গা-মাথা গরম নেই, জ্বর নেই, হঠাৎ করেই ক্লান্তি ঘনিয়ে আসছে। খিদে নেই, পেটটা যেন ফুলে আছে সারাক্ষণ। ভাবছেন গ্যাস-অম্বলের সমস্যা? চিকিৎসকরা কিন্তু বলছেন, এমন উপসর্গ লিভার ক্যানসারের প্রথম দিকের লক্ষণও হতে পারে। আর ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এই নীরব ঘাতক ক্রমেই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। লিভার ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ এতটাই মৃদু যে অনেকেই বুঝতেই পারেন না। ফলে রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনের নানান অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভরসা রাখেন ঘরোয়া টোটকায়। তেমনই একটি টোটকা বলে, অম্বল হলে নাকি ঠান্ডা দুধ পান করতে হয়। তাতেই বাগে আনা যায় অম্বল। কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা দুধ খেলে সাময়িকভাবে অম্বল কমতে পারে। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডকে শোষণ করে এবং অ্যান্টাসিডের মতো কাজ করে অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা দুধ খেলে তা পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। ঠান্ডা দুধ খাদ্যনালীতে শীতল অনুভূতি দেয়, যা বুক জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়ক। দুধে থাকা প্রোটিন পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ঠান্ডা দুধ অম্বলের স্থায়ী সমাধান নয়। এটি কেবল সাময়িক আরাম দিতে পারে। ফুলফ্যাট ঠান্ডা দুধ খেলে কিছু মানুষের অম্বলের সমস্যা বাড়তে পারে। ফ্যাটের কারণে পাকস্থলী থেকে খাবার ধীরে ধীরে খাদ্যনালীতে যায়, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়। ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতায়, ঠান্ডা দুধ খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাগুলো পরোক্ষভাবে অম্বলের অনুভূতিকে আরও তীব্র কররে। তা ছাড়া ল্যাকটোজ হজম না হওয়ার কারণে পেটে অস্বস্তি এবং অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। অম্বল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
১. পেটের ডান দিকে অস্বস্তি বা ব্যথা
লিভার শরীরের ডান দিকে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই পেটের উপরের ডান দিকে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব করেন। কখনও কখনও সেটা পিঠেও ছড়ায়। অনেকেই এটাকে গ্যাসের ব্যথা বলে ভুল করেন।
২. বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া
ডায়েট বা ব্যায়াম না করেও যদি শরীরের ওজন হঠাৎ করে কমে যায়, তা হলে সতর্ক হওয়া দরকার। লিভার ক্যানসারে শরীর উৎপাদন করতে পারে না। পেশি ক্ষয়ে যায়, খিদে কমে যায়।
৩. পেট ফুলে থাকা বা জল জমে যাওয়া (অ্যাসাইটিস)
পেট ফাঁপা অনুভব হলে অবহেলা করবেন না। লিভারে ক্যানসার হলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হয়, ফলে পেটে জল জমে যায়। দেখতে অনেকটা গ্যাসের মতো হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।
৪. চোখ ও চামড়া হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিলিরুবিন নামক একটি রঞ্জক জমে যায়। ফলে চোখ ও চামড়া হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় প্রস্রাব রং গাঢ় হয়। ত্বকে চুলকানিও দেখা দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
ঘুমিয়েও ক্লান্তি কাটছে না? প্রতিদিন কাজে মন বসছে না? এটি যে কোনও ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। ক্যানসার শরীরের কোষগুলিকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ক্লান্তিভাব শরীরে বাসা বাঁধে।
তরমুজে। রসালো এই ফল যেমন রসনা মেটায়, তেমনই শরীরেও আনে স্বস্তি। কিন্তু ফল খেলেও তার বীজ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চলে যায় আবর্জনায়। অথচ জানেন কি, এই তরমুজের ছোট ছোট বীজেই রয়েছে শরীরের প্রয়োজনীয় একাধিক উপাদান? পুষ্টিবিদরা বলছেন, তরমুজের বিচি শুধু খাওয়া নিরাপদই নয়, ঠিকভাবে খেলে তা হতে পারে অত্যন্ত উপকারী এক ‘সুপারফুড’ও। তরমুজের বীজে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। পুষ্টিবিদদের মতে, নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খেলে এই বীজ শরীরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে।
প্রোটিন: এক মুঠো শুকনো তরমুজ বীজে পাওয়া যায় প্রায় ৩ গ্রাম প্রোটিন। শরীরের পেশি গঠন, কোষ মেরামত এবং রোগ প্রতিরোধে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম: আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, ক্লান্তি দূর করে। ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখে, হাড় মজবুত করে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: থায়ামিন, নিয়াসিন, ফলেট ইত্যাদি ভিটামিন শরীরের শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
ভাল ফ্যাট: তরমুজের বীজে থাকা মনো- ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
কাঁচা তরমুজবীজ হজম করা কষ্টসাধ্য। তাই সরাসরি খাওয়া একদম উচিত নয়। তার চেয়ে বরং বীজগুলো শুকিয়ে হালকা ভেজে নিলে তা হয়ে ওঠে সহজপাচ্য ও সুস্বাদু। কিছুক্ষণ জল ভিজিয়ে তার পর ভাজলেও চলে। এছাড়াও এই বীজ গুঁড়ো করে স্মুদি বা দুধে মেশানো যায়, স্যালাডের উপর ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
কিডনির সমস্যা থাকলে বা খনিজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করেন, তাঁদের পক্ষে তরমুজবীজ বেশি খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষত ম্যাগনেশিয়াম বা পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকলে সমস্যা হতে পারে। তাই যাঁরা কোনও দীর্ঘস্থায়ী অসুখে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাদ্যতালিকায় এই বীজ যোগ করা উচিত।
শরীরকে পুষ্টি জুগিয়ে তরতাজা রাখে খাবার। শাকসবজি, ফল, মাছ, মাংস সব কিছুই খাদ্যতালিকায় থাকলে শরীরের উপকার হয়। শুধু খাওয়াদাওয়া করলে চলবে না। তা সময়মতো হচ্ছে কিনা, সেটা সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো খাওয়াদাওয়া না করলে হজমের পাশাপাশি ত্বকের সমস্যাও হতে পারে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন সময় প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশভোজ সেরে নেওয়া প্রয়োজন। আর সময়মতো না খাওয়াদাওয়ার কুফলই বা কী। হাজার কাজের ব্যস্ততায় প্রাতঃরাশ সারেন না কেউ কেউ। এই অভ্যাস মোটেও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। কারণ, তাতে শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়। স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বাড়ে। তার ফলে মানসিক উদ্বেগ, হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা বাড়ে। অফিসে হাজারও কাজের চাপ? হাতের কাজ সারতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজে দেরি প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। দুপুর তিনটের পর আর ভুলে ভারী এবং ঠান্ডা খাবার খাবেন না। তাতে হজমের সমস্যা হতে পারে। রাত ১২টার পর নৈশভোজ সারেন অনেকে। এই অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্যাগ করুন। নইলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে। শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে পারে। তাড়াতাড়ি বাড়তে পারে ত্বকের বয়সও। লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়। সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন। সঙ্গে ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার। নানা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতে এক ক্লিকেই দেখা যাচ্ছে নানা সিনেমা, ওয়েব সিরিজ। তার ফলে ঘুমের আর দেখা নেই। রাত জাগতে জাগতেই অনেকেরই মধ্যরাতে খিদে পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজে হানা। ফ্রিজে থাকা চকোলেট, মিষ্টিতে রসনাতৃপ্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাতে অনিদ্রা, চোখের কোণ ফোলা, ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। বদভ্যাস হল যখন তখন চা, কফি খাওয়া। বিশেষত খালি পেটে চা, কফি খাওয়া উচিত নয়। তার ফলে হজমের সমস্যা দেখা যায়। তাই সঙ্গে অবশ্যই হালকা স্ন্যাকস রাখলে। শারীরিক সমস্যা সেরে যাবে।
পেট ভরে খাবার খাওয়ার পরেও অনেকেরই মুখরোচক বেশ কিছু খাবার দেখলেই ফের খিদে পায়। তবে এটা ঠিক খিদে নয়। একে বলে চোখের খিদে। আর এই চোখের খিদে কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ যখন এই খাবারগুলো আমাদের খেতে ইচ্ছা করে, আমরা একবারের জন্যও ভেবে দেখি না আমাদের সত্যিই খিদে পেয়েছে কিনা। আর এই কারণেই বিভিন্ন সময় পেটের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। জেনে নিন কী কী খাবার পাতে থাকলে ভাজাভুজিতে রাশ টানা যাবে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চান তাহলে অবশ্যই ডিম খেতে পারেন। চাইলে সিদ্ধডিমের বদলে কিছু সবজি দিয়ে ভারি করে অমলেট বানিয়ে নিয়েও খেতে পারেন। ডিমে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এছাড়াও শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান দেয় ডিম। সিদ্ধ, পোচ বা অমলেট যে ভাবেই চান না কেন, ডিম খেতে পারেন এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে। ওটসে থাকে প্রচুর ফাইবার। আর ওটস খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। ফলে আপনি এই ভুলভাল খাবার খাওয়ার মতো বিষয় এড়িয়ে চলতে পারবেন সহজেই। স্মুদি, চিলা, প্যানকেক বা খিচুড়ি যেভাবে ইচ্ছা ওটস খাওয়া যেতে পারে। মুখরোচক কিছু খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হলে সেই সময় স্বাস্থ্যের উপযোগী এমন কিছু খাওয়া দরকার, যার ফলে আপনি অস্বাস্থ্যকর ভাজাভুজির মতো খাবারগুলি খাওয়ার ইচ্ছা এড়িয়ে যেতে পারবেন। আর এজন্য আপেল একটা ভালো অপশন। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও নানা পুষ্টিগুণ। ন্যাসপাতি, তরমুজের মতো ফল কিংবা গ্রিন স্যালাডও স্বাস্থ্য়ের জন্য ভালো। অনেকটা সময় পেটও ভর্তি থাকে।
সকাল সকাল উঠে এক কাপ গরম জল নিন, তার মধ্যে মিশিয়ে নিন অল্প আদা আর লেবুর রসের পানীয়তেই মন মজেছে অনেকের। কেউ পান করছেন ওজন কমাতে, কেউ বা হজম ঠিক রাখতে। কিন্তু আসলে কী কী উপকার পাওয়া যায় এই লেবু-আদা মেশানো গরম জল খেলে? আয়ুর্বেদ থেকে আধুনিক চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই এই পানীয়ের গুণাগুণের কথা উঠে এসেছে বারবার। নিয়ম করে খেলে শরীর ভাল থাকে, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী ভাবে উপকারে আসে এই পানীয়। হজমের গোলমাল। আদা হজমের জন্য খুবই উপকারী। পাকস্থলীতে গ্যাস জমে থাকলে তা কমায়, পেটে হালকা হয়। অন্যদিকে লেবু পিত্তরসের ক্ষরণ বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ করে তোলে। সকালে খালি পেটে এই পানীয় খেলে বদহজম, অম্বল অনেকটাই কমে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এই পানীয় মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে ক্যালরি ঝরানো তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে, আর আদা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাট থাকার অনুভূতি দেয়। ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার চাহিদা কমে। ইমিউন সিস্টেমকে করে মজবুত। লেবু আর আদা দু’টিতেই আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লেবুতে আছে ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ভাইরাসঘটিত সর্দি-কাশির মতো ছোটখাটো সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ বেরিয়ে যায়। ত্বকের ঔজ্জ্বল্যে এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক পরিষ্কার থাকে, ব্রণর প্রবণতা কমে। লেবু ত্বকে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে রাখে টানটান আর উজ্জ্বল।