নেতাজীর সঙ্গে তুলনা!‘দলীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল মমতা’, অভিষেককে ছেড়ে আবার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ঝোল টানলেন একদা জেলখাটা সাংসদ?

একেই বলে ঝোপ বুঝে কোপ মারা। যখন যেদিকে প্রয়োজন সেদিকেই ঝুঁকে পড়তে অভ্যস্থ। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েই দিয়েছিলেন। ‘তিনি যতদিন আছেন তিনিই দলের শেষ কথা’, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি জানান দিতেই কিছুদিন স্তব্ধ ছিল ‘বোলচাল’। বেছে বেছে এরকম কয়েকজন সুবিধাভোগীর মুখে লাগাম টেনে দিয়েছিলেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। অভিষেককে তোষামোদ বন্ধ হয় তৎক্ষনাৎ। আসলে, যুবনেতাকে তুষ্ট করে আরও বড় কোনও পদাধিকার হাতিয়ে যতদিন রক্ষে পাওয়া যায় আর কী? জেলে থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য কারুর অজানা নয়। হঠাৎ হঠাৎ করে চেহারা বদল বেশ ধন্দে ফেলেছে জনসাধারনকে। এখন প্রশ্ন, আর কতদিন এভাবে নিজেকে রক্ষা করা যাবে। দীর্ঘদিন জেল খেটে আসার তকমা কি মোছা যাবে এভাবে?
দলীয় রাজনীতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সরকারি তথ্যমতে দলনেত্রীর জন্মদিনে বন্দনায় মুখর দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। বোঝাতে চাইলেন, নেতাজির মতো দেশনায়ক, যিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন সত্যি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামে, তিনিও আলাদা রাজনৈতিক দল গড়ে তেমন সাফল্য পাননি। সে অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় রাজনীতিতে দেশের মধ্যে সবচেয়ে সাফল্যের নজির গড়েছেন বলে দাবি।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। যদিও তাঁর আসল জন্মদিন দুর্গাষ্টমীতে। নিজের লেখা ‘একান্তে’ বইতে সেই তথ্য তুলে ধরেছেন মমতা। কিন্তু ৫ জানুয়ারি দিনটি তা সত্ত্বেও নেত্রীর জন্মদিন হিসেবে পালন করে থাকেন দলের সহকর্মীরা। এমন দিনেই তুলনা টানা হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে। বলা হল, “কংগ্রেসেও যদি দেখেন, খুব সত্যি কথা বলতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আলাদা দল করেও দলীয় রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। তিনি ঐতিহাসিক বিপ্লবী। তবে সংসদীয় রাজনীতিতে দল গড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সেই জায়গায় সবচেয়ে সফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তুলনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বলতে শোনা গেল, “প্রণব মুখোপাধ্যায়ও আলাদা দল গড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে বাংলার মাটিতে যদি আলাদা দল করে কেউ সফল হয়েছেন, তাহলে তিনি একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” এহেন তৈলমর্দ্দনকারীর মন্তব্য নিয়ে বিরোধীরা সমালোচনা শুরু করেছেন। বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ, মমতার সঙ্গে নেতাজির তুলনা! মেনে নেওয়া যায় না। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে নিজে ওয়াকিবহাল জেলে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার কয়েদির সাফাই, শুধুমাত্র দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আকাশছোঁয়া সাফল্যের তুলনায় নেতাজি বা প্রণববাবুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নেতাজি যে আদর্শ দেশনায়ক, সে ব্যাপারে কোনও তুলনা চলে না।