মহুয়া নিজে মনে করেন, তিনি ‘বিতর্কিত’। কারণ, প্রথাসিদ্ধ ভঙ্গিতে কিছু করেন না। মহুয়া বলতে বাধ্যে হয়েছিলেন ‘আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড।’ এবার হাওয়া বদলের বার্তা বহনে মহুয়া মৈত্রের বিয়ে! বেশি বয়সে বিয়ে দেখতে খানিক স্বচ্ছন্দ হল কি সমাজ? বিয়ে করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। স্বামী পিনাকী মিশ্রের বয়স ৬৫। সময়ের সঙ্গে বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের হার বেড়েছে। সেই ভিড়ে তারকাদের মতো সাধারণেরাও রয়েছেন। সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। পাত্র পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্র। মহুয়ার বয়স এখন ৫১, পিনাকীর ৬৫। চলতি বছরেই এপ্রিলে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাত্রী দীর্ঘদিনের বন্ধু তথা বিজেপি কর্মী রিঙ্কু মজুমদার। দিলীপ বিয়ে করেন ৬১ বছর বয়সে। উদাহরণ অনেক। প্রাক্তন ক্রিকেটার অরুনলাল ৬৬ বছব বয়সে বিয়ে করেন বয়স ৩৬ এর বুলবুল সাহাকে। আবার প্রাক্তন ক্রিকেটার স্নেহাশিষ গাঙ্গুলী ৫৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন শিল্পোদ্যোগীর প্রাক্তন স্ত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে। বলিউডে মিলিন্দ সোমন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৫৩ বছর বয়সে। পাত্রী অঙ্কিতা কোনারের সঙ্গে বয়সের পার্থক্য ২৬ বছর, সেই সময়ে অনেকেরই নজর কাড়ে। দীর্ঘদিন একত্রবাসের পর আইনি মতে বিয়ে সারেন বর্ষীয়ান অভিনেতা দীপঙ্কর দে এবং দোলন রায়। ২০২৩ সালে অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী এবং রুপালি বড়ুয়ার বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর শোরগোল। আশিস বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ৫৭ বছর বয়সে। বয়স্কদের বিয়ের ক্ষেত্রে কটাক্ষর প্রবণতা কমছে। আশিসের কথায়, ‘‘কারও যদি শেষ জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজন হয়, কেউ যদি পরিবার তৈরি করতে চায়, তাতে তো কোনও ক্ষতি নেই!’’বেশি বয়সে বিয়ে। বদলে যাচ্ছে বিয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের ধরনও। দিলীপ সল্টলেকের বাড়িতে ঘরোয়া পরিসরে বিয়ে করেছিলেন। পাত্র নয়, বরং পাত্রী রিঙ্কু এসেছিলেন বিয়ে করতে। মহুয়ার ভিন্ দেশে বিয়ে। সুদূর জার্মানির বার্লিন শহরের এক রাজপ্রাসাদে পিনাকীর সঙ্গে বিয়ে যেমন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

জেনারেশন আলফাদের যুগ শুরু। ভারতে এখন যুবক যুবতীদের বিয়ের গড় বয়স পিছিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। এক দিকে আছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে কেরিয়ার তৈরির স্বপ্ন। উচ্চশিক্ষার পরে চাকরি বা ব্যবসায় পায়ের নীচের জমি শক্ত না হলে বিয়ের মতো ‘গুরু দায়িত্ব’ কাঁধে নিতে চাইছেন না অনেকেই। অন্য দিকে, নারী ক্ষমতায়ন সমাজের মহিলাদের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে। অনেকেই এখন বিয়ে না করে বরং একত্রবাসের পথে হাঁটছেন। জল মেপে সমীকরণ সমতা এলে বিয়ে, অন্যথায় বিচ্ছেদ। সব মিলিয়ে বিয়ের সময় এবং সিদ্ধান্ত নিতেও অনেকটাই সময় কেটে যাচ্ছে। এক সময় পরিবার এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। এখন সমাজ ‘সিঙ্গল মাদার’-এর প্রতি সহনশীল। বেশি বয়সে বিয়ে করলে প্রয়োজনে অনেকেই সন্তান দত্তকের পথে হাঁটছেন। বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তার পর নতুন দাম্পত্যে প্রথম পক্ষের সন্তানকেও অন্যজন সাদরে গ্রহণের উদাহরণ রয়েছে। বয়স্কদের একাংশের ক্ষেত্রেই জীবনের অর্ধেক কেটে যায় অন্যের চিন্তা এবং দায়িত্ব পালনে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কর্তব্য শেষে নিজের কথা ভাবতে শুরু করেন। তখনই মধুরেণ সমাপয়েত। বর্ষীয়ান ব্যক্তিটি বিয়ের ক্ষেত্রে দাবি দাওয়াহীন। কারও সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলি আনন্দে কাটানোর সরল ইচ্ছাপ্রকাশ গুরুত্ব পায়।

