February 17, 2025

আর জি কর কাণ্ডে সন্দীপ-বিরোধিতা করেছিলেন শান্তনু, তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড শান্তনু সেন, আরাবুল ইসলাম!‌ সিদ্ধান্ত শীর্ষ নেতৃত্বের

0
Mamata Avishek

ডায়মন্ড-সংযোগের কারণেই শাস্তি শান্তনুর? বার্তা দেওয়া হল অভিষেককে? কেনই বা দলের রোষানলে আরাবুল? আর জি কর কাণ্ডের পর সন্দীপ-বিরোধিতা করেছিলেন। সেই কারণেই কি কোপে পড়তে হল? প্রশ্ন তাঁরও?‌ তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন। দলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখপাত্র ডাঃ শান্তনু সেনকে নিয়েও দলের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছিল। আর জি কর কাণ্ডের সময়ে তাঁর ভূমিকাকে ভালো চোখে দেখেনি তৃণমূল। যে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দলের মুখপাত্র হিসেবেও বাদ পড়েন শান্তনু সেন। আর এবার শান্তনু সেনকে সাসপেন্ড করল দল। দলের এই সিদ্ধান্ত জানার পরই কার্যত ক্ষোভ উগরে দেন শান্তনু সেন। অভিযোগ, দলকে ভুল বোঝানো হয়েছে। দ্বিতীয়বারের জন্য সাসপেন্ডেড ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলাম। দলের তরফে সিদ্ধান্ত। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগেই দুজনের বিরুদ্ধে এত কড়া পদক্ষেপ। ২০২৪ লোকসভা ভোটের পর দলের বৈঠক ডেকে তৃণমূল নেত্রী সতর্ক করে দিয়েছিলেন, দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতেই হবে। কারও বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠলে শোকজ করা হবে। তিনবার শোকজ চিঠির ঠিকঠাক উত্তর না পেলে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বহিষ্কারের পথে হাঁটবে দল। দলের যত বড় ব্যক্তিত্বই হোন না কেন, একইরকম শাস্তি।

তৃণমূলের অন্দরে কী কারণে শান্তনুর শাস্তি, তা নিয়ে খুব সংশয় নেই। দলীয় সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত থাকার কারণেই শান্তনুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কারণ, প্রশাসনের একটি বড় অংশ মনে করছে, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে ওই কর্মসূচি আসলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘সমান্তরাল ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার প্রয়াস। যদিও তা কেউই প্রকাশ্যে বলছেন না। এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ সূত্রেও। তৃণমূলের অন্দরে শান্তনু ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। তিনি তা খুব একটা গোপনও করেন না। শান্তনুর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ আসলে ঘুরিয়ে অভিষেককেই ‘বার্তা’ বলেও দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। শাস্তির পরেও শান্তনু অবশ্য ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত থাকাকে ‘অন্যায়’ বলে মনে করছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ বারেও আইএমএ-র নির্বাচনে সিপিএম-বিজেপি এবং আমাদের দলেরও একটি অংশের সঙ্গে লড়ে জিতেছি। এর আগে যেখানে যেখানে আমাদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বলা হয়েছে, যেমন আয়লা বা বুলবুল বা আমপানের সময়ে, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ফলে ‘সেবাশ্রয়’-এর জন্য কয়েক জন চিকিৎসককে জোগাড় করে দেওয়ায় অন্যায় কোথায়?’’ বস্তুত, এক ধাপ এগিয়ে শান্তনু বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে ২৪ তারিখ চিকিৎসকদের নিয়ে সমাবেশ করবেন, সেখানেও আমি আমার পরিচিত চিকিৎসকদের যেতে বলব। আমি তো বুঝতেই পারছি না, দলবিরোধী কী কাজ করলাম! আমি বুঝেই উঠতে পারছি না, দলের বিরুদ্ধে কী করলাম! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দলের কথা ভেবেছি। পেশার (ডাক্তারি) কাজের বাইরে কেবল তৃণমূলের কাজ করেছি। তার পরেও কেন এই পদক্ষেপ করা হল বুঝতে পারছি না। কোনও দুর্নীতিতে আমার নাম জড়ায়নি। ইডি-সিবিআই আমার বাড়িতে ‘রেড’ও করেনি। আমার কোন কাজটি দলবিরোধী হিসাবে বিবেচিত হল, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না। সেটা জানতে পারলে ভাল হয়। তবে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। আমি এখনও তৃণমূলে আছি। আমি এখনও তৃণমূলের অনুগত সৈনিক।’’

শুক্র বিকেলে আচমকাই দলের দুই পুরনো নেতার সাসপেনশন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ভাঙড়ের আরাবুল ইসলাম এবং চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনকে সাসপেনশনের পথে হেঁটেছে শাসকদল। এর আগেও আরাবুলকে দল সাসপেন্ড করেছিল ৬ বছরের জন্য। পরে তা প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। গত পঞ্চায়েত ভোটে আরাবুল জয়ী হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও হন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার চাপা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যেও আসার বিষয়টিকে দল ভালো চোখে দেখেনি। বারবার দলনেত্রী সতর্ক করেছিলেন, দলে কোনওরকম দ্বন্দ্ব একেবারেই মেনে নেওয়া হবে না। সকলকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। তা সত্ত্বেও আরাবুল-শওকত দ্বন্দ্ব এড়ায়নি। আরাবুলকে সাসপেনশনের পথে হাঁটল শাসকদল। আরাবুল ইসলাম বলেন, “এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমার কিছু বলার নেই।” আরাবুল এর আগেও সাসপেন্ড হয়েছিলেন। পরে তিনি দলের মূলস্রোতে ফিরে এসেছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে একটি মামলায় আরাবুলকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। ভোটের সময়ে তিনি ছিলেন জেলবন্দি। মাস দুয়েক আগে জামিন পান।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed