January 16, 2025

ভবানীপুর ক্লাবে সংবর্ধনা সন্তোষজয়ীদের, কলকাতা লিগে শুধু বাংলার ফুটবলার খেলানোর প্রস্তাব ক্রীড়ামন্ত্রীর, তাঁকেই উদ্যোগ নেওয়ার আর্জি আইএফএ-র

0

বুধ বিকেলে ময়দানের ক্লাব তাঁবুতে সন্তোষ জয়ী বাংলা দলকে সংবর্ধনা দিল ভবানীপুর ক্লাব। সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলা দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের ছাড়া কলকাতা লিগ করার প্রস্তাব দেন অরূপ বিশ্বাস। সন্তোষজয়ী দলের হাতে ৩ লক্ষ টাকা পুরস্কার তুলে দেয় ভবানীপুর ক্লাব। কোচ সঞ্জয় সেন, অধিনায়ক চাকু মান্ডি-সহ গোটা বাংলা দল উপস্থিত ছিল এদিনের অনুষ্ঠানে। ৮ বছরের খরা কাটিয়ে সন্তোষ জয়ের যাবতীয় কৃতিত্ব ফুটবলারদেরকেই দেন সঞ্জয়। প্রতিভাকে চিনে নিয়ে তাকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বাকি সমস্ত কিছুই করেছেন ফুটবলাররা।

শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, কৃশানু দে, মহম্মদ নবি থেকে এখনকার শুভাসিস বসু বা প্রীতম কোটাল। কলকাতা ময়দান জানে এমনই অসংখ্য বাঙালি ফুটবলারের সংগ্রামের কাহিনি। যাঁরা ক্লাবের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যকে এবং দেশকেও গর্বিত করেছেন। অথচ এখন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় দলেও বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা হাতে গোনা। ময়দানের অন্য ক্লাবগুলিতেও ভিনরাজ্যের ফুটবলারদের ভিড়। কলকাতা লিগে দিন দিন কমছে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা। যা নিয়ে খানিকটা উদ্বিগ্ন রাজ্যের ক্রাড়ীমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

ভবানীপুর ক্লাব আয়োজিত সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলা দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম হওয়া সহজ। কিন্তু প্রথম স্থান ধরে রাখা কঠিন। গুরুত্বপূর্ণ হল, পরবর্তী পরিচর্যাটা। আমরা যদি পরের বার, তার পরের বার, তারও পরের বার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, তা হলে আমাদের বাঙালি ফুটবলার তুলে আনতে হবে। যত দিন না ভারতীয় টিমে বাংলার সাত জন প্লেয়ার থাকবে, তত দিন ভারতীয় ফুটবল এগোবে না। কিন্তু সমস‌্যা হল, কলকাতা লিগে এগারো জন ফুটবলারের মধ‌্যে সাত জন বাইরের খেলোয়াড় খেলে। তা হলে কী করে উন্নতি হবে? আইএফএ-কে বলব, কলকাতা লিগ আপনারা যে রকম বিদেশি মুক্ত করেছেন, তেমনই কলকাতা লিগে শুধুমাত্র বাংলার ফুটবলার খেলানোর বন্দোবস্ত করুন।’’

ক্রীড়ামন্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা না করে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা আগেই এটা করার চেষ্টা করেছিলাম। তখন তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল আমাদের। বিভিন্ন ক্লাবের আপত্তি ছিল। ক্লাবগুলোকে বাদ দিয়ে তো আইএফএ চলতে পারে না। ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, ওঁর অফিসে কলকাতা লিগের ক্লাবগুলির কর্তাদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। বাংলার ছেলেরা বেশি খেলার সুযোগ পাক সেটা আমরাও চাই। এক বারে হয়তো পুরোটা করা যাবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে। কারণ কলকাতা লিগ আকর্ষণ হারালেও অন্য সমস্যা হতে পারে। স্পনসরেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আইএফএ আর্থিক দিক থেকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতা কঠিন হলে খেলার মান বাড়ে। এটাও মাথায় রাখা দরকার।’’

৩৩ বার সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা। চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের বুধবারই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। দল শহরে ফেরার পর নবান্নে ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি ক্রীড়ামন্ত্রী এবং সরকারি আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে। সেই মতো ২২জন ফুটবলারের মধ্যে ২১জনকে কলকাতা পুলিশের এএসআই পদে নিয়োগ করা হল। এক জন রাজ্য সরকারের চাকরি নেননি। তিনি আগে থেকেই অন্য একটি চাকরি করেন।

ভবানীপুর ক্লাবের অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী, আইএফএ সচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভবানীপুর ক্লাবের কর্ণধার স্বপনসাধন (টুটু) বোস, প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য, শিশির ঘোষ, কম্পটন দত্ত, অতনু ভট্টাচার্য, দেবজিৎ ঘোষ, শিল্টন পাল, আইএফএ চেয়ারম‌্যান সুব্রত দত্ত, মহামেডান সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ রাজু, কার্যনির্বাহী সভাপতি কামারউদ্দিন প্রমুখ। ভবানীপুর ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চ‌্যাম্পিয়ন বাংলা দলকে তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি কোচ-ফুটবলারদের প্রত‌্যেককে দেওয়া হয় ঘড়িও। সন্তোষ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন বলেন, ‘‘আমি শুধু নিজের কাজটা সৎভাবে করেছি। আমি মনে করি, সৎভাবে কাজ করলে একদিন না একদিন ফল পাওয়া যায়। আগে বাংলার যে সব দল সন্তোষ ট্রফি চ‌্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাদের সঙ্গে এ বারের দলের তুলনা চলে না। আগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়াররা রোভার্স-ডুরান্ড খেলে সন্তোষ ট্রফি খেলতে যেত। কিন্তু এখন আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়ারদের সন্তোষ ট্রফিতে পাওয়া যায় না। আইএসএল-আইলিগ খেলা প্লেয়ারদেরও পাওয়া যায় না। তাই এ বার অনেক বেশি কঠিন ছিল। এই সাফল্যের সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের।’’

এ দিনই তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে নেওয়ার জন্য নতুন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছেন টুটু। তিনি বলেছেন, ভবানীপুর ক্লাব জুনিয়র অ্যাকাডেমি তৈরি করবে। রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গেয়ে এদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed