লিগ ফাইনালের পঞ্চম দিন। সিএবি লিগ ফাইনালে বিতর্ক। বিতর্কিত আম্পায়ারিং। ক্রিকেটারদের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া। বাংলার ক্রিকেটে বিতর্ক থামা তো দূরের কথা, ক্রমশ বাড়ছে। ইডেনে প্রথম ডিভিশন লিগের ফাইনালের পঞ্চম তথা শেষ দিন হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন ইস্টবেঙ্গল ও ভবানীপুরের কর্মকর্তারা। মাঠে পুলিশ ডাকতে হয়। সোমবার পাঁচ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে শুরু ম্যাচ। মঙ্গলে ইস্টবেঙ্গল এক ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে তিন ওভার খেলা হয়। পঞ্চম দিনেও বিতর্ক। ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেন ক্রিকেটাররা। চতুর্থ দিনে সিএবি লিগ ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ভবানীপুর ৫৯৪/৫ স্কোরে খেলা শুরু করে সাত ওভারে ৪৯ রান জুড়ে ডিক্লেয়ার করে। স্কোরবোর্ডে ৬৪৩/৬। বিবেক সিং অপরাজিত ১৭৬ রানে। প্রদীপ্ত প্রামাণিক ফেরেন ৪৮ রানে। পাহাড়প্রমাণ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ফিরে যান ওপেনার অভিষেক দাস ৫। কিছুক্ষণের মধ্যেই আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন অন্য ওপেনার অরিন্দম ঘোষ ১৮। সতীর্থরা এগিয়ে না আসায় ভবানীপুরের দুই ক্রিকেটার কাঁধে তুলে ডাগআউটে পৌঁছে দেন। সাত্যকি দত্ত ৫৩, আকাশ ঘটক ৩২, সন্দীপন দাস ৯ রানে ফিরে যান। চাপ বাড়ে ইস্টবেঙ্গলের। দুর্দান্ত ক্যাচে আকাশকে ফেরান সাকির হাবিব গান্ধী। চতুর্থ দিনের শেষে লাল-হলুদ ১৪৭/৪। বৃহস্পতি, অর্থাৎ শেষ দিন দুই দলের কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতি পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল সিএবি কর্তারা। সিএবি-র কর্তারা মাঠে নেমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নীতীশ রঞ্জন দত্ত, ট্যুর, ফিক্সচার ও টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সঞ্জয় দাস, মেডিক্যাল কমিটির প্রধান প্রদীপ দাস ছিলেন মধ্যস্থতা করার জন্য। কিন্তু দুই শিবিরকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। এমনকী পুলিশও ডাকতে হয়।

পঞ্চম দিনের ঘটনা। ইস্টবেঙ্গলের স্কোর ৮ উইকেটে ২৪৩। বিকেলে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ করে দেন আম্পায়াররা। ভবানীপুর ক্লাবের দাবি, সামান্য বৃষ্টিতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ম্যাচ। আম্পায়াররা চাইলে তখনও আরও কিছুক্ষণ ম্যাচ চালানো যেত। ভবানীপুরের জেতার জন্য মাত্র ২ উইকেট প্রয়োজন। এভাবে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। অভিযোগ, ইস্টবেঙ্গলের দুই অপরাজিত ক্রিকেটার ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও কণিষ্ক শেঠ মাঠ ছেড়ে বেরনোর সময় ভবানীপুরের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। কটূক্তিও করেন। এর প্রতিবাদ করেন ভবানীপুর কর্তারা। এমনকী হাতাহাতি পরিস্থিতিও তৈরি হয়। বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় ম্যাচ। যুগ্ম চ্যাম্পিয়ান হয় ইস্টবেঙ্গল ও ভবানীপুর।

সৌরভ গাঙ্গুলি ও বিরাট কোহলি। ভারতের দুই প্রাক্তন অধিনায়কের সম্পর্ক বিশেষ ‘মসৃণ’ নয়। সৌরভ বোর্ড সভাপতি থাকার সময়ই অধিনায়কত্ব ছাড়েন বিরাট। কোহলির সেই সিদ্ধান্তের পিছনে পূর্বসূরিকেই দায়ী করা হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। পরবর্তীতে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রতিপক্ষ ডাগআউটে বসা সৌরভের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় বিরাটকে। উত্তরসূরিকে নিয়ে প্রকাশ্যে সবসময়ই প্রশংসা করেছেন সৌরভ। বুধ সন্ধ্যায় হঠাৎ ইডেনে হাজির সৌরভ। ছোটোখাটো বৈঠক সেরে ইডেন ছাড়ার আগে বিরাটের আইপিএল জয় নিয়ে অকপট সৌরভ বললেন, “বিরাট ভালো খেলেছে। পুরো মরশুমেই ভালো পারফর্ম করেছে। আর ১৮ বছর একেবারে কম সময় নয়। কিন্তু তারপরও জিতেছে তো। ইংল্যান্ড সফরে বুমরাহ যদি ফিট থেকে পাঁচটা টেস্টই খেলে, আমি ভারতের ভালো ফল নিয়ে আশাবাদী। বিরাট-রোহিতের অনুপস্থিতি চাপে রাখবে না ভারতকে। ২০২১ সালে ভারত মেলবোর্ন আর ব্রিসবেনে টেস্ট জিতেছে। তখনও তো অনেকে ছিল না। বিরাট-রোহিত ছিল না। ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। এই দলটাও ভালো। অধিনায়ক হিসাবে শুভমান গিল আইপিএলে ভালোই ক্যাপ্টেন্সি করেছে। অধিনায়ক হিসাবে কেউই তৈরি হয়ে আসে না। তৈরি হয়ে যায়। এটাই ওর প্রথম সুযোগ। ” টেস্ট দলে ডাক পাওয়া সাই সুদর্শনের প্রশংসা করেছেন সৌরভ। তবে ফর্মে থাকা করুণ নায়ারকে চার নম্বরে খেলানোর বিষয়টি ছাড়ছেন অধিনায়কের উপরেই। চিন্নাস্বামীর বাইরে হওয়া মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। ইংল্যান্ড সফরে ক্যাপ্টেনই নয়, আসন্ন সফরে ভারতের স্কোয়াডে একঝাঁক নতুন মুখ। টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্সে তার বিশেষ কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আশাবাদী সৌরভ। উদাহরণ হিসাবে নিজের প্রথম ইংল্যান্ড সফরের কথা প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করে বলেন “সেবার আমার অভিষেক সিরিজ ছিল। রাহুলেরও (দ্রাবিড়), যশস্বীও অস্ট্রেলিয়া গিয়ে সেঞ্চুরি করেছে। পাঁচ টেস্টের সিরিজ লম্বা সিরিজ। ভারত ভালো দল। ভালোই ফল করবে।”

১৪ থেকে ১৮ নভেম্বর প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ইডেনে যদি আসে, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের টেস্টটিও ইডেন থেকে সরতে পারে। যেটা হওয়ার কথা অক্টোবরের ১০ থেকে ১৪ তারিখ। বোর্ডের এক সূত্র বলছে, “বিসিসিআই সব সময় প্লেয়ারদের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার বিষয়ে নজর দেয়। এর মধ্যেই বোর্ডের তরফ থেকে এই ম্যাচের ভেন্যু অদলবদল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।” নভেম্বরে দিল্লির এই দূষণের সমস্যা তো নতুন কিছু নয়। তখন কেন বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি বোর্ড? সেই সময় যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এটা বোর্ডের ‘রোটেশন পদ্ধতি’র মধ্যে পড়ে। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলের ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ইডেনে। বৃষ্টির যুক্তিতে ম্যাচটি আহমেদাবাদে সরিয়ে দেওয়া হয়। রিজার্ভ ডে’তেও ইডেনের ম্যাচ নাকি ভেস্তে যেত। বছর শেষে ভারতের আরও একটি ম্যাচ পেতে চলেছে ইডেন গার্ডেন্স। অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট রয়েছে কলকাতায়। ইডেন থেকে সরে যাওয়ার কথা। ম্যাচের ভেন্যু বদল। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম থেকে ম্যাচ সরতে পারে কলকাতায়। উল্টো টাও হতে পারে।