January 16, 2025

যিশুর জন্ম অনুযায়ী হয় সালগণনা, বড়দিনের ৮ দিন পরে শুরু নতুন বছর, ১ জানুয়ারি থেকেই নতুন বছরের সূচনা?

0
Christmas day

খ্রিস্টের জন্মের ২ হাজারেরও বেশি বছর আগে বিশ্বের অনেক অংশে প্রচলিত ছিল ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডার। শারদোৎসব পর আবারও বড় উৎসবের মরশুম। বড়দিন-নতুন বছরের আনন্দে মাতামাতি। ২০২৫ স্বাগত জানাতে উল্লাসে। নিউ ইয়ার রেজোলিউশন। পুরনো বছরের ভুলত্রুটি শুধরে নতুন বছরে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবেন সকলেই। খ্রিস্টান ক্যালেন্ডারে, যিশুর জন্মের পর থেকেই নতুন সাল গণনার সূচনা। ২৫ ডিসেম্বরের বদলে কেন ১ জানুয়ারিতে পালিত হয় বর্ষবরণ? মাঝে কেন ৮ দিনের ব্যবধান?

খ্রিস্টের জন্মের ২ হাজারেরও বেশি বছর আগে বিশ্বের অনেকটা অংশে প্রচলিত ব্যাবিলনীয় ১০ মাসের ক্যালেন্ডারে নতুন বছর হত মার্চ মাসে। বসন্তে প্রকৃতি যখন নতুন জীবনীশক্তি পেয়ে উজ্জ্বল, সেই সময়ে বর্ষবরণ করতেন সাধারণ মানুষ। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথমদিকে পালটে যায় এই ক্যালেন্ডার। গোটা বছরকে ১২ মাসে ভাগ করা হয়। নতুন ক্যালেন্ডারে যোগ হয় জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাস। রোমান দেবদেবীর নাম লানুয়ারিউস এবং ফেব্রুয়ারিউসের নাম অনুসারে নতুন দুই মাসের নাম রাখা হয়েছিল জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী। দুটি মাস যোগ হলেও নতুন বছর গোনা হত মার্চ থেকেই।

জানুয়ারি মাস থেকে নতুন বছর ধরা শুরু হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময়কালে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে গোটা রোম সাম্রাজ্যজুড়ে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করার পরিকল্পনা করেন সিজার। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সাল থেকে শুরু হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। জানুয়ারি মাস থেকে নতুন বছর হিসাবেই ১২ মাসের ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য ছাড়াও আরও বহু জায়গায় অনেকদিন ধরে প্রচলিত ছিল এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারই। তবে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে ছবিটা। খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর পরে দিউনিসিয়স এক্সিগুস নামে এক ধর্মপ্রচারক পরিকল্পনা করেন, সালগণনা শুরু হোক খ্রিস্টের জন্মের সময়কালের নিরিখে।

দিউনিসিয়সের মত ছিল, যিশু খ্রিস্টের জন্ম গোটা বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসকে দুভাগে ভাগ করে দেয় জগতে তাঁর আবির্ভাব। তাই খ্রিস্টের জন্মের পর থেকে শুরু হোক নতুন এক অধ্যায়, যার নাম হবে খ্রিস্টাব্দ। যিশুর জন্মের আগের সময়কালকে খ্রিস্টপূর্বাব্দ হিসাবে অভিহিত করা হোক। ৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দিউনিসিয়সের এই পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয় পশ্চিমি বিশ্বজুড়ে। অর্থাৎ ৯০০ বছর পরে এসে ঠিক হয় যে যিশুর জন্মকে ১ সাল হিসাবে ধরা হবে। আজও সেই নিয়ম মেনে চলে গোটা দুনিয়া। খ্রিস্টের জন্মের ২০২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেই পালিত হবে ২০২৫ সালের নতুন বছর, যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ হিসাবে।

যিশুর জন্মের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যদি নতুন বছর পালিত হয়, তাহলে তাঁর জন্মদিনেই বর্ষবরণ নয় কেন? ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন পালন করে গোটা বিশ্ব। নতুন বছর আসে তারও ৮ দিন পরে। তার নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ কারণ। প্রাচীন ইহুদি সমাজে নিয়ম ছিল, কোনও পুত্রসন্তান জন্মালে তার ত্বকছেদ করতে হবে। আর সেটা করতে হবে জন্মের ঠিক ৮ দিনের মাথায়। ত্বকছেদের পরেই ওই পুত্রসন্তানের নাম রাখা হবে আনুষ্ঠানিকভাবে। সেই একই নিয়ম পালন করা হয়েছিল যিশুর ক্ষেত্রেও। জন্মের ৮ দিন পর মন্দিরে নিয়ে গিয়ে ত্বকছেদ করে তাঁর নাম রাখা হয় যিশু খ্রিস্ট। সেদিন থেকেই খ্রিস্টাব্দের সূচনা। সেই কারণেই খ্রিস্টের জন্মের বর্ষপূর্তিতে নতুন সাল গণনা করা হলেও, নতুন বছর শুরু হয় ৮ দিন পর থেকে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নতুন বছর আরও খানিকটা পিছিয়ে শুরু হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের নববর্ষ পালিত হয় বর্তমান ক্যালেন্ডারের ১৪ জানুয়ারিতে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে লিপ ইয়ারের কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। সমস্যা সমাধান করতে ১৫৮২ সালে নতুন ক্যালেন্ডার শুরু করেন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। তাঁর প্রণীত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই আজ ব্যবহার করে গোটা বিশ্ব। পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এখনও পালিত হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, তবে সেটা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে। রাশিয়া, ইউক্রেনের মতো দেশগুলো বড়দিন পালন করে ৬ জানুয়ারিতে। ১৪ জানুয়ারি নতুন বছর পালন করে এই দেশগুলো।‌

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed