নতুন বছরেও ডার্বির রং সবুজ-মেরুন, ব্রহ্মপুত্রের তীরে ম্যাকলারেনের গোলে নিভল মশাল

আইএসএলের ডার্বির ইতিহাসে দ্রুততম গোল করলেন ম্যাকলারেন। শুরুটাই পরিষ্কার করে দিয়েছিল দিনের শেষটা কেমন হবে। ম্যাচের শুরুতে ফুটবলারদের গা গরম হওয়ার আগেই এগিয়ে যায় মোহনবাগান। জেমি ম্যাকলারেনের গোলের ধাক্কা সামলাতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। গঙ্গার তীর হোক বা ব্রহ্মপুত্রের পাড়। ছবিটা বদলাচ্ছে না। আইএসএলে ফের ইস্টবেঙ্গলকে হারাল মোহনবাগান। এই নিয়ে ৯বার। মোহনবাগানকে দেড় মিনিটের মাথায় এগিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাকলারেন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠতে চেষ্টা করেও ইস্টবেঙ্গলর পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত। সবুজ-মেরুনের মনবীরও সহজ সুযোগ মিস করেন। ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান সৌভিক চক্রবর্তী। এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট ৩৫। বেঙ্গালুরুর থেকে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে মোলিনার ছেলেরা। ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম স্থানেই পড়ে রইল অস্কার ব্রুজোর দল।
সারা ম্যাচ জুড়ে অনেক চেষ্টা করল তারা। গোল করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হল। কাজের কাজটাই হল না। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন। ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত ইস্টবেঙ্গল। সিদ্ধান্ত নিয়ে লাল-হলুদ সমর্থকরা অখুশি। প্রথম লেগের পর দ্বিতীয় লেগেও ডার্বি জিতল মোহনবাগান। আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলা ১০টি ডার্বির মধ্যে ন’টিই জিতল সবুজ মেরুন। মোহনবাগান আইএসএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। ১১ নম্বরেই থেকে গেল লাল-হলুদ।ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ধাক্কা দেন ম্যাকলারেন। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুল। আশিস রাইয়ের পাস পায়ে লাগাতে পারলেন না হিজাজি মাহের। ম্যাকলারেন ঠিক জায়গায় ছিলেন। হেক্টর ইয়ুস্তেকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করলেন। অসহায় লাল-হলুদ গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল। চাপে পড়ে যায় লাল-হলুদ রক্ষণ। পিভি বিষ্ণুর একক দক্ষতায় বল পান ক্লেটন। দিয়ামানতাকোসের সঙ্গে ওয়ান টাচ খেলে বক্সে ঢোকেন। শট মারার আগেই টম অলড্রেড বল বার করে দেন। ম্যাচের ২১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে অরক্ষিত জায়গায় বল পেয়ে যান মনবীর। সামনে গোলরক্ষক প্রভসুখন একাই ছিলেন। মনবীর সরাসরি তাঁর হাতে মারেন। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নজর কাড়লেন পিভি বিষ্ণু। আক্রমণে ও রক্ষণেও। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠল। বক্সের মধ্যে হাতে বল লাগান মোহনবাগানের আপুইয়া। পেনাল্টির আবেদন করেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। রেফারি তাতে সাড়া দেননি। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, আপুইয়ার হাতে বল লেগেছিল।
গুয়াহাটির ফাঁকা মাঠে ডার্বি! বছরের প্রথম বড় ম্যাচে অচেনা গ্যালারি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে চাপ বাড়াতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। সুযোগও পান ক্লেটন। গোলে বল রাখতে পারেননি। ৬৩ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখলেন শৌভিক চক্রবর্তী। প্রতি-আক্রমণ থেকে বল পেয়ে এগোচ্ছিলেন লিস্টন। শৌভিক ছাড়া কোনও লাল-হলুদ ডিফেন্ডার তাঁর সামনে ছিলেন না। বাধ্য হয়ে ট্যাকল করতে গিয়ে ফাউল করেন শৌভিক। ফলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড, অর্থাৎ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ১০ জনে হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বাধ্য হয়ে আক্রমণ ভাগের ফুটবলার ডেভিডকে তুলে মাঝমাঠে মহেশ নাওরেমকে নামান লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজ়ো। মোহনবাগানের অলড্রেজ, শুভাশিসদের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি প্রতিপক্ষ। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে কিছু করার ছিল না প্রভসুখনের। তার পরেও প্রভসুখনের দস্তানায় দু’বার নিশ্চিত গোল আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাগান।