‘লাল কম্বল রহস্য’ আবারও ঘণীভূত, আরজি কর কাণ্ডের সেই রাত নিয়ে মৃত চিকিৎসকের সহকর্মীদের বয়ান?
সিএফএসএল-এর রিপোর্টের উল্লেখ, সেমিনার রুমেই আরজি করের সেই তরুণী চিকিৎসককে খুন করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে যথষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রশ্ন, খুন হওয়া সেই তরুণী চিকিৎসকের সহকর্মীরা সিবিআই অফিসারদের কী বয়ান দিয়েছিলেন? ৮ আগস্টের রাতে তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন পিজিটি সৌমিত্র রায়, অর্ক সেন, হাউসস্টাফ গোলাম আজম, ইন্টার্ন শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র। রাত ২টোর সময় সৌমিত্র সেই তরুণী চিকিৎসকের ঘুম ভাঙিয়েছিলেন। এক রোগীর অসুস্থতার কথা জানাতেই ডেকেছিলেন সেই তরুণী চিকিৎসককে। এর জবাবে অন্য এক চিকিৎসককে ফোন করতে বলেছিলেন সেই তরুণী।
সিবিআইকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, রাত ২টো ১৯ মিনিটে নাকি অর্ক দেখেছিলেন, সেই তরুণী চিকিৎসক লাল কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন সেমিনার রুমে। রাত ২টো ৫০ মিনিটে নাকি সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন হাউজ স্টাফ গোলাম আজম। কারও সাড়া না পেয়ে নাকি দরজা বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন গোলাম।এই মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় নিজের বয়ানে দাবি করেছিল, সে যখন সেখানে পৌঁছেছিল, সেমিনার রুমের দরজা খোলা ছিল। সিবিআইকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, পিজিটি এবং ট্রেনিরা ভোররাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেগে ছিলেন। ৯ আগস্ট সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ সেমিনার রুমে প্রবেশ করেছিলেন পিজিটি সৌমিত্র রায়। সেমিনার রুমে টেবিলের পিছনে তিনি দু’টি পা দেখতে পান এবং দেহের অস্বাভাবিক অবস্থান দেখে বেরিয়ে আসেন। এই অবস্থায় তিনি প্রথমে তরুণী চিকিৎসককে ফোন করেন। তারপর অর্ককে ফোন করেন সৌমিত্র।
রিপোর্টে দাবি, এই ঘটনা নিয়ে অর্কের বয়ানের সঙ্গে নাকি সৌমিত্রর বয়ানে সামান্য ফারাক আছে। সৌমিত্র যেখানে দাবি করেছেন, ৯ তারিখ সকালে ৯টা ৩৭ মিনিট নাগাদ তিনি অর্ককে ফোন করেছিলেন। অর্ক বলছেন, সেই ফোন সাড়ে ৯টায় এসেছিল। অর্ক সিবিআই অফিসারদের আরও বলেছেন, ‘সেমিনার রুমে ঢুকে দেখি অর্ধনগ্ন অবস্থায় তিলোত্তমার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে সেখান থেকে বেরিয়ে বলতে থাকি, তিলোত্তমার সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে! সুইসাইড কি না নিশ্চিত নয়।’ এই আবহে প্রশ্ন ওঠে, কেন অর্ক ‘সুইসাইড’ বলেছিলেন? এদিকে অর্ক সেমিনার রুম থেকে বেরিয়ে এসেই নার্সিং স্টেশনে গিয়েছিলেন। ৯ অগস্ট সকালের ডিউটিতে নার্সিং স্টেশনে কর্মরত ছিলেন পিজিটি প্রিয়া গিরি, পুজা রাই, ভ্যানিলা কৃষ্ণন। সিবিআই-কে পুজা জানান, সেমিনার রুমে পড়ে থাকা দেহ দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে সেটি খুন-ধর্ষণের ঘটনা। অথচ অর্ক বলেছিলেন, সেই চিকিৎসক সুইসাইড করেছিলেন।
তিলোত্তমার ইউনিট হেড সুমিত রায় তপাদার সিবিআইকে বলেন, ‘সকাল ন’টা পঞ্চাশ মিনিট নাগাদ চিকিৎসকের অবস্থার কথা জানিয়ে আমাকে সেমিনার রুমে যেতে বলেন ভ্যানিলা কৃষ্ণন, প্রিয়া গিরি। সেখানে গিয়ে মৃত চিকিৎসকের চোখের উপরে মোবাইলের আলো ফেলে দেখি মণি স্থির। দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে দেহে প্রাণ নেই এবং এটা খুন-ধর্ষণের ঘটনা।’ এদিকে নিজের বয়ানে অর্ক বলেছিলেন, ডঃ তপদার নাকি স্টেথোস্কোপ দিয়ে চিকিৎসকের হার্টবিট চেক করেছিলেন। নিহত তরুণীর সহকর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, একমাত্র অর্কই জানিয়েছেন, তিনি রাতে সেমিনার রুমে লাল কম্বল জড়িয়ে ঘুমোতে দেখেছেন নিহত চিকিৎসককে। সকালে সেমিনার রুমে চিকিৎসকের মৃতদেহ দেখার পরে সুমিত রায় তপাদার চাদর দিয়ে দেহ ঢাকার জন্য বলেছিলেন। সেই সময় একটি গাঢ় নীল চাদর দিয়ে দেহ ঢেকেছিলেন পিজিটি পুজা রায়। প্রশ্ন, চিকিৎসকের বাবার কাছে সবুজ চাদরে জড়ানো ছবি এল কীভাবে?