February 11, 2025

লিস্টনের গোলে জয়ে ফিরল সবুজ মেরুন, বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে লিগ শিল্ডের দৌড়ে মোহনবাগান

0
Mohunbagan

মোহনবাগান – ১ (লিস্টন)
বেঙ্গালুরু – ০

টানা দুম্যাচ ড্র। লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান। দলকে জয়ে ফেরালেন লিস্টন কোলাসো। বদলার ম্যাচে মোহনবাগান জিতল ১-০ গোলে। তিন পয়েন্ট ঘরে তুলল মোলিনার দল। এক পা এগিয়ে থাকল লিগ শিল্ড জয়ের দৌড়ে। ১৮ ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট ৪০। বেঙ্গালুরুর মাঠে প্রথম পর্বের ম্যাচে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল মোহনবাগান। ঘরের মাঠে বদলা নিল মোলিনার দল। পয়েন্ট টেবিলেও পাকাপোক্ত লিগ শীর্ষের অবস্থান। যুবভারতীতে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা নিয়ে এসেছিলেন বিশ্বের সব থেকে বড় হাতে আঁকা টিফো। প্রথম থেকে ম্যাচে শুভাশিস-ম্যাকলারেনরা ব্যর্থ। কার্ড সমস্যায় এই ম্যাচে না থাকা আশিস রাইয়ের জায়গায় ছিলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। প্রথমার্ধে অধিকাংশ আক্রমণ উঠে এল সেই দিক থেকেই। এডগার মেন্দেজকে মাঝখানে ছেড়ে সুনীল ছেত্রী সরে এলেন বাঁদিকে। আলবার্তো নোগুয়েরা, সুরেশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঝমাঠের দখল নিতে পারেনি মোহনবাগান। দীপক টাংরি, আপুইয়ার তালমিল স্পষ্ট না হওয়য় একের পর এক ডুয়েলও বেঙ্গালুরুর দখলে। ১৮ মিনিটে ছেত্রীর একটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৩৬ মিনিটে সু্যোগ পেয়েছিল সবুজ-মেরুনও। স্টুয়ার্টের শট বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত। প্রথমার্ধের সব থেকে সহজ সুযোগ মিস করেন সুনীল। হাফটাইমের ঠিক আগে নোগুয়েরার বল ধরে বক্সের মধ্যে ঢুকে মোহনবাগানের দুজন প্লেয়ারকে কাটানোর পর তাঁর সামনে শুধু গোলকিপার বিশাল কাইথ। বাইরে মারলেন সুনীল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের কাছে। দীপকের হেড বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত। একই রকম ভাবে মেন্দেজের হেড বাঁচান গুরপ্রীত। ৭৪ মিনিটে লিস্টনের গোল। বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে ভাসানো বলেই শট মারেন লিস্টন। গুরপ্রীত ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি।

ম্যাচের মাঝেই বিশ্বের সব থেকে বড় হাতে আঁকা টিফো! সাক্ষী রইল যুবভারতী ও মোহনবাগান সমর্থকরা, সাক্ষী সমগ্র ভারত, সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচে ইতিহাস তৈরি করল মোহনবাগানের ফ্যান ক্লাব ‘মেরিনার্স বেস ক্যাম্প’। সেখানে ধরা রইল ১৯১১-র সোনালি ইতিহাসও। গোলপোস্টের পিছনের বি৩ স্ট্যান্ড ও বি২ গ্যালারি থেকে নেমে এল ২৫০০০ স্কোয়ার ফুটের বিশাল টিফো। ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ১৯১১ সালে মোহনবাগানের শিল্ডজয়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন আগুন জুগিয়েছিল খালি পায়ে এগারোজন বাঙালির সাফল্য। ইতিহাস আবার ফিরে এল যুবভারতীতে। মেরিনার্স বেস ক্যাম্পের বিরাটাকার টিফো ধরল সেই লড়াইয়ের কাহিনি। ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার থেকে একত্রিত হল বাঙালি। শুরু হল খালি পায়ে গোরাদের সঙ্গে ফুটবল যুদ্ধের প্রস্তুতি। অবশেষে ফাইনালে ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ডজয়। এই পুরো ইতিহাস ধরা রইল টিফোতে লেখা, ‘আমাদের ঐতিহ্য শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, বরং ভারতের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে তা জড়িয়ে’। সাধারণতন্ত্র দিবসের পরদিন এই টিফো যে দেশাত্মবোধের বার্তা নতুন করে ছড়িয়ে দিল, তা বলাই বাহুল্য। ‘মেরিনার্স বেস ক্যাম্প’ থেকে তাদের ফেসবুকে তুলে ধরা হচ্ছিল টিফো তৈরির নেপথ্যের গল্প। চলছিল কাউন্টডাউন। প্রায় ২০ দিন ধরে হাওড়ার আন্দুলে তৈরি হয়েছে এই টিফো। হাত লাগিয়েছিল পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে বহু মানুষ। ভারতীয় ফুটবলকে মুগ্ধ করে যুবভারতীর বি৩ স্ট্যান্ড ও বি২ গ্যালারি থেকে নেমে এল ২৫০০০ স্কোয়ার ফুটের টিফো। মনে করিয়ে দেওয়া হল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও।

২৩ জানুয়ারি ৭৮ বছরে পা দিয়েছেন টুটু বোস। মোহনবাগানের ঐতিহ্যমণ্ডিত ইতিহাসে তাঁর অবদান সোনার অক্ষরে লেখা। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের কাছে তিনি কিংবদন্তি। তাঁর সম্মানে অভিনব উদ্যোগ নিয়ে হাজির মোহনবাগানের ফ্যান ক্লাব ‘মেরিনার্স এরিনা’। ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে যখন শুভাশিস-ম্যাকলারেনরা নামছেন, তখন যুবভারতীর সি২ গ্যালারিতে চোখে পড়ল মোহনবাগান সভাপতি স্বপনসাধন বোসকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে বিরাট আকারের টিফো। মোহনবাগানের সঙ্গে টুটু বোসের সম্পর্ককে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। ময়দানে কোনও কিছু ‘স্থায়ী’ না থাকলেও তাঁর প্রতি সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ভালোবাসায় বদল হয়নি। মেরিনার্স এরিনার টিফোয় লেখা, ‘টুটু বোস, দ্য আনফরগটেন হিরো’। ক্লাবের গৌরবের বহু ইতিহাস রচিত হয়েছে তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন। অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি। তা শুধু ক্লাবের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেনি, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের পথকে আরও মসৃণ করেছে। সেই উজ্জ্বল অবদানকে স্মরণ করিয়ে দিল মেরিনার্স এরিনা। লেখা ছিল, ‘আজকের বিশেষ দিনে আমরা টুটু বোসকে বিশেষ সম্মান জানাচ্ছি। যিনি নয়ের দশকে মোহনবাগানে নবজাগরণ এনেছিলেন। যিনি সমস্ত বাধা তুচ্ছ করে প্রথম বিদেশি সই করিয়েছিলেন। দলে এনেছিলেন কৃশানু-বিকাশকে। সেই সঙ্গে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছিলেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ক্লাবের প্রতি তিনি দায়বদ্ধতা দেখিয়ে এসেছেন। যার মধ্যে অবনমন বাঁচানোর জন্য নিজের থেকে জরিমানার ২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এই সব কিছু মোহনবাগানের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জ্বলন্ত প্রমাণ। কোনও অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীর বদলে RPSG গ্রুপের মতো ফুটবলে আগ্রহী সংস্থাকে নিয়ে আসা তাঁর দীর্ঘ অসাধারণ সফরের মুকুটে যোগ করেছে মণিমুক্ত। উনি শুধু দিয়েই গিয়েছেন মোহনবাগানকে। আমরা ওঁকে ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। আজকে ফুটবল মাঠে যেটা ওঁর কাছের জায়গা, সেইখানেই মেরিনার্সরা শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসায় ওঁর টিফো নামাবে।’ যুবভারতীর সি২ গ্যালারি থেকে নেমে এল টুটু বোসকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে বিশেষ টিফো।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed