আঠারো বছরের অপেক্ষা। অপেক্ষার অবসান। কান্না শুরু হয়েছিল চার বল বাকি থাকতেই। হেজলউডের বলটা শশাঙ্ক সিংহ বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিতেই হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়লেন। দু’হাতে ঢাকলেন চোখ। আইপিএল জিতে আবেগে ভেসে গেলেন বিরাট কোহলি। মাঠের মধ্যেই কেঁদে ফেললেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর তারকা। মাথা নীচু করে মাঠে মাথা ঠেকিয়ে সমস্ত আবেগ উজাড় করে দিলেন। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে লাফিয়ে ফিল সল্টের কোলে উঠে গেলেন। আলিঙ্গন করলেন বাকি সতীর্থদের। জড়িয়ে ধরলেন এবি ডি’ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইলদের মতো আরসিবির কিংবদন্তিদের। আবেগের বিস্ফোরণে বিরাট বলে দিলেন, কখনও ভাবতে পারেননি যে এই দিনটা আসবে। আইপিএল জিতবেন। এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, দেশের হয়ে সবই জিতে ফেলেছেন। এ বার ক্লাবের হয়ে আইপিএলও হয়ে গেল। অধিনায়ক রজত পাটীদার আগেই বলেছিলেন, তাঁরা কোহলির জন্য ট্রফি জিততে চান।

আইপিএল জয়ের পরে আরসিবির তারকা বলেন, ‘এই জয়টা যতটা দলের জন্য ততটা ফ্যানদের জন্য। ১৮টা বছর হয়ে গিয়েছে। আমি এই দলটাকে আমার তারুণ্য, নিজের সেরা সময়টা এবং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েছি। প্রতিটি মরশুমে জেতার চেষ্টা করেছি। এই দলটাকে নিজের শক্তির প্রতিটা বিন্দু দিয়েছি। আর শেষপর্যন্ত যে এই দিনটা এসেছে, তা অবিশ্বাস্য লাগছে। এই ট্রফি দলের জন্য যতটা, ততটাই সমর্থকদের জন্য। ১৮টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে এই দিনটা দেখতে। এই দলটাকে নিজের যৌবন, নিজের সেরা সময় এবং অভিজ্ঞতা দিয়েছি। প্রত্যেক মরসুমে ট্রফি জেতার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, নিজের সবটা দিয়েছি। তাতেও ট্রফি পাইনি। অবশেষে এই দিনটা দেখতে পাওয়া অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। কখনও ভাবিনি যে এই দিনটা আসবে। সত্যি কথা বলতে এটা আমাদের কেরিয়ারের সেরা জয়ের মধ্যে থাকবে। আমি শেষ ১৮ বছরে নিজের সবকিছু দিয়েছি। যাই হয়ে যাক কেন, আমি এই দলটার প্রতি অনুগত দেখেছি। এমন কয়েকটি মুহূর্ত গিয়েছে, যেখানে আমি অন্য কিছু ভেবেছি। কিন্তু আমি এই দলটার প্রতি অনুগত থেকেছি। আমি ওদের আরসিবির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকেছি। ওরা আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকেছে। কোনও দিন ভাবিনি এই দিনটা দেখতে পারব। তাই শেষ বলটা হওয়ার পর নিজের আবেগ আর সামলাতে পারিনি। নিজের শক্তির প্রত্যেকটা আউন্স এই দলটাকে দিয়েছি। আমি সবসময় ওদের হয়ে আইপিএল জিততে চেয়েছি। অন্য কারও হয়ে জেতার থেকে ওদের অর্থাৎ আরসিবির হয়ে জয়ের বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত স্পেশাল। কারণ আমার হৃদয় বেঙ্গালুরুর সঙ্গে আছে। আমার আত্মা বেঙ্গালুরুর হয়ে জড়িয়ে আছে। আমি বড় প্রতিযোগিতা জিততে ভালবাসি। বড় মুহূর্তে বাঁচতে ভালবাসি। এই ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতাটাই এত দিন ছিল না। আর আমি যেমনটা বলেছিলাম, আমি যতদিন আইপিএল খেলব, ততদিন এই দলটার হয়েই খেলব। ট্রফিজয়টা আরও ভাল লাগছে কারণ আমার হৃদয় এবং আত্মা রয়েছে বেঙ্গালুরুর সঙ্গেই। আইপিএলের শেষ দিন পর্যন্ত এই দলের সঙ্গেই থাকব। সেইসঙ্গে আরসিবি তারকা বলেন, ‘আজ রাতে আমি বাচ্চার মতো ঘুমাব।’

এবিডিকে ম্যাচের পর ওকে বলেছিলাম, ‘এই জয় যতটা আমাদের, ততটাই তোমার। আমি চাই তুমিও আমাদের সঙ্গে উৎসব করো’। চার বছর আগে অবসর নিয়েছে ও। এখনও বেঙ্গালুরুর হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতার রেকর্ড ওর রয়েছে। আইপিএলে ওর প্রভাব কতটা সেটা এর থেকেই বোঝা যায়। ট্রফি তোলার সময় ওকেও পোডিয়ামে চাই। আমরা তিন জন একসঙ্গে কত বছর এই দলটার সঙ্গে কাটিয়েছি। আমরা তিন জনেই নিজেদের সেরা সময়টা বেঙ্গালুরুকে দিয়েছি। সেই স্মৃতি কখনও ভোলা যাবে না। তাই আজ ট্রফি জেতার সময়ে সবার আগে ওদের কথাই মাথায় আসছে। আমি ভাগ্যবান যে আজ ওদের পাশে পেয়েছি। চাই এর পর ওরা দলের সঙ্গে বেঙ্গালুরু গিয়ে ট্রফিজয়ের উৎসব করুক। আর একজন হলেন আমার স্ত্রী। অনুষ্কা। ২০১৪ সাল থেকে বেঙ্গালুরুকে সমর্থন করছে। ও নিজেও বেঙ্গালুরুর মেয়ে। আমাকে সবচেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখেছে ও। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যখন গিয়েছি, যখন ভেঙে পড়েছি, আর কিছুই ভাল লাগেনি, তখন অনুষ্কাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে ভরসা দিয়েছে। নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। সহধর্মিনী পাশে না থাকলে এর কিছুই সম্ভব হত না। খুব বেশি দিন ধরে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাব না। সব কিছুরই একটা শেষ আছে। বুটজোড়া তুলে রাখার পর বাড়িতে বসে যেন এটা বলতে পারি, আমি নিজের সবটা দিয়েছি। কখনও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে খেলতে চাই না। ২০ ওভার ফিল্ডিং করে ম্যয়াচে প্রভাব ফেলতে চাই। সারা জীবন এ ভাবেই খেলে এসেছি। ঈশ্বরও আমাকে সেই প্রতিভা দিয়েই পাঠিয়েছেন। নিলামের পর অনেকেই আমাদের কৌশল নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু নিলামের পরের দিন থেকেই আমরা দল নিয়ে খুশি ছিলাম। দলের শক্তি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল। প্রত্যেকের অবদান ছাড়া ট্রফি জয় কখনওই সম্ভব হত না। এই ট্রফি সবার।”

বিরাট কোহলি জানিয়ে দিলেন, টেস্ট ক্রিকেটই এখনও সর্বোত্তম। তরুণ ক্রিকেটারদের পরামর্শ কোহলির, “আমার ক্রিকেটজীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে এই ট্রফিজয় অবশ্যই থাকবে। তবু বলব, টেস্ট ক্রিকেট খেলার তুলনায় এই ট্রফিজয় পাঁচ ধাপ নীচে থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটকে এতটাই উপরে রাখি আমি। এতটাই ভালবাসি টেস্ট ক্রিকেটকে। যে সব তরুণ ক্রিকেটারেরা উঠে আসছে তাদের বলব, সম্মানের সঙ্গে টেস্ট খেলো। যদি টেস্টে ভাল খেলো তা হলের বিশ্বের যে কোনও জায়গায় বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারবে। লোকে তোমার দিকে তাকিয়ে দেখবে। এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে বলবে, দারুণ খেলেছো। নিজের সবটা দিয়ে দাও টেস্ট ক্রিকেটকে। যদি তুমি চমকে দেওয়ার মতো কিছু করতে পারো, তা হলে ক্রিকেটবিশ্ব কিংবদন্তিদের পাশে তোমাকে বসাবে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে হৃদয় জিতে নেবে।”
প্রথমবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসকে সেরার সেরা খেতাব তুলে নিলেন বিরাট কোহলিরা।
অরেঞ্জ ক্যাপ: সাই সুদর্শন, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)- ৭৫৯ রান
পার্পল ক্যাপ: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)- ২৫ উইকেট
মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার: সূর্যকুমার যাদব, ১৫ লক্ষ টাকা (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)
