ক্লিনচিট নেই তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও? নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে বিস্ফোরক ইডি!
নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে বিস্ফোরক ইডি। চার্জশিট কী বলছে? ৪টি সংস্থা থেকে ২ কোটি ৮৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৩৫ টাকা ঢুকেছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে। ইডির চার্জশিটে নাম রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর হিসেবে মমতার ভাইপোর নাম আছে চার্জশিটে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে বড় দাবি ইডি চার্জশিটে। খাতায় কলমে ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও এক সাইকেল সংস্থা সহ চারটি সংস্থার থেকে কয়েক কোটি টাকা পেয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস। ইডির দাবি, বৈদ্যুতিক কেটলি, চশমা এবং কার্ডের ব্যবসা সংক্রান্ত ইনভয়েস দেখিয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস। ইডি চার্জশিটে উল্লেখিত লক্ষ্মী সাইকেল প্রাইভেটের মালিকের বয়ানে স্পষ্ট, তাঁর সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কাছে টাকা গেলেও আসলে কোনও ব্যবসা হয়নি বা জিনিস কেনাবেচাই হয়নি। এদিকে ইডির চার্জশিটে নাম তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
৪টি সংস্থা থেকে ২ কোটি ৮৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৩৫ টাকা ঢুকেছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে। ইডি জানিয়েছে, লক্ষ্মী সাইকেল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৪ হাজার ৬৮১ টাকা, নবীন এন্টারপ্রাইজ থেকে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৯৭ টাকা, এগজটিক ইনভেনশন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থা থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ইন্টিগ্রেটেড ইনভেনশন ট্রেডিং সংস্থা থেকে ১০ লক্ষ ৪ হাজার ৫৫৮ টাকা পেয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে পঞ্চম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সেই চার্জশিটের শুরুতেই আছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম। এই সংস্থার সঙ্গে নাম জড়িয়ে আছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর নামে গড়া তহবিলের নামও রয়েছে সেই চার্জশিটে। মোট ২৯টি নাম নয়া চার্জশিটে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অন্যান্য ঘনিষ্ঠদের নামও রয়েছে এই চার্জশিটে। অভিযুক্ত হিসেবে লক্ষ্মী সাইকেল প্রাইভেট লিমিটেডে এবং নবীনকুমার গুপ্তর নামও রয়েছে। এদিকে চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, সাইকেল সংস্থার মালিক নবীনকুমার গুপ্ত জেরায় মেনে নিয়েছেন তাঁর সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা যেত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা এবং সেই সংক্রান্ত ভুয়ো ইনভয়েস জোগাড় করে দিতেন মনোজ মানহোত। প্রসঙ্গত, এই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। এদিকে ইডির এই পঞ্চম চার্জশিটে নাম রয়েছে বেঙ্গল মার্লিন হাউসিং লিমিটেড এবং তার অন্যতম ডিরেক্টর সুশীলকুমার মোহতা, দিলীপকুমার চৌধরী, গ্রিনটেক আইটি সিটি প্রাইভেট লিমিটেড এবং তার অন্যতম ডিরেক্টর উদয় মোদী, বৌবাজারের চিরাগ অ্যাপ্লায়েন্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং তার ডিরেক্টর সুবোধকুমার ছাজেরের নামও। এছাড়াও নাম রয়েছে ওএমআরশিট প্রস্তুতকারী সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি, তাপস মণ্ডলের সংস্থা মিনার্ভা ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন, নীলাদ্রি ঘোষ, পার্থ-ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের।
২০২২ সালের ২৩ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতার করা হয় তাঁর বান্ধবী অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। প্রথমে টালিগঞ্জে অর্পিতার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে ২১ কোটি টাকারও বেশি নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। এরপরে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেও টাকা উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এত নগদ দেখে চোখ কপালে উঠেছিল বঙ্গবাসীর। তবে এখানেই শেষ হয়নি দুর্নীতির টাকার হিসেব। অর্পিতার পরও এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্তীতি মামলায় রাজ্যের আরও হেভিওয়েটরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জালে জড়িয়েছেন। মানিক ভট্টাচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন এসএসসি উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা, প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ সহ একাধিক জন এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাজতে যান। এদিকে গত ২০২৩ সালে যুব তৃণমূলের সমাবেশে অভিষেক দাবি করেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর নাম বলানোর জন্য ধৃতদের ওপর চাপ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। কুন্তলের মাধ্যমেই এই মামলায় নাম জড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেকের।