সিবিআই চার্জশিট ‘কলকাতা পুলিশেরই চার্জশিট’! আরজি কর নির্যাতিতার বাবা হতাশার বাক্য! উঠেছে বৃন্দার ‘হস্তক্ষেপ’ প্রসঙ্গও
সিবিআই চার্জশিটকে ‘কলকাতা পুলিশের চার্জশিট’ বলে অভিহিত করে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে চাই না। সকলকেই নিয়েই চলব। মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তার বিচার পাওয়াই মূল লক্ষ্য।’ নির্যাতিতার বাবা আরও বলেন, বৃন্দা গ্রোভার কেন মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন, তা তিনি জানেন না। আইনজীবী বদল আরজি কর মামলায়। সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও অসন্তোষ নির