ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন। সারা বছর ধরে চলছে নানা রঙের অনুষ্ঠান। ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠান হাওড়ার শরৎ সদনে। সন্ধ্যা থেকেই সুরমূর্ছনা। অভিষেক জায়ার উদ্বোধমী সঙ্গীতে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা। সুবর্ণ সন্ধ্যায় তারকার সমাহার। সায়ক গ্রুপের অভিনেতা পরিচালক মেঘনাদ ভট্টাচার্য্যের ‘ধর্মাবতার’ কী ধারার নাটক, কেমন তার উৎকর্ষতা, কতটা প্রাসঙ্গিক, কতটা সাময়িক কিংবা নাটকটি কতটা কালহীন, কতটা আইননানুগ, এসব নিয়ে পঁচাত্তর বছরের সাংস্কৃতীক অনুষ্ঠানে ছুঁয়ে গেল তর্ক-প্রতিতর্ক, আলোচনার অন্ত নেই। এমনই আবহে হাওড়ার ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের আয়োজনে নাটক ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে নতুনতর চেহারা ও আঙ্গিক। শুক্র সন্ধ্যায় এক আবেগঘন পরিবেশ নাটক মঞ্চস্থ তারপরই মাটির গানে স্টেজ মাতালেন পৌষালি। শরৎ সদন মঞ্চে ও মঞ্চের নিচেও আনন্দের ফোয়ারা।

শুক্রবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবো হবো। সাপ্তাহিক কাজের ধারাকে ছুটি দিয়ে শহর ও শহরতলির দর্শক ‘হাউজফুল’ করেছিল শরৎসদনকে। এটা শুধু কম কথা নয়, এটাই আসল কথা। প্রতিবেশী বড় শহরের কিছু বাঙালিও এসে জড়ো হয়েছিলেন। বাংলা নাটকটির মূল থিম চিরকালীন, আইনের মারপ্যাঁচের কূটকচালিতে রয়েছে রসাত্মবোধের স্পর্শ, সেখানে কলম চালানোর স্পর্ধা দেখানোর সাহস খোদ পরিচালকে বা নির্দেশকেরও করা দু;সাধ্য। ‘ধর্মাবতার’ তো নয়ই। পরিচালক হয়ে বিভিন্ন দৃশ্যের সংযোজন, বিয়োজন কিছু করেছেন মাত্র এবং সেটাও আইন ও বিচার বিষয়ক নাট্য ও বিষয় ভাবানুসারী। বিচারব্যাবস্থার প্রতীকী ভাবনাগুলোকে আরও সহজ ও সরল করে তুলে আনা হয়েচে মঞ্চে। ব্যতিক্রমভাবেই নাটকের মঞ্চে তরতরিয়েই সুপারহিট পরিচালক মোধনাদের উপস্থিতি, অভিনয়।

খ্যাতনামা প্রথিতযশা আইনজীবির স্বৈরাচার নিয়ে সোচ্চার স্বয়ং বিচারক বাবা। বেশ অভিনব চিন্তার প্রযোজনা। মৃদু অনুযোগ, শব্দ প্রক্ষেপণের। একটু নিচু ভলিউমে আবহ বাজালে সংলাপ অশ্রুত হত না। আলো, মিনিমালিস্ট মঞ্চ প্রশংসার দাবিদার। পোশাকে আইনি ঐতিহ্য বজায় রেখেও আজকের প্রলেপ স্পষ্ট। অভিনয়ে অবশ্যই যেমন আর্ত, তেমনই বন্ধ ঘরের আড়ালে থাকা দক্ষ আইন প্রণেতার প্রকৃত চেহারা দেখার জন্য আকুলতার অভিনয়ে আন্তরিক। ভরাট গলায় ‘অদৃশ্য’ ভালোমানুষ সৎ চরিত্রবান বিচারকের উপস্থিতি সুন্দর। নিঃসন্দেহে এই প্রযোজনার বড় চমক!

অনুষ্ঠানের অভিষেক ডালমিয়া পত্নীর গানেও চমক ছিল। প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট ও ভারতীয় বোর্ডের আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বর্তমান সদস্য অভিষেক ডালমিয়া একজন শ্রোতা। বেশ আহ্লাদে উপভোগ করছিলেন জায়া শালিনীর গান। উৎসবের নাম প্ল্যাটিনাম জুবিলি। অনুষ্ঠানের নাম সাংস্কৃতিক। ঘন্টা দুয়েকের ‘ধর্মাবতার’ নাটকের পর মঞ্চ কাঁপালে মাটির গায়িকা পৌষালি ব্যানার্জ্জী। তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবোনা। বলি ও ননদি আর দুমুঠো চাল ফেলে দে হাঁড়িতে, ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে। মাতোয়ারা মঞ্চ। স্বভাবসিদ্ধা ভঙ্গীমায় পৌষালি নাচিয়ে ছাড়লেন আবালবৃদ্ধবণিতাদের। টিম ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবও উচ্ছ্বসিত।

ঐতিহ্যবাহী ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি। প্রথম দিন হাজির ছিলেন প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কিংবদন্তি ক্রিকেটার ‘দাদা’ সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বাংলা ক্রিকেট তারকা অরুনলাল, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, সঙ্গীতশিল্পী সিদ্ধার্থ রায়। পরের মঙ্গলেই স্বল্প পরিসরে ক্লাবের পরিবারের সঙ্গে হাজির সিএবি প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সারা বছর ধরে আয়োজিত বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি। ২২ ডিসেম্বর হয়েছিল অনুষ্ঠানের শুভসূচনা। পদযাত্রার পাশাপাশি বিশেষ অনুষ্ঠান। ২৪ ডিসেম্বর ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবস দিবসে সাম্মানিক সদস্যপদ প্রদান করা হয় বিশ্বরূপ দে ও অভিষেক ডালমিয়াকে। অতিথিরাই ক্লাবের সকল সদস্যদেরও ক্লাবের তরফ থেকে আইডেনটিটি কার্ড তুলে দেন। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে এলআরএস বাংলা স্পোর্টস অ্যাকাডেমির মাঠে আয়োজিত প্রদর্শনী ম্যাচ। উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জুবলির ক্রীড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন ক্রিকেটাররাও। ক্লাবের বর্তমান ও প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতি ম্যাচ।

শুক্র সন্ধ্যায় ১১ এপ্রিল ব্যাতিক্রম হল না। আবার যেন পূণর্মিলন উৎসবের পুণরায় শুভসূচনা। একই ভাবে উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, সিএবির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া, প্ল্যাটিনাম জুবলি কমিটিতে থাকা সিএবির প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে, সিএবি যুগ্ম সম্পাদক দেবব্রত দাস সহ সিএবি কর্তারা অধিকাংশই। ব্যাঁটরা ক্লাবের সভাপতি যজ্ঞেশ্বর সামন্ত, ক্লাবের সম্পাদক বিশ্বনাথ সামন্ত, সিএবির প্রতিনিধি তথা প্ল্যাটিনাম জুবলি কমিটির সম্পাদক সুকুমার সামন্ত সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও প্রত্যেক সদস্যদের পরিবারকে নিয়ে সমাবর্তন। ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এককথায় জমজমাট।