ফ্যান্টাসি প্লেয়ার অফ দ্য সিজন: সাই সুদর্শন, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)
ফেয়ার প্লে: চেন্নাই সুপার কিংস
সুপার স্ট্রাইকার অফ দ্য সিজন: বৈভব সূর্যবংশী (রাজস্থান রয়্যালস- ২০৭ স্ট্রাইক রেট)
ফ্যান্টাসি কিং প্লেয়ার: সাই সুদর্শন, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)
সর্বাধিক ছয়: নিকোলাস পুরান- ৪০টি ছয়, ১০ লক্ষ টাকা (লখনউ সুপার জায়ান্টস)
সর্বাধিক চার: সাই সুদর্শন- ৮৮টি চার, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)
ইমার্জিং প্লেয়ার: সাই সুদর্শন, ১০ লক্ষ টাকা (গুজরাট টাইটান্স)
সেরা ক্যাচ: কামিন্দু মেন্ডিস, ১০ লক্ষ টাকা (সানরাইজার্স স্টেডিয়াম)
সেরা স্টেডিয়াম: অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, ৫০ লক্ষ টাকা (দিল্লি)
ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: ক্রুণাল পাণ্ডিয়া (আরসিবি)
চ্যাম্পিয়ন: ২০ কোটি
রানার্স আপ: ১২.৫ কোটি
তৃতীয় স্থান: ৭ কোটি
চতুর্থ স্থান: ৬.৫ কোটি
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। আরসিবি ৯ উইকেট হারিয়ে করে ১৯০ রান। বিরাট কোহলি করেন ৪৩ রান। জবাবে ১৮৭ রান করে পাঞ্জাব কিংস। অধিনায়ক শ্রেয়স করেন মাত্র ১ রান। আরসিবি’র হয়ে দুটি উইকেট ক্রুণাল পাণ্ডিয়া ও ভুবনেশ্বর কুমারের। ৬ রানে ম্যাচ জিতে ১৮তম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ১১ বছরে ৯টি আইপিএল ট্রফি! ফাইনালে ইতিহাসও গড়ল একটা পরিবার। পান্ডিয়া পরিবারে শেষ ১১টি মরশুমে ন’টি আইপিএল ট্রফি। চারবার আইপিএল ট্রফি জিতলেন দাদা ক্রুণাল। ভাই হার্দিকের ঝুলিতে আছে পাঁচটি ট্রফি। তিনটি আইপিএল ট্রফি আবার একসঙ্গে জিতেছেন। ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি আইপিএল ফাইনালের সেরা নির্বাচিত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর তারকা ক্রুণাল বললেন, ‘আমি হার্দিককে বলছিলাম যে পান্ডিয়া বাড়িতে ১১ বছরে ন’টি আইপিএল ট্রফি হবে।’ পান্ডিয়া পরিবারে যে নবম আইপিএল ট্রফিটা ঢুকেছে, সেটার নেপথ্যে ক্রুণালের মারাত্মক অবদান রয়েছে। ফাইনালে ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্জাব কিংস শুরুটা ভালো করার পরে শ্রেয়স আইয়ারের দলের উপরে সেই অর্থে প্রথম চাপ তৈরি করেন ক্রুণালই। পাওয়ার প্লে’তে আরসিবি এক উইকেট তুলে ৫২ রান খরচ করার পরে সপ্তম ওভারে বল করতে এসে মাত্র তিন রান দেন। নবম ওভারে চার রান দিয়ে প্রভসিমরন সিংকে আউট করে দেন আর নিজের শেষ ওভারে আউট করে দেন পঞ্জাবের বিধ্বংসী ব্যাটার জোশ ইংলিসকে। সবমিলিয়ে মেগা ফাইনালে চার ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে দু’উইকেট তুলে নেন। তিনি যে ২৪টি বল করেন, তার মধ্যে মাত্র একটিই বাউন্ডারির বাইরে পাঠায় পাঞ্জাব ব্যাটাররা। ক্রুণালকেই ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে অভিহিত করেন খোদ পাঞ্জাবের অধিনায়ক। ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, গত ম্যাচে আমরা এখানে খেলায় আমার মনে হয়েছিল যে ২০০ রান হল ঠিকঠাক স্কোর। ওরা (আরসিবি বোলাররা) দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ক্রুণাল তো অভাবনীয় খেলেছে। ও নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বোলিং করেছে। ওটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ম্যাচের মোড় ঘোরানো পারফরম্যান্সের সুবাদে আইপিএল ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ক্রুণাল। ২০১৭ সালের ফাইনালেও ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। লো-স্কোরিং ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ৪৭ বলে ৩৮ রান করেছিলেন। বল হাতে কোনও উইকেট না পেলেও বেশি রান খরচ করেননি। যে ম্যাচটা শেষপর্যন্ত এক রানে জিতেছিল রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন মুম্বই। আর সেই ঘটনার প্রায় এক দশক ধরে আরসিবিতে নিজের মরশুমেই আইপিএল জিতলেন ক্রুণাল।
ক্রুণাল পান্ডিয়ার আইপিএল জয়
১) ২০১৭ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
২) ২০১৯ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
৩) ২০২০ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
৪) ২০২৫ সাল (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)।
হার্দিক পান্ডিয়ার আইপিএল জয়
১) ২০১৫ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
২) ২০১৭ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
৩) ২০১৯ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
৪) ২০২০ সাল (মুম্বই ইন্ডিয়ান্স)।
৫) ২০২২ সাল (গুজরাট টাইটানস)।
আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের সম্পূর্ণ তালিকা
১) ২০০৮ সাল: রাজস্থান রয়্যালস।
২) ২০০৯ সাল: ডেকান চার্জাস।
৩) ২০১০ সাল: চেন্নাই সুপার কিংস।
৪) ২০১১ সাল: চেন্নাই সুপার কিংস।
৫) ২০১২ সাল: কলকাতা নাইট রাইডার্স।
৬) ২০১৩ সাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
৭) ২০১৪ সাল: কলকাতা নাইট রাইডার্স।
৮) ২০১৫ সাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
৯) ২০১৬ সাল: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
১০) ২০১৭ সাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
১১) ২০১৮ সাল: চেন্নাই সুপার কিংস।
১২) ২০১৯ সাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
১৩) ২০২০ সাল: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
১৪) ২০২১ সাল: চেন্নাই সুপার কিংস।
১৫) ২০২২ সাল: গুজরাট টাইটানস।
১৬) ২০২৩ সাল: চেন্নাই সুপার কিংস।
১৭) ২০২৪ সাল: কলকাতা নাইট রাইডার্স।
১৮) ২০২৫ সাল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
আইপিএলে খেলা সব ক্রিকেটারের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া সেরা একাদশ আর কে নিউজ ডট কম।
সাই সুদর্শন: ওপেনিং ব্যাটার বেছে নিতে গেলে সবার আগে আসবে সুদর্শনের নাম। আইপিএলে সবচেয়ে ভাল খেলেছেন তিনিই। ১৫টি ম্যাচে ৭৫৯ রান করে কমলা টুপি উঠেছে তাঁর মাথাতেই। একটি শতরান এবং ছ’টি অর্ধশতরান করেছেন। তাঁর সঙ্গে শুভমন গিলের ওপেনিং জুটি আইপিএলের অন্যতম সেরা।
বিরাট কোহলি: বেঙ্গালুরুর হয়ে ওপেন করতে নেমে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রান করেছেন কোহলি। ফিল সল্টের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি বেঙ্গালুরুকে শুরুতেই কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বেঙ্গালুরুর ফাইনালে ওঠার নেপথ্যে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। ১৫টি ইনিংসে ৬৫৭ রান করেছেন কোহলি। শতরান না পেলেও আটটি অর্ধশতরান রয়েছে। স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৫৩।
কেএল রাহুল: লখনউ থেকে বিদায় নিয়ে দিল্লিতে গিয়েছিলেন ১৪ কোটি টাকায়। লখনউয়ে অপমানিত হওয়ার পর নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিল কর্ণাটকের ব্যাটারের। দল হয়তো প্লে-অফে। রাহুল ব্যক্তিগত ভাবে সফল। ১৩টি ম্যাচে ৫৩৯ রান করেছেন। একটি শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে দলকে জিতিয়েছেন।
শ্রেয়স আয়ার: শ্রেয়স চারের ব্যাটার দলের অধিনায়কও। পাঞ্জাব কিংসকে ফাইনালে তোলার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান। ব্যাট হাতে বা মাঠে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি গোটা দলকে এক সুতোয় গেঁথেছেন। ২৬.৭৫ কোটি টাকা খরচ করে দল নিয়েছে। ১৭টি ইনিংসে শ্রেয়স ৬০৪ রান করেছেন। ছ’টি অর্ধশতরান। মুম্বইকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে দলকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে তাঁর ইনিংস আইপিএলের অন্যতম সেরা।
সূর্যকুমার যাদব: আইপিএলের প্লে-অফে তোলার নেপথ্যে সূর্যের অবদান অনস্বীকার্য। সূর্য ধারাবাহিক ভাবে রান করেছেন। ১৬টি ইনিংসে ৭১৭ রান করেছেন পাঁচটি অর্ধশতরানের সাহায্যে। ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের জন্য খেললে আরও তিন-চারটি অর্ধশতরান করে ফেলতে পারতেন। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৯১, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
হার্দিক পাণ্ডিয়া: হার্দিকের ব্যাট হাতে রান ২২৪। বল হাতে নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। একজন অলরাউন্ডার। আইপিএলে হার্দিকের চেয়ে ভাল অলরাউন্ড দক্ষতা কারও নেই। দ্বিতীয়ত, হার্দিকের অভিজ্ঞতা। জাতীয় দল এবং মুম্বইয়ে দীর্ঘ দিন খেলার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভাল খেলার ক্ষমতাবান।
শশাঙ্ক সিংহ: পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটার ফিনিশার। পাঞ্জাবে ফিনিশার হিসাবে খেলেছেন। সব ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। ১৭ ম্যাচে ১৪ ইনিংসে ৩৫০ রান। শেষ দিকে নেমে অনেক ম্যাচে পাঞ্জাবকে সাহায্য করেছেন তিনি।
নূর আহমেদ: আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় সবার নীচে চেন্নাই। নজর কেড়েছেন নূর আহমেদ। ১৪টি ম্যাচ খেলে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন। গুজরাত ছেড়ে মহানিলামে ১০ কোটি টাকায় চেন্নাইয়ে। রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র প্রতি ওভারে ৮.১৬ রান দিয়েছেন।
জসপ্রীত বুমরাহ: উইকেটপ্রাপকদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে। যে কোনও সেরা দলেই বুমরাহের প্রথম একাদশে পারফরম্যান্স কথা বলে। ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। প্রতি ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৬.৬৭ রান। ডেথ ওভারে বোলিংয়ের জন্য এখনও বুমরাহের মতো দক্ষ বোলার খুব কমই আছেন।
প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ: কলকাতায় দীর্ঘ দিন খেলে সাফল্য পাননি। গুজরাতের হয়ে অন্য মূর্তিতে কর্ণাটকের বোলার। ১৫ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে আইপিএলের বেগনি টুপির মালিক। প্রসিদ্ধের ইকনমি রেট ৮.২৭। মাঝেমধ্যে রান হজম করেন। উইকেট তোলার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই।
জশ হেজলউড: প্রসিদ্ধের মতোই নজরকাড়া হেজলউডও আইপিএল খেলছেন দীর্ঘ দিন। বিধ্বংসী ফর্ম। ইনিংসের শুরু বা শেষ, দু’জায়গাতেই বল করতে সিদ্ধহস্ত। ১২ ম্যাচে ২২টি উইকেট নেন। চোট-আঘাতে কিছু ম্যাচে খেলেন নি। উইকেটের সংখ্যা আরও বাড়ত তাহলে।
আইপিএলের সেরা একাদশ: সাই সুদর্শন, বিরাট কোহলি, নিকোলাস পুরান (উইকেটকিপার), শ্রেয়স আয়ার (অধিনায়ক), সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ডিয়া, শশাঙ্ক সিংহ, নূর আহমেদ, জসপ্রীত বুমরাহ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং জশ হেজ়লউড।