‘টাকা দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা’ সিবিআই প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ নির্যাতিতার বাবার

মেধাবী কন্যাকে হারিয়েছেন। হাসপাতালে ডিউটিতে থাকাকালীন ধর্ষণ ও খুন। পৃথিবী চমকে উঠেছিল সেই ঘটনায়। আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এরপরই সঞ্জয়ের ফাঁসির আবেদন করে উচ্চতর আদালতে চলে যায় রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের এই আগ বাড়িয়ে আচমকা তৎপরতাকে মানতে পারেননি নির্যাতিতার মা বাবা। তৃণমূলের একাধিক নেতা কার্যত রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্যাতিতার পরিবারের উপর। এমন কিছু মন্তব্য তাঁরা করছেন তা কতটি শোভনীয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পালটা জবাবও দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা মা। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে, বাড়িতে এতবড় বিপর্যয়ের পরেও কি এটাই প্রাপ্য ছিল নির্যাতিতার পরিবারের? তৃণমূলের নেতাদের উপর তো বটেই। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের উপরেও একেবারেই সন্তুষ্ট নন নির্যাতিতার বাবা মা। নির্যাতিতার বাবা বলেন, একটা কথা বলতে হচ্ছে, সিবিআই আমাদের তদন্ত করতে এসেছিল। এখন আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করছে। এজন্য আমাদের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আশা করছি হাইকোর্টে মামলার চাপ সৃষ্টি করে সিবিআইকে দিয়ে কাজ করাতে পারব। সিবিআই আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করছে, এটাই দুর্ভাগ্যজনক।
তৃণমূল নেতারা বলেছিলেন, নির্যাতিতার পরিবারই তো সিবিআইকে চেয়েছিলেন। এনিয়ে এবার নির্যাতিতার পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে আমরা আনিনি। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছিলাম। হাইকোর্টে ভালো বুঝেছে সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছে। এখন সিবিআই ঠিক মতো কাজ না করলে কোর্টকে তার জবাব দিতে হবে। তৃণমূলের নেতাদের নানা বিরূপ মন্তব্য প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, এসব নিয়ে মন্তব্য করতে বিরক্ত লাগছে। প্রথম দিন থেকে রাজ্য সরকার আমাদের টাকা দিয়ে চুপ করানো চেষ্টা করেছে। এই ধরনের মন্তব্য আশা করি না। কিন্তু সহ্য করতে হচ্ছে। রায়ের কপি না পড়েই অনেকে খারাপ মন্তব্য করছেন। কোথাও থেকে হয়তো নির্দেশ রয়েছে, তাই বলছেন। রায়ের কপি পড়লে এমন মন্তব্য করতেন না।
সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ খুলেছিলেন আগেও। এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ফের সেই অভিযোগ তুলে ধরলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সেই অভিযোগ উপযুক্ত স্থানে পৌঁছে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সিবিআই তদন্ত নিয়ে অভিযোগ জানাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও দেখা করার কথা নির্যাতিতার মা-বাবার।
সিবিআইয়ের তদন্তে যে তাঁরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি, নির্যাতিতার বাবা-মা সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন। রাজ্য এবং সিবিআই হাই কোর্টে গিয়েছে সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে। সেই মামলাতে সঞ্জয়ের ফাঁসির আর্জির বিরোধিতাই করেছে নির্যাতিতার পরিবার। তদন্তের স্বার্থে সঞ্জয়ের বেঁচে থাকা জরুরি বলে এখন তাঁদের মত। বৃহস্পতিবার সুকান্তকে সামনে পেয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা ফের সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন।
তদন্তে বেশ কিছু খামতির কথা স্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছে শিয়ালদহ আদালতের রায়ে। তদন্তে এমন কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা জরুরি ছিল, যা দেখার সুযোগও ছিল। কিন্তু হয়নি। বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ এ রকমই ছিল। নির্যাতিতার পরিবার মনে করছে, এই খামতির জন্য মূলত এক জন আধিকারিকই দায়ী। সিবিআইয়ের গতিবিধির নিয়ন্ত্রণ এখন অমিত শাহের মন্ত্রকের হাতে।