চার হাত এক তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রাক্তন বিজেডি সাংসদ পিনাকী মিশ্রের। জার্মানির বার্লিনে দু’জনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। পিনাকী মিশ্রকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন মহুয়া। ১৯৫৯ সালে ২৩ অক্টোবর কটকে জন্মগ্রহণ করেন পিনাকী। দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর ঝোঁক ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে আইনের জগতে দীর্ঘ ও সফল কেরিয়ার ছিল তাঁর। বৈদেশিক মুদ্রা, খনি, কোম্পানি আইন, শুল্ক ও আবগারি এবং সাংবিধানিক আইনের মতো একাধিক বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। রাজনীতির হাতেখড়ি হয় কংগ্রেসের হাত ধরেই। ১৯৯৬ সালে ওডিশার পুরী আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তৎকালীন পুরী সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ব্রজ কিশোর ত্রিপাঠীকে পরাজিত করে রাজনীতির জগতে পরিচিত পেতে শুরু করেন পিনাকী। পরের নির্বাচনগুলিতে পরাজিত হলেও ২০০৯ সালে পুনরায় সংসদের অলিন্দে পা রাখেন পিনাকী। যদিও কংগ্রেসের হাত ছেড়ে ততদিনে বিজু জনতা দলে নাম লিখিয়েছেন তিনি। বিজু জনতা দলের টিকিটেই ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর পর তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে যদিও তাঁকে আর টিকিট দেননি নবীন পট্টনায়েক। তৃণমূল সাংসদ ও পিনাকীর বর্তমান স্ত্রী মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সংসদে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তোলে ওঠে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে যে বিতর্ক নিয়ে উত্তাল হয় গোটা দেশ। সেই বিতর্কে নাম জড়ায় পিনাকীরও। পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটির কাছে ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানি যে অভিযোগ করেছিলেন, সেখানে পিনাকী মিশ্রের নাম ছিল বলেও দাবি করেছিল বিজেপি। এমনকী, পিনাকীর সঙ্গে মহুয়া মৈত্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক ছিল বলেও আলোচনা চলে রাজনৈতিক মহলে। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নের বিতর্কে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। এমনকী তাঁকে বাংলো খালি করার জন্যেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় থেকেই মহুয়াকে আইনি সহায়তা দিয়ে আসতেন পিনাকী মিশ্র। মহুয়া মৈত্রের পক্ষে আদালতে মিশ্র আবেদন করেছিলেন যে, তাঁকে সরকারি বাংলোয় থাকতে দেওয়া হোক। আইনজীবী জয় অনন্ত এর পরেই দাবি করেন, বাংলো খালি করে দেওয়ার নির্দেশ আসার পরেই মিশ্রের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন মহুয়া। যদিও, এই বিষয়টি নিয়ে দু’জনের তরফে প্রকাশ্যে কিছু বলতে শোনা যায়নি। আমেরিকায় ইনভেসমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসেবে কয়েক বছর কাজ করার পর ভারতীয় রাজনীতিতে আসার বাসনা জাগে মহুয়ার। উচ্চ পদের চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতিতে নামেন মহুয়া। কিছু দিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান। ২০১৬ সালে করিমপুর কেন্দ্রে তাঁকে বিধানসভার টিকিট দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন বছর পরেই একলাফে সংসদে প্রবেশ। ২০১৯ থেকে টানা দু’বার কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত মহুয়া।

বাংলার সাংসদের গাল ঢাকা রোদচশমা, কাঁধ ছোঁয়া ‘স্ট্রেট’ চুল, নিত্যনতুন হ্যান্ডলুম শাড়ি, হাত ব্যাগ নিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ। ফ্যাশন সচেতন মহুয়ার একটি লুই ভিতোঁ ব্যাগের দাম ছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘মোদীর দশ লক্ষ টাকার স্যুট বিক্রি করে ব্যাগ কিনেছি।’’ মহুয়া বিয়ে করলেন বার্লিনের রাজপ্রাসাদে। পরলেন বলিউডের অভিনেত্রীদের প্রিয় ব্র্যান্ড ‘র ম্যাঙ্গো’র শাড়ি। হাতব্যাগের জন্য যদি দেড় লক্ষের বেশি টাকা খরচ। বাংলার সাংসদ মহুয়া আর পাঁচটি বাঙালি মেয়ের মতোই বিয়েতে বেনারসি শাড়ি পরেছিলেন। বাঙালি বিয়েতে অনেক কনেই মা-ঠাকুরমা-দিদিমাদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনার গয়না আর বেনারসি শাড়ি পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বার্লিনের রাজপ্রাসাদের চত্বরে মহুয়াকে দেখা গেল স্বামী প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের পাশে সিঁথিতে অল্প সিঁদুর, কপালে সোনার টিকলি, পুরনো ছাঁদের বাঙালি নকশার জড়োয়ার গয়না আর দুধে আলতা রঙের বেনারসি শাড়িতে। ‘র ম্যাঙ্গো’ জানিয়েছে শাড়িটির দাম ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা। মহুয়ার বেনারসিটি কড়ওয়া পদ্ধতিতে জাল নকশায় বোনা। ওই ধরনের শাড়ি পরে এ বছর কান চলচ্চিত্রোৎসবে গিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। পরেছেন নীতা আম্বানীও। বেনারসিটি তাদের ব্র্যান্ডের সবচেয়ে সূক্ষ্ম কাজের বেনারসিগুলির একটি। শাড়িটির নাম ‘পরিগুল ব্রোকেড বেনারসি’। এতে রয়েছে কড়ওয়া পদ্ধতিতে হাতে বোনা নকশা। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি বুটি আলাদা আলাদা ভাবে বোনেন শিল্পীরা। বুনতে সময় এবং পরিশ্রম লাগে বেশি। পদ্ধতিটিও কঠিন। তাই কাজের নাম ‘কড়ওয়া’। হিন্দিতে যার অর্থ ‘কঠিন’। মহুয়ার বেনারসিটি ওই কড়ওয়া পদ্ধতিতে জাল নকশায় বোনা।

মহুয়া ‘বিতর্কিত’ কারণ, প্রথাসিদ্ধ ভঙ্গিতে কিছু করেন না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মহুয়ার একটি বক্তব্য তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। তখন মহুয়া কেবল সাংসদ নন, তৃণমূলের নদিয়া জেলার সভানেত্রীও। একটি সাংগঠনিক কর্মসূচিতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করেছিলেন। গয়েশপুরের এক কর্মিসভায় মহুয়া পৌঁছলে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বাধে। মহুয়া বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বৈঠক শুরু করেন। ‘অভ্যন্তরীণ’ বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের কয়েক জন প্রতিনিধি ঢুকে পড়েছিলেন। তখনই মেজাজ হারিয়ে মহুয়া দলের নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান, দলীয় বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে ঢোকার অনুমতি কে দিয়েছেন! উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? কর্মিবৈঠক হচ্ছে। আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত! আমি নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান!’’ মহুয়ার সেই বক্তব্য ছড়াতে বিশেষ সময় লাগেনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তৃণমূল সাংসদের কড়া নিন্দা করেছিল। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সভায় বলেছিলেন, ‘‘প্রেস-মিডিয়ার একটা সম্মান আছে। যদি কেউ মনে করে টাকার প্যাকেট দিয়ে সবাইকে কিনবে, তা হলে বলব বাংলায় সবাইকে কেনা যায় না।’’ মহুয়াকে লক্ষ্য করেই দলনেত্রী ওই মন্তব্য করেছিলেন। যদিও মমতা কারও নাম করেননি। অধুনাপ্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সম্মান করে। মহুয়ার বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। দলের বক্তব্য নয়।’’ তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নাম করেই সমালোচনা করেছিলেন মহুয়ার। মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগেরই একটি অংশ হল, মহুয়া দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে দু’কোটি টাকা নগদ নিয়েছেন। তৃণমূলের সাংসদ যদিও ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, দর্শন তাঁর বন্ধু। কখনও জন্মদিনের উপহার হিসাবে স্কার্ফ, লিপস্টিক বা আইশ্যাডো উপহার পেয়েছিলেন। কিন্তু দু’কোটি টাকা নগদ নেওয়ার কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। বিতর্কের মধ্যেই মহুয়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং মহিয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, ‘‘কোথায় কবে দু’কোটি টাকা নিয়েছি প্রমাণ করুক দেখি!’’ প্রসঙ্গত, নিশিকান্ত বা জয় দু’জনেই দু’কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ বার বার তুলেছেন, তা অবশ্য নয়। মহুয়ার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, প্রমাণ নেই বলেই দু’কোটি টাকার অভিযোগ বার বার তোলা হয়নি। তবে মূল যে বিতর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিষয়টিই। যদিও মহুয়া বলছেন, আসলে বিষয়টি ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন না-করা’। সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ নিয়ে মহুয়ার কটাক্ষ, ‘‘আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি এই কারণে যে, ইতিহাসে আমিই প্রথম, যাঁকে এথিক্স (নীতিনির্ধারক) কমিটি আনএথিক্যালি (অনৈতিক ভাবে) বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে।’’ তাঁর কথায়, এথিক্স কমিটি কখনও বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে না। তা করার এক্তিয়ার রয়েছে কেবলমাত্র সংসদের স্বাধিকাররক্ষা (প্রিভিলেজ) কমিটির। এই সুপারিশ যাবে লোকসভার স্পিকারের কাছে। স্পিকার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন এটি পেশ করবেন। তার পর আলোচনা হবে। ভোটাভুটিও হতে পারে। তবে ভোটে সংখ্যাধিক্যের জেরে সরকার পক্ষই জিতবে। অর্থাৎ, ডিসেম্বরেই মহুয়া সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন। মহুয়ার কথায়, ‘‘৫০০ পাতার রিপোর্টে কোথাও নগদ অর্থ নেওয়ার বিষয়ে প্রমাণ দেওয়া হয়নি।’’

সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভিতরে ডাকে? সরাও প্রেসকে এখান থেকে। কেন দলের মিটিংয়ে প্রেস ডাকো তোমরা? কর্মী বৈঠক হচ্ছে আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি দলের সভানেত্রী, আমি আপনাদের নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান।’ বিতর্ক চরমে উঠতে টুইট করে ক্ষমা চান সাংসদ। ২০২০ সালেই সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী স্মরজিৎ রায়চৌধুরী। মামলার ভিত্তিতে সমন ইস্যু করলেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের ১০ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। ১৪ জুলাই, ২০২৪ তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই মন্তব্য যথেষ্ট মানহানিকর অপমানজনক মনে করে সাংসদকে ক্ষমা চাইতে আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন আইনজীবী সুরজিৎ রায় চৌধুরী ও অজিত কুমার মিশ্র। ব্যাঙ্কশাল কোর্ট সূত্রে খবর, এই মামলাতেই সমন জারি করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কলকাতা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্যের নিন্দা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। আর টুইটে কৃষ্ণনগরের সাংসদ লিখেছিলেন, ‘আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড।’ যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘নিম্নমানের দুঃখজনক সঠিক কথা বলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ সেই সময়ের পরও আজও একাধিক সংবাদমাধ্যম মহুয়াকে বয়কট করে রেখেছে। অসমবয়সি বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বাধিক চর্চিত স্বামী পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বয়সের ফারাক প্রায় ১৪ বছরের। দেশে নয়, একেবারে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ সেরেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। মহুয়ার দ্বিতীয় বিয়ের আগে তিনবছর আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদরাইয়ের সঙ্গে তিনবছরের সম্পর্কে ছিলেন মহুয়া মৈত্র। পরে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দু’জনের সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ে। পোষ্যের কাস্টডি নিয়ে মামলা গড়িয়েছিল আদালতে। পরে অনন্তের সূত্র ধরে মহুয়া জড়িয়ে পড়েন সাংসদ পোর্টালের লগইন পাসওয়ার্ড বিতর্কে। তখন সাংসদ পদ খোয়াতে হয়েছিল মহুয়াকে। এর আগে মহুয়া মৈত্র ডেনমার্কের ব্যবসায়ী লার্স ব্ররসনকে বিয়ে করেছিলেন। পরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। আর এবার বার্লিনের প্রাসাদে নিজের জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসের সূচনা করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। পিণাকী মিশ্রের বয়স ৬৫ বছর। এদিকে মহুয়ার বয়স ৫১ বছর। এটা পিণাকীরও দ্বিতীয় বিয়ে। সংবাদের রসদ আবারও নিজেই দু পয়শার সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন সেই মহুয়া মৈত্রই?