আহমদাবাদে বৃষ্টি। ফলে খেলা দেরিতে শুরু। মাঠ ঢাকা ছিল। ২০ ওভারের মুম্বই বনাম পাঞ্জাব ম্যাচ। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। টসের পর খেলা শুরু করা যায়নি। দু’দলের ক্রিকেটারেরা তখনও সাজঘরে। আইপিএলের প্লে-অফে খেলা শেষ করার জন্য দু’ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় রয়েছে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ছিল এক ঘণ্টা। অতিরিক্ত সময় থাকলেও ২০ ওভারের খেলা শুরু করার জন্য রাত ৯.৪০ মিনিটের মধ্যে খেলা শুরু করতে হবে। ৯.৪০ মিনিটের মধ্যে খেলা শুরু করা না যায়, তা হলে তার পর থেকে ওভার কমতে শুরু করার কথা ছিল। মুম্বই-পাঞ্জাব ম্যাচে টসের আগে বৃষ্টি হয়নি। টসের পরেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। বার বার বৃষ্টি থামছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা আবার শুরু হয়ে যাচ্ছিল। তার মধ্যেই মাঠে অনুশীলন করছিলেন পাঞ্জাব কিংসের ক্রিকেটারেরা। ৮.৪৫ নাগাদ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সকলকে সাজঘরে আশ্রয় নিতে হয়। যদি ম্যাচ না হয়, তা হলে আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী ফাইনালে উঠবে পাঞ্জাব। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পয়েন্ট তালিকায় যে দল উপরে থাকে তারাই ফাইনালে ওঠে। সেই হিসাবে ১৯ পয়েন্ট থাকার সুবাদে ফাইনালে উঠবে পাঞ্জাব। আইপিএল থেকে ছিটকে যাবে পাঁচ বারের বিজয়ী মুম্বই।
জুনের প্রথমে কলকাতায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। ঝুঁকি নিতে চায়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ফাইনাল সরছে কলকাতা থেকে? পূর্ব সূচি অনুযায়ী ইডেনে একটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচ ও ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল হয়তো চেষ্টা করার পরও আইপিএল ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ ইডেন থেকে হাতছাড়া না করার। এই বিষয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় চেষ্টাও করেন ফাইনাল ম্যাচ কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার?। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির পর আবার শুরু আইপিএল। ১৭ মে থেকে ফের শুরু হয় আইপিএল। ভারতীয় বোর্ডের তরফ থেকে টুর্নামেন্টের বাকি ক্রীড়াসূচিতে ফাইনাল-সহ টুর্নামেন্টের বাকি সতেরো ম্যাচ ছ’টা শহরে। তালিকায় বাদ পড়ে ইডেনের নাম। ছ’টা শহর যথাক্রমে বেঙ্গালুরু, জয়পুর, দিল্লি, লখনউ, মুম্বই আর আমেদাবাদ। আইপিএলের কোয়ালিফায়ার আর ফাইনাল থাকে বাদ ইডেন। পূর্ব নির্ধারিত সুচি অনুযায়ী অবশ্য ইডেনেই ওই দুটো ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত নতুন সূচিতে ইডেনে কোনও ম্যাচ দেওয়া হয়নি। মে মাসের শেষে ও জুনের প্পথম দিকে কলকাতায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, সেই কারণে বোর্ড কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি। নতুন সূচি অনুযায়ী, কেকেআর ১৭ মে খেলে আরসিবির বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে। অজিঙ্ক রাহানের টিমের গ্রুপের শেষ ম্যাচ ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদের ঘরের মাঠে না দেওয়ায় হবে দিল্লিতে। হায়দরাবাদেও প্লে অফের কোনও ম্যাচ নেই।
চেন্নাই এবং হায়দরাবাদে একটিও ম্যাচ রাখা হয়নি। বেঙ্গালুরুতে দু’টি ম্যাচ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের বাকি ১৭ ম্যাচের ভেনু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বোর্ড যে কথাটি মাথায় রেখেছে, তা হল আবহাওয়া। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ম্যাচে বৃষ্টি হয়েছে। ধর্মশালায় পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচও বৃষ্টির জন্য বিলম্বিত হয়েছিল। আইপিএল শেষ করার জন্য হাতে সময় কম। বৃষ্টির জন্য কোনও ম্যাচ না ভেস্তে যায়, এমন কি ফাইনাল বা প্লে অফেও যাতে বৃষ্টির ভ্রুকুটি না থাকে, ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখেই এই ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল। ভারত-পাকিস্তান অশান্তির আবহে হয়ত ম্যাচ সীমান্তবর্তি এলাকার স্টেডিয়ামে না দিয়ে দক্ষিন ভারত এবং পূর্ব ভারতে দেওয়া হতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের পছন্দ মতো স্টেডিয়ামই বেছে নিলেন আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য। গতবার কেকেআর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবারের আইপিএল ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের ডেরায়। সেই ভেন্যু বদল। আইপিএলের প্লে অফের ভেনু হতে চলেছে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। ফাইনালের সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উঠে আসছে আহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের নাম, জানা যাচ্ছে ৩রা জুন এখানেই হবে ২০২৫ আইপিএল ফাইনাল।
আহমদাবাদে বৃষ্টির কারণেই পাঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা গেল না। ইডেন থেকে আইপিএলের প্লে-অফ সরানো হয়েছিল বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে। রবিবার কলকাতায় সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি এবং রাতেও না। অথচ রবিবার আহমদাবাদে খেলা শুরু হল রাত ৯.৪৫ মিনিটে। এ বারের আইপিএলের কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ইডেনে। গত বার কলকাতা নাইট রাইডার্স ট্রফি জেতায় ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ছিল। প্রতিযোগিতা এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে যেতেই বদলে যায় সূচি। নতুন সূচি প্রকাশ হতেই দেখা যায় কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল ইডেন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আহমদাবাদে।
বোর্ডের তরফে বলা হয়েছিল কলকাতায় জুনের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণেই ইডেন থেকে কোয়ালিফায়ার ২ এবং ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অহমদাবাদে। কিন্তু তাতেও বৃষ্টি এড়ানো গেল না। এড়ানো গেল না রাজনীতির প্রশ্নও। ইডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল আহমদাবাদে সরানোর কারণ নিয়ে যদিও অন্য মতও ছিল। অনেকের মতে বৃষ্টি নয়, আসল কারণ রাজনীতি। আইপিএল ফাইনাল স্থানান্তরণের নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ রাজনীতির লড়াইও বড় ভূমিকা নিয়েছে। ভারত-পাক সংঘাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়ালেও মোদী-দিদির রাজনৈতিক সম্পর্ক সুবিদিত। সেই কারণেই সুযোগ পাওয়া মাত্রই আইপিএল ফাইনালের মতো ইভেন্ট কলকাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ যদি ইডেন থেকে সরাতেই হয়, তা হলে আহমদাবাদে কেন?
পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। রবিবার অহমদাবাদের বৃষ্টি দেখে আবার ক্ষোভ জানিয়ে এক বিবৃতিতে অরূপ বলেন, “আমি আগেই সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলাম, ইডেন থেকে প্লে-অফ এবং ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এ দিন এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। বিসিসিআই ও আইপিএলের গভর্নিং বডি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবহাওয়াবিদ হয়ে বলেছিল এই সময়ে কলকাতায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই স্যাটেলাইট যে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় নয়, রাজনৈতিক সংক্রান্ত বিষয়ে প্রভাবিত হয়ে এই রিপোর্ট দিয়েছিল তা পরিষ্কার। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা আইপিএলের প্লে অফ মাঠে বসে দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন।”আহমদাবাদের মাঠে নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও এর আগে প্রশ্ন উঠেছিল। অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে মাঠের ক্ষতি হয়। ইডেনের মতো পুরো মাঠ ঠেকে ফেলার ব্যবস্থাও নেই অহমদাবাদে। তবুও বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখে ইডেন থেকে ম্যাচ সরানো হয়েছে, অথচ অহমদাবাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখা হয়নি? রবিবার আহমদাবাদে খুব বেশি দর্শকও হয়নি। ইডেনে যে কোনও ম্যাচেই ৪০-৪৫ হাজার দর্শক থাকে। আইপিএলের প্লে-অফ হলে সেই সংখ্যা ৬০ হাজার ছুলেও অবাক হওয়ার থাকত না। কিন্তু অহমদাবাদের মাঠ অনেকটাই ফাঁকা। যদিও সেই মাঠে ১ লক্ষ ১০ হাজার দর্শক ধরে। ফলে ৫০ হাজার দর্শক এলেও অর্ধেক মাঠ ফাঁকা। কলকাতার থেকে সবদিক থেকেই পিছিয়ে গেল আহমেদাবাদ।