অভিষেক দেখে এলেন বিরল রোগে আক্রান্ত একরত্তিকে!ডায়মন্ডহারবারের ‘সেবাশ্রয়ে’ যুবরাজের হাত নেহা’র মাথায়

অঙ্কিত শ্রীবাস্তব, ডায়মন্ডহারবার : বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্য আর্তি। নবান্ন দুয়ার থেকেই প্রায় ফিরে আসতে হচ্ছিল নিজের একরত্তির সাহায্য প্রার্থণায় আর্ত দম্পতিকে। ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন কেলাপ্সেবল গেটের ভিতরে বসে থাকা পুলিশ। এক ক্রীড়া সাংবাদিক সশরীরে হাজির হতেই তৎপর ‘পুলিশ’ নিজের দায়িত্ব পালন করলেন প্রায় ঘন্টাখানেক সময় অতিবাহিত করে। এগিয়ে এলেন আরও এক সহৃদয় পুলিশও। এর পরই মিলল চিকিৎসার সঠিক দিশা। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু। দেড় বছর ধরে বিরল রোগে আক্রান্ত হুগলির খানাকুলের চার বছরের শিশু। নাম নেহা মাঝি। একাধিক জায়গায় চিকিৎসা করানোর পরও সুস্থ হয়নি সে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির সঠিক চিকিৎসা করাতে ৭২ লক্ষ টাকার শুধুমাত্র ওষুধের জন্য প্রয়োজন। একটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা। দিশাহারা পরিবারটির অবস্থা শোচনীয়। চিকিৎসার জন্য ডায়মন্ডহারবারের সেবাশ্রয় শিবিরে আশ্রিত। আপাতত ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়োজিত সেবাশ্রয় ক্যাম্পে ঠাঁই শিশুর। নেহাকে দেখার পর চিকিৎসকরা খবর পৌঁছে দেন সাংসদের দপ্তরে। নেহা যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে তার জন্য সবরকম সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস অভিষেকের।

একরত্তির জীবন এক গুরুতর প্রশ্নের মুখোমুখি। বিরল জিনঘটিত রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি অর্থাৎ এসএমএ-তে আক্রান্ত খানাকুলের কনকপুরের নেহা মাজি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ওই রোগে মোটর নিউরন নামে স্নায়ুকোষের ক্ষতি হয়। যে স্নায়ুকোষ নিয়ন্ত্রণ করে পা, মুখ, বুক, গলা ও জিবের নড়াচড়া। ওই রোগে আক্রান্ত নেহা তাই তিন বছর বয়সেও হাঁটাচলা করতে পারে না। মায়ের কোলেই তার সব কিছু। সে অবশ্য জানে না যে, তার কী হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নেহাকে সুস্থ করে তোলার পথে দরকার, খুব দরকার একটা মাত্র ইঞ্জেকশন। যার দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা। নেহার চিকিৎসার ওষুধের জন্য বিপুল অর্থও প্রয়োজন। বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন আইএমএ-র আরামবাগ শাখার সম্পাদক অশোক নন্দী বলেন, ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যট্রোফির তেমন চিকিৎসা নেই। এর চারটি টাইপ— টাইপ–ওয়ান, টাইপ–টু, টাইপ–থ্রি এবং টাইপ–ফোর। এর মধ্যে টাইপ–ওয়ান সব চেয়ে মারাত্মক, সাধারণত জন্মের ছ’মাসের মধ্যে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হয়। এই রোগের সে রকম চিকিৎসা নেই। একটি ওষুধ কোম্পানি এর একটি ওষুধ বার করেছে। ওষুধটির দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা।’ নেহার মা জানাচ্ছেন, তার মেয়ে টাইপ–টু স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি–তে আক্রান্ত।

পেশায় দিনমজুর নেহার বাবা সনাতন মাজি। মা নিভারানি মাজি। দারিদ্র যে পরিবারের নিত্যসঙ্গী, সেই পরিবারের কাছে ওই বিপুল অঙ্কের টাকা জোগাড় করা তো দূর, টাকার অঙ্কটাই ভাবনার বাইরে। চোখের জলে নেহার মা–বাবার কাতর আর্তি, ‘দয়া করে আমাদের পাশে থাকুন, সহযোগিতা করুন।’ একরত্তি মেয়ে বাঁচানোর আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও সহযোগিতা প্রার্থনায় নেহার মা–বাবার সম্বল শুধুই চোখের জল। শিশুটির মা-র কথায়, ‘দেড় বছর বয়স হওয়ার পরও হাঁটতে পারছিল না মেয়ে। তারপর অল্প অল্প হাঁটতে শুরু করলেও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারত না। অনেক ডাক্তারকে দেখানো হয়। ধরা পড়ে মেয়ের জটিল রোগ। শিরদাঁড়ায় সমস্যা। এই বিরল রোগ থেকে সুস্থ হতে লাগবে ৭২ লক্ষ টাকার ওষুধ। তা না পেলে অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

ছবি : অঙ্কিত শ্রীবাস্তব