‘৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম তার মধ্যে যদি… সারা বাংলাদেশ অচল করে দেব’,হাসিনার মতোই অবস্থা হবে ইউনূসের? ফের পথে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ জনতা
কারও হাতে মশাল। কারও হাতে লাঠি। ভাঙচুর করা হচ্ছিল সরকারি দফতর। গত বছর এই পরিস্থিতি দেখেছিল বাংলাদেশ। আবারও নতুন বছরে দেখতে হবে সেই একই ছবি? এবার বাংলাদেশের জনতার ক্ষোভের মুখে সেদেশের সরকার। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়েছে। নতুন কর প্রত্যাহার না করলে সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি। হঠাৎ আম-জনতার রোষের মুখে ইউনূস? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে ক্ষমতায় আসেন ইউনূস। তারপর থেকেই একের পর এক নতুন নিয়ম চালু করেছেন। বাংলাদেশের নতুন সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এবার থেকে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গেলে, বিলের উপরে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। আগে এই ভ্যাট ৫ শতাংশ ছিল। সেই ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হল। বিস্কুট, আচার, ম্যাট্রেস, টিস্যু পেপারেও ১৫ শতাংশ করে ভ্যাট বসানো হবে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আম-জনতা। তাঁদের দাবি, নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে দ্রব্যমূল্য। বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। এর মধ্যেই বিভিন্ন জিনিসের উপর কর বাড়িয়েছে ইউনিস সরকার। দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাসেরও। শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইউনূস সরকার। তীব্র প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন বাংলাদেশের জনগণ। তাঁরা হুমকি দিয়েছে সরকারকে উৎখাত করার। বেধে দেওয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার সময় সীমা। এরমধ্যে গ্যাস সহ অন্যান্য জিনিসের ওপর আরোপ করা কর কমানো না হলে ছাত্র জনতাকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা। এ প্রসঙ্গে আজমুল জিহাদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, “শেখ হাসিনাও কর আরোপ করেছিলেন। তার একটা সীমা ছিল। তবে বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের সরকার। সেই সরকার যখন জনগণের উপর কর আরোপ করেন, চাপিয়ে দিতে চান তখন কোনওভাবে আমরা তা মেনে নেব না। ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। তার মধ্যে যদি এই সিদ্ধান্ত বদল না হয় তাহলে সারা বাংলাদেশ অচল করে দেব।”
গেল গেল রব শেষ পর্যন্ত উঠেই গেল বাংলাদেশে, ডলারের চাপে কুপোকাত টাকা। দেশ বুঁদ কট্টরপন্থার নেশায়। আর দিন যত যাচ্ছে ততই যেন ধীরে ধীরে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে বাংলাদেশের। হাল বেহাল ক’দিন থেকেই। কদিন থেকেই ডলারের তুলনায় হু হু করে পড়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশি টাকার দাম। এবার একেবারে যেন সব রেকর্ড ভেঙে গেল। বাংলাদেশে ডলারের দাম সর্বোচ্চ সীমা ছড়িয়েছে। সোজা কথায়, শুধুই টালমাটাল নয়, চরম শঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ১৩০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে মার্কিন ডলারের। খোলা বাজারে দাম আরও বেশি। মনে করা হচ্ছে রমজানে ডলারের দাম উঠতে পারে ১৪৫-১৫০ টাকায়। তথ্য বলছে, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্য়ে সবথেকে বেশি মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেই। গতবছর এই সময় বাংলাদেশে ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু, গত অগস্টের পর থেকেই অস্থিরতা বেড়েছে বাংলাদেশ। ছাপ পড়েছে অর্থনীতিতে। সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কয়েকবার একাধিক ঘোষণা করলেও ডলারের দাম কমার কোনও চিহ্নই দেখা যাচ্ছে না। এদিকে দেশে নেই কোনও পাকা প্রধামন্ত্রী। দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সরকারও অন্তবর্তী। তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। একইসঙ্গে দেশে লাগাতার হিন্দু নির্যাতনের খবর মুখ পড়েছে ইউনূস প্রশাসনের। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক একেবারে তলানিতে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
এদিকে। চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৭-১০ টাকা। খিদে মেটাতে ভারতের দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের খুচরো বাজারে সরু চালের দাম কেজি প্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা এবং মোটা চালের দাম কেজি পিছু ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে বলে দাবি। ঘরোয়া বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনবে ইউনুসের সরকার। বাংলাদেশে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। গত এক মাসে বাংলাদেশে খুচরো বাজারে প্রতি বস্তা চালের দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। বাজারে সরু চালের দাম কেজি প্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা এবং মোটা চালের দাম কেজি পিছু ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে বলে দাবি। সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার চাল কিনতে টেন্ডার ডেকেছিল। সেই টেন্ডারে সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল ভারতের বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ৪৫৮.৮৪ মার্কিন ডলার প্রতি টন হিসেবে ৫০ হাজার টন চাল কিনবে বাংলাদেশ। চাল কিনতে বাংলাদেশের পকেট থেকে খসবে ২ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কেজি চালের ক্রয়মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৫৫.০৬ টাকা। গত ডিসেম্বরেই ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কেনার অনুমোদন দিয়েছিল ইউনুস সরকার। ৪ ডিসেম্বর প্রতি কেজিতে ৫৬.১২ টাকা দরে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছিল ঢাকা। ১৮ ডিসেম্বর ৫৪.৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে ভারত থেকে চাল কেনার জন্যে সবুজ সংকেত দিয়েছিল ইউনুস সরকার। ২১ নভেম্বর ভারতের এসএইএল অ্যাগ্রি কমোডিটিজের থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েকমাসে ইতিমধ্যেই ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল কিনেছে বাংলাদেশ। ঘরোয়া বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনবে ইউনুসের সরকার। বাংলাদেশি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে সেই দেশের মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন চালের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা সরকারের। ভারত থেকেই ৬ লাখ টন চাল আমদানির নীতিগত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। রিপোর্টে দাবি, ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে চাল আমদানি করা হলে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৪৯৩.৩৯ মার্কিন ডলার, পূর্ব উপকূল থেকে আনলে দাম পড়বে ৪৮৫.৫১ মার্কিন ডলার, পাকিস্তানের করাচি থেকে আনলে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৫৩৬.২১ মার্কিন ডলার, থাইল্যান্ড থেকে দাম পড়বে ৫৫৩.২৮ মার্কিন ডলার আর ভিয়েতনাম থেকে থেকে আনলে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৫৩৭.১২ ডলার। আপাতত বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সেই ভারতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইউনুস সরকারকে।
আগে স্থানীয় নির্বাচন করাতে চান ইউনুস। এখানেও নিজের কতৃত্ব ও পদ বজায় রাখতে সচেষ্ট নোবেলজয়ী। বর্তমানে বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ছাড়া ১১টি সিটি কর্পোরশেন, ৩৩১টি পৌরসভা, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ ও সবগুলো জেলা পরিষদই জনপ্রতিনিধিশূন্য। চার হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে অনেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা পলাতক। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি জানালেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানবে না। বাংলাদেশে নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল এখন বিএনপি। বিএনপি চেয়েছিল, হাসিনার পতনের পরে অতি শীঘ্রই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। মহম্মদ ইউনুস এর মধ্যে ভোট করাবেন না। বিএনপির সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান সরকারের। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। তখনও ইউনুস স্থানীয় নির্বাচন করানোর কথা ঘোষণা করেননি। বিএনপি জানিয়ে দিয়েছিল, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করানোর এক্তিয়ার নেই অন্তর্বর্তী সরকারের। বিএনপির দাবি, জুলাই গণ্য-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে বিএনপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ১৬ বছরের লড়াইকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইউনুস জানিয়ে দেন, তাঁদের তরফ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই কথা বলেন ইউনুস। হাসিনার বিদায়ের পরে বহু জায়গায় আওয়ামি লিগ নেতারা পালিয়েছেন। এর আগে স্থানীয় স্তরে প্রায় সর্বত্রই জনপ্রতিনিধিরা আওয়ামি লিগেরই ছিলেন।