হাওড়ার আইনজীবি চন্দনকান্তি চক্রবর্ত্তীর উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি সিনেমা ব্যাঙ্কোয়েট হলে মন্ত্রী অরূপ রায় ও সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় চিৎকার করে বলে গেলেন ‘টুটু বসু ছাড়া মোহনবাগান ক্লাবের কথা ভাবাই যায় না। যে যাই লাফালাফি করুন না কেন, লিখে রাখুন সৃঞ্জয় বোস সচিব হয়ে গেছেন।’ রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় একাধিবার মাইক্রোফোনে নিশ্চিত করে দিলেন ‘মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বোস’। মোহনবাগানের সহ সভাপতি অসিত চ্যাটার্জ্জী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ‘ আমি অহংবোধের পাশে নেই। টুটু বসু এতদিন ক্লাব চালিয়ে এসেছেন। টুটু বসু অঞ্জন মিত্রকে দেখেই মোহনবাগান ক্লাবে পা রাখা। সুতরাং আমি সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গেই আছি।’ হাওড়ার রবি বিকেলে কদমতলা এলাকার সুর ব্যাঙ্কোয়েটে শান্তি সিনেমা হলে সৃঞ্জয়ের সমর্থনে সভা টুটু বসুর প্রথম নির্বাচনী সভায় যোগ। সভার ডাক দেন তৃণমূলের তরুণ তুর্কি নেতা চন্দনকান্তি চক্রবর্তী। রয়েছেন দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়রা।

চন্দন আগেই জানিয়েছিলেন, ‘এত দিন ধরে সভা করা নিয়ে একটু চাপেই ছিলাম আমরা। কারণ আমাদের নেত্রীর কোনও নির্দেশ ছিল না। আজ অরূপদা সেটা পরিষ্কার করে দেওয়ায় আমরা নির্বাচন নিয়ে অলআউট ঝাঁপাব।’ অরূপ রায়ের দাবিতে হাওড়ার ভোটারদের অন্য প্রতিক্রিয়া। জগাছা, কোনা এলাকার বেশ কিছু সদস্যের গলায় ক্ষোভ। প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে সদস্যপদ সামলানো এক প্রবীণ ভোটারের কথায়, ‘ভোটটা আমরা টুটুদার কথাতেই দেব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু এখানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের দাবি আমাদের পছন্দ হয়নি। তিনি এটা বলেছেন কি না, আমরা জানি না।’ মোহনবাগান নির্বাচন ঘিরে আপাতত শিল্প শহরে উত্তাপের ছোঁয়া। রবি সকালে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চেও সভা করেন বিরোধী নেতা সৃঞ্জয় বসু। সেখানেও ভিড় জমান সৃঞ্জয় অনুগামীরা। ছিলেন মোহনবাগান ক্লাবের অনেক সমর্থকও। রবিবার পাইকপাড়ার সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বাগান গোলরক্ষক শিল্টন পাল, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, লক্ষ্মীরতন শুল্কা সহ আরও অনেকে। বাগানের নির্বাচন ঘিরে এখন জমে উঠেছে বসু বনাম দত্ত-র লড়াই।

সরকারিভাবে তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি মোহনবাগানের নির্বাচনের দিন। আগামী মাসের যে কোনও দিনই ঘোষণা হয়ে যেতে পারে নির্বাচনের দিনক্ষণ। ইতিমধ্যেই শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন। পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছাকাছি। দাবি করছেন নির্বাচনে জিতে এলে ক্লাবের জন্য কি কি কাজ করতে চান। বাগুইআটিতে এক নির্বাচনী সভা সারেন টুটু পুত্র সৃঞ্জয় বসু। বন্ধুমহল ক্লাবে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় শ দেড়েক বাগান সদস্যের পাশাপাশি উপস্থিত হয়েছিলেন বহু সমর্থকও। মানব ঘোষের তত্ত্বাবধানে এই সভায় একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ সহ আরও অনেকে। মোহনবাগান নির্বাচনের রেশ গঙ্গার পশ্চিম পাড়েও। রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী বিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থন করার কথা জানিয়ে দাবি করেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। অরূপ রায় বলেন, ‘মোহনবাগান নির্বাচনের দুই পক্ষই আমাদের নিয়ে টানাটানি করছিল। তাই আমি কিছুটা উপযাচক হয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, আমরা কোন পক্ষে থাকব। তার পরেই তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সেটাই সবাইকে জানালাম।’ মন্ত্রী অরূপ রায় বিরোধী গোষ্ঠীর প্রার্থী সৃঞ্জয় বসুর সমর্থনে বাড়ি বাড়ি প্রচারও শুরু করেছেন। শাসক গোষ্ঠীও সজাগ। কর্মসমিতিতে থাকা জাতীয় টিমের প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় হাওড়ায় প্রভাবশালী। বেলেঘাটাতে শাসক গোষ্ঠীর সমর্থনে বড় সভা করে সত্যজিৎ বলেন, ‘মোহনবাগান সদস্যরা প্রত্যেকে শিক্ষিত ও সচেতন। তাঁরা জানেন, কাকে ভোট দিতে হবে। আমি দেবাশিসের সঙ্গেই আছি।’

অরূপ রায়ের ফোনে প্রায় একশো সমর্থক হাওড়ার সভায় হাজির। ভোটাধিকার থাকা এক সদস্যের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই এমন কোনও নির্দেশ দিয়েছেন কি না, তা আমরা জানব কী করে? আর এটা তো সাধারণ নির্বাচন নয় যে পার্টির নির্দেশ মানতেই হবে।’ মোহনবাগান নির্বাচনে উত্তর কলকাতা এক নম্বর ভোটব্যাঙ্ক, হাওড়া দ্বিতীয় ভোটব্যাঙ্ক। প্রায় ১৭০০ বৈধ ভোটার রয়েছেন হাওড়ায়। অরূপ রায়ের নিজের এলাকা মধ্য হাওড়ায় ৪০৪ ও শিবপুরে ২১৩, বামুনগাছি ২৩৩, সালকিয়া ২১২, শরৎ চ্যাটার্জি রোড ১৬১, বালি ৭৮, বেলুড় ২২, দাশনগর ৪৬, দানেশ শেখ লেনে ২৮ ভোটার। মধ্য হাওড়াতে দেবাশিস দত্ত গোষ্ঠীর প্রবীণ কর্তা ও কর্মসমিতির সদস্য কাশীনাথ দাসের সদস্যদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই সব অঞ্চলের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড নবীকরণের কাজ করেন কাশীনাথ। টুটু বসু অঞ্জন মিত্রের সঙ্গে বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউটের সহপাঠী কাশীনাথের কথায়, ‘ভোটের সময়ে শুধু সদস্যদের বাড়ি গেলেই ভোট পাওয়া যায় না। আমরা যারা সারা বছর ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, তাঁরা আমাদের কথাতেই ভোট দেবেন।’

মোহনবাগানের নির্বাচনে হাওড়ার গুরুত্ব প্রচুর বলেই এখানকার ৮ জন মোহনবাগানের কর্মসমিতিতে আছেন। অরূপ রায় ও অসিত চট্টোপাধ্যায় ভাইস প্রেসিডেন্ট, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় সহসচিব, রঞ্জন রায় পরিকল্পনা সচিব, তন্ময় চট্টোপাধ্যায় ক্রিকেট সচিব, শুভাশিস পাল হকি সচিব ও কাশীনাথ দাস কর্মসমিতি সদস্য। মহেশ টেকরিওয়াল আছেন আমন্ত্রিত সদস্য। দেবাশিস দত্তের সমর্থনেই নির্বাচনী প্রচার করা সদস্য। মন্ত্রীর ফোনে এই সভায় অসিত, শুভাশিস, মহেশকে দেখা গেলেও বাকিদের দেখা যায়নি। অরূপ ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন এমআইসি শ্যামল মিত্র দেবাশিসের হয়ে এতদিন হাওড়ায় প্রচার করার পর, হঠাৎই দলবদল করতে বলায় চাপে। হাওড়া সভায় শ্যামলের পাত্তা নেই। সভায় অসিত বক্তব্য পেশ করলেও শুভাশিস ও মহেশ নীরব।

বিজেপি নেতা, এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনীকে সামনে রেখেই গেরুয়া শিবির মদত দিচ্ছে বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তকে। মোহনবাগান নির্বাচনের আগে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পিছনে বিজেপির মদতপুষ্টতা প্রকাশ্যে। মানিকতলায় বিজেপির হয়ে প্রচার করা সোহিনীকে ঢাল করে বর্তমান সচিবকে গেরুয়া শিবিরের মদত। মোহনবাগান নির্বাচনে দেবাশিস দত্তের হয়ে ইতিমধ্যে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতা, এআইএফএফ-র সভাপতি কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনী। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেবাশিস-সোহিনী জুটিকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে, কারণ সোহিনীকে ভরসার কেন্দ্র হিসাবে দেখছেন মোহনবাগান সচিব। দেবাশিসের প্রশ্ন, সিপিএমের কিছু সমর্থক মোহনবাগানে কেন সক্রিয় হবেন? জবাব মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোসের, “মোহনবাগানে সব দলের মানুষ থাকতেই পারেন। মনে রাখতে হবে, আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বহু ক্লাবের ক্রীড়া-পরিকাঠামো গড়ে দিচ্ছেন। ময়দানে উন্নয়নের নতুন অভিমুখ গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা যদি মোহনবাগানে সমর্থক হয়ে আসেন তাতে কারও আপত্তি থাকবে কেন?” কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনী একদিকে যেমন বিজেপির সক্রিয় প্রচারক।

বাগুইআটির সভায় সৃঞ্জয় বোসের সঙ্গে প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ, বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়, অমিত মৌলিক, বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী-সহ বিশিষ্টরা। বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার বাবা বলতেন তিনজন বোসকে কখনও ভুলবে না। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, জ্যোতি বোস এবং টুটু বোস। মোহনবাগানের প্রতি টুটু বোসের যা অবদান তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আর তাঁর ছেলে টুম্পাই যখন আমাকে ফোন করে, আমার মনে হল, অমিতাভ বচ্চনের মতো কেউ আমাকে ফোন করল। মোহনবাগান ক্লাবে তাঁদের যা অবদান তাতে আমি সত্যিই আনন্দিত।” বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী, আরাত্রিকা চট্টোপাধ্যায়, কাউন্সিলর পার্থ সরকার, সন্দীপ বাগুই, পিয়ালী সরকার সহ অন্যরা। ছিলেন মোহনবাগানের দুই প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ ও শিল্টন পাল সহ সবুজ মেরুন সমর্থকরা। মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মোহনবাগান ক্লাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন টুটু বোস। সৃঞ্জয়ের হাত ধরে অনেক লড়াই করে মোহনবাগান ক্লাব এই জায়গায় পৌঁছেছে। আর তাই মোহনবাগান নির্বাচনে এবার সৃঞ্জয়ের প্যানেলকেই জেতাতে হবে। এমনিতেই টুটু বোসরা যেহেতু হাওড়ার আদি বাসিন্দা, তাই এখানে তাঁদের ঘিরে একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। হাওড়ায় দু’হাজারের বেশি মোহনবাগানের সদস্য আছেন। ভোটে সকলেই সৃঞ্জয়কে সমর্থন করব।” সৃঞ্জয়ের প্রচার সভার সমর্থনে প্রস্তুতিসভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন অসিত চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলার বলাই দে, দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো মোহনবাগানের কট্টর সদস্যরা। মোহনবাগানের বর্তমান কর্মসমিতির একাধিক সদস্য অসিত, শুভাশিস, মহেশও ছিলেন কর্মিসভায়।

ভোটারদের মন পেতে স্বভাবতই উঠে পড়ে লেগেছে দেবাশিস দত্তের নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠী এবং তাঁর প্রতিপক্ষ সৃঞ্জয় বসুর নেতৃত্বাধীন বিরোধী গোষ্ঠী। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার থেকে ক্লাব কর্তাদের সাহায্য বা আসন্ন পুজোর খুঁটিপুজো, সর্বত্র দেখা যাচ্ছে দু’পক্ষের নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের। কলকাতার পিন কোড ধরে ধরে অঙ্ক কষে দু’পক্ষই হিসাব রাখছে কত সদস্য আসছেন অনুষ্ঠানগুলোতে। ভোট যত এগিয়ে আসছে, নিবার্চনী সভার সংখ্যাও বাড়ছে। মোহনবাগানের মোট ভোট ৬৮১৮। তার মধ্যে শুধু উত্তর কলকাতায় ২০১০ টি ভোট। বৃহত্তর উত্তর-পূর্ব কলকাতার পিন কোড যোগ করলে ৩৮১২। সেন বাড়ি, বসু বাড়ি ক্লাবের ধাত্রীগৃহ পড়ে এই অঞ্চলে। বহু বনেদি বাড়ির ভোট আছে এখানে। ধাত্রীগৃহে ১৯১১-র ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ীদের মূ্র্তি প্রতিষ্ঠা করা থেকে রাস্তার নামকরণে প্রধান উদ্যোগী স্থানীয় বিধায়ক ও কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ নেমেছেন শাসক গোষ্ঠীর হয়ে। সভাও করেছেন লাহা কলোনির মাঠে। কোষাধ্যক্ষ উত্তম সাহা ও পুজো-কর্তা ও ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সচিব শ্বাশ্বত বসুও নেমেছেন শাসকের পক্ষে। বিরোধী গোষ্ঠীতে বেলেঘাটা অঞ্চলের দুই কাউন্সিলর, উত্তর কলকাতার এক কাউন্সিলরের স্বামী, পাইকপাড়ার পপ সিদ্ধার্থ রায় এবং রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের ডানহাত সঞ্জয় ঘোষ। হেদুয়ার একটি বড় সংগঠনের প্রধান সঞ্জয় ওরফে বাপ্পা তাঁর বাম-বাহিনীকে নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন অতীন-উত্তমকে ঠেকাতে। তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক নেতা, জেলা নেতা ও বিভিন্ন পাড়ার ক্লাবের প্রভাবশালী লোকজনকে নামিয়েছে বিরোধী সৃঞ্জয় গোষ্ঠী। সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে ১ মে গৌরীবেরিয়া সার্বজনীন দুর্গাপুজোর খুঁটি পুজোয় উপস্থিত ছিলেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক শ্রেয়া পান্ডে। বিরোধী গোষ্ঠীর উত্তরের দায়িত্বে থাকা দুই নির্বাচনী কর্তা সঞ্জয় ও পপ। মোহনবাগান নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে গৃহযুদ্ধ, আসরে সিপিএমও। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাই জানাচ্ছেন, ক্লাবের ভোটের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেই শ্রেয়ার পার্টি অফিস বলে পরিচিত মুরারিপুকুরের তৃণমূল অফিসে শিল্টু, তপা, কুন্তল, রাজা, পাপানের মতো সিপিএমের পরিচিত মুখ নিয়মিত আসা যাওয়া করছেন।

হাওড়ার কদমতলা সুর ব্যাঙ্কোয়েটে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায়, প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ, বলাই দে। ছিলেন হাওড়ার মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মোহনবাগান সহ-সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায়, কর্মসমিতির সদস্য রঞ্জন বসু, মহেশ টেকরিওয়াল ও পার্থজিৎ দাসরা। সভায় বিপুল উপস্থিতি দেখে সৃঞ্জয় বোস বলেন, “মোহনবাগান একটা পরিবার। ভোট আসবে ভোট যাবে কিন্তু সেই ভোটে আমরা ব্যক্তিগত আক্রমণে যাব না। পারস্পরিক সৌহার্দ্য রেখেই নির্বাচন হয়ে আসছে চিরকাল।” এই কথা বলার পাশাপাশি আরও যোগ করেন, “কিন্তু কেউ যদি ভাবে, আমার ভদ্রতা আমার দুর্বলতা, তা হলে সে ভুল ভাববে। বাবা শিখিয়েছেন ইট ছুড়লে, পাটকেল ছুড়তে হয়।”

মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আজকেই আমি সৃঞ্জয়কে সচিব ঘোষণা করে দেব, এমনই আমার মনের ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ও আমাকে বারণ করায় আমি ঘোষণা করছি না। গোটা হাওড়ার মানুষ– বালি থেকে মন্দিরতলা, সর্বত্র সৃঞ্জয়ের সমর্থনে প্রচার করব। হাওড়ার সকলেই মোহনবাগান। সকলেই জানে টুটু বোসের কী অবদান।” এদিনের সভায় উপস্থিত অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বোস পরিবারের অবদানের কথা সকলেই জানে। মোহনবাগান ক্লাব পরিচালনায় সৃঞ্জয় বোসকে দরকার। ভোটে আমরা জিতবই।”

নবান্ন শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ভোটে নামার ইচ্ছে থাকলেও তৃণমূলের অনেক নেতা-মন্ত্রীই এখনও তাই জল মাপছেন। দিদির মনোভাব না বুঝে প্রকাশ্যে আসার ঝুঁকি নিচ্ছেন না কেউ কেউ। অনেকে পিছন থেকে সমর্থন করছেন কোনও এক পক্ষকে। অনেকেই হাওয়া বুঝে দু নৌকোয় পা রেখে ভাসছেন। সব মিলিয়ে জমজমাট মোহনবাগান অল্প স্বল্প গল্পকথার মোহন ভোটযুদ্ধ। শেষমেস ভোট হবে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে! মুখ্যমন্ত্রীর ফোনেই সমাধান হতে পারে সচিব নির্বাচনের লাঠালাঠি?