পরিষ্কার।” আগে ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছিলেন, “ইডেনের জল নিকাশি ব্যবস্থা খুবই উন্নত মানের। এত ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম ভারতের আর কোনও স্টেডিয়ামে নেই। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পরেও ইডেনে খুব তাড়াতাড়ি খেলা শুরু করা যায়। ইডেন থেকে জল বেরিয়ে যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে। তা সত্ত্বেও এখান থেকে ম্যাচ সরানো হল। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে এখানকার ক্রিকেটপ্রেমীরা বঞ্চিত হলেন। বাংলাকে বঞ্চনা করার লক্ষ্য নিয়েই এটা করা হয়েছে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।” প্রশ্ন, কেন এমন সিদ্ধান্ত? কেন বাংলার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকে বঞ্চিত করা হল? বিসিসিআই আর আইপিএল গভর্নিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত, আবহাওয়ার কারণে কলকাতা থেকে ম্যাচ সরানো হয়। এই বিতর্ক থামার নয়!‌

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। প্রথম তিন ওভারের মধ্যে ৮ রান করে আউট হয়ে যান রোহিত। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় পাণ্ডিয়া বাহিনী। জনি বেয়ারস্টো এবং তিলক বর্মার ৫১ রানের পার্টনারশিপ। ২৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে আউট বেয়ারস্টো। তিলক বর্মা ৪৪। মুম্বই অধিনায়ক হার্দিক ১৫ রান করেন। এরপর সূর্যকুমার যাদব ছিলেন সাবলীল। পাঞ্জাবের বোলাররা লেগ সাইডে ফিল্ডার রেখে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলেন। কাইল জেমিসন ও যুজবেন্দ্র চাহালরা প্রথম ওভারে ৩ রান দেওয়ার পর লাইন, লেংথ হারিয়ে ফেলেন। সূর্যকুমার তাঁকে অনায়াসে গ্যালারিতে ফেললেন। সূর্যকুমার যাদব ২৬ বলে ৪৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে চাহালের বলে আউট হয়ে একটি নজিরও গড়েন। ১৫ রান করার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেন এবি ডিভিলিয়ার্সের রেকর্ড। নন ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে এক মরশুমে ৬৮৭ রানের রেকর্ড ছিল নামের পাশে। ২০১৬ মরশুমে ১৬ ম্যাচ খেলে এই নজির গড়েছিলেন ‘এবিডি’। সেই রেকর্ড এদিন ভাঙেন সূর্য। চলতি মরশুমে ১৪ ম্যাচে সূর্যর রান ৭১৭। ২৯ বলে ৪৪ রানে আউট হন তিলক বর্মাও। নমন ধীর ১৫ বলে ৩৩। শেষপর্যন্ত মুম্বইয়ের ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ২০৩ রানে। পাঞ্জাবের হয়ে আজমতুল্লাহ ওমরজাই ২টি, কাইল জেমিসন, মার্কাস স্টয়নিস, বিজয়কুমার বৈশক এবং যুজবেন্দ্র চাহাল নেন ১টি করে উইকেট। শেষদিকে নমন ধীরের ১৮ বলে ৩৭ রানে শ্রেয়স আয়ারদের লক্ষ্য ২০৪ রান। লক্ষ্য তাড়া করা অসম্ভব কিছু ছিল না। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দেওয়া ২০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই প্রভসিমরন সিংয়ের উইকেট হারায় পাঞ্জাব। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ৬ রানে আউট ২৪ বছর বয়সি ক্রিকেটার। জশ ইংলিশের ঝোড়ো ইনিংস ২১ বলে ৩৮ রানে থামিয়ে দেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। ১০ বলে ২০ রান করে ফেরেন প্রিয়াংশ আর্য। নিজের প্রথম ওভারে জশপ্রীত বুমরাহ দিলেন ২০ রান। এরপর শ্রেয়স আইয়ার এবং নেহাল বাধেরা পাঞ্জাবকে বিপন্মুক্ত করার চেষ্টা। ১৩ রানের মাথায় নেহালের সহজ ক্যাচ বাউন্ডারি লাইনে মিস করেন কিউয়ি তারকা ট্রেন্ট বোল্ট। নেহাল ফেরেন ২৯ বলে ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে। পাঞ্জাব দলনায়ক শ্রেয়স ১৩তম ওভারে ইংরেজ বাঁ-হাতি পেসার উইলিয়াম টপলির ওভারে পরপর তিনটে ছক্কা হাঁকান। ২৭ বলে হাফসেঞ্চুরি। হার্দিক পাণ্ডিয়ার একটা অনবদ্য থ্রো ম্যাচে ফেরায় মুম্বইকে। ২ রানে রানআউট শশাঙ্ক সিং। শ্রেয়স ৪১ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। অসহায় পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে অষ্টাদশ আইপিএল।

কলকাতা নাইট রাইডার্স কেকেআর শ্রেয়স আইয়ারকে সম্মান দেয়নি বলে অভিযোগ। সেই শ্রেয়স আইয়ারই ১১ বছর পরে পাঞ্জাব কিংসকে আইপিএলের ফাইনালে তুললেন। আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে প্রীতি জিন্টাদের দলকে ফাইনালে পৌঁছে দিলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ২০৪ রান তাড়া করতে নেমে ৪১ বলে অপরাজিত ৮৭ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে রাজকীয় কায়দায় ছক্কা মেরে ২০১৪ সালের পরে প্রীতি জিন্টার দলকে ফাইনালে তুললেন। পাঁচ উইকেটে জেতান পঞ্জাবকে। অধিনায়ক হিসেবে ইতিহাস শ্রেয়সের। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে তিনটি দলকে আইপিএলের ফাইনালে তুললেন। ২০২০ সালে দিল্লি ক্যাপিটালস, ২০২৪ সালে কেকেআর এবং ২০২৫ সালে পাঞ্জাবকে আইপিএলের ফাইনালে তুললেন শ্রেয়স। মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং রোহিত শর্মার পরে তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে পরপর দু’বার দলকে আইপিএলের ফাইনালে তুললেন। ২০২৪ সালের মতো শ্রেয়স আইপিএল ট্রফি জিততে পারবেন?‌ নির্ধারিত হবে মঙ্গলবার, ৩ জুন। নয়া চ্যাম্পিয়ন পাবে আইপিএল। ফাইনালে ওঠা বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু আরসিবি বা পাঞ্জাব কিংস কখনও আইপিএল জেতেনি। খরা কাটতে চলেছে কোনও এক দলের। তবে, শ্রেয়সেরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন। কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ট্রফির কাছে নিয়ে গেলেন। গত ম্যাচ হেরে বলেছিলেন যুদ্ধ শেষ হয়নি। আবারও প্রমাণ করলেন শ্রেয়স।

মেগা নিলামের সময় শ্রেয়সকে নিয়ে ঝড় উঠেছিল। শেষপর্যন্ত ২৬.৭৫ কোটি টাকায় দলে নেয় পাঞ্জাব কিংস। সেই দলকেই ১১ বছর পরে আইপিএলের ফাইনালে তুলে শ্রেয়স আইয়ারের দাবি, নিলামের সময় মোটেও ভাবছিলেন না কোন দল নেবে বা কোন দলের হয়ে খেলবেন।শুধু এমন একটা দলে যেতে চাইছিলেন, যে দলে ভালো এবং ইতিবাচক পরিবেশ থাকবে। যে পরিবেশটা পাঞ্জাবে পেয়েছেন বলে দাবি করেন শ্রেয়স। প্রাক্তন ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সকে কেকেআরকে ছাড়লেন না ভারতীয় তারকা? অধিনায়ক বলেন, ‘‌একটা ভালো পরিবেশে থাকতে চাইছিলাম। সত্যি কথা বলতে, আমি কোন দলে যাব, সেই বিষয়ে আমি ভাবছিলাম না। আমি একটা ভালো পরিবেশে থাকতে চাইছিলাম। আমি কোথায় যাচ্ছি, তার বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল যে মানসিকভাবে আমি কেমন আছি। আমার মনে হয়, ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমি অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। আমার আশপাশের যাঁরা আছেন, তাঁরা সকলেই আমায় খুব স্বস্তিতে রাখছেন। পরিবেশ সবসময় ইতিবাচক থাকছে।’ পাঞ্জাবের পরিবেশ খুব একটা অচেনা নয় শ্রেয়সের। পাঞ্জাবের হেড কোচ রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে আগেও কাজ করার ফলে তাঁদের মধ্যে আলাদা একটা রসায়ন আছে। শ্রেয়সের মধ্যেও আলাদা জাদু আছে। যে জাদুবলে দিল্লি ক্যাপিটালসকে প্রথমবার আইপিএল ফাইনালে তুলেছিলেন। কেকেআরকে আইপিএল এনে দিয়েছিলেন ১০ বছর পরে। প্রথমবার পাঞ্জাবকে আইপিএল জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে শ্রেয়স তুখোড় ছন্দে ব্যাট হাতেও দলকে ভরসা দিচ্ছেন। কমপ্লিট প্যাকেজ হয়ে উঠেছেন। আপাতত আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএল ফাইনাল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও শ্রেয়স আইয়ারের পাঞ্জাবের সম্মুখ সমর দেখতে উদগ্রীব ক্রিকেটপ্রেমীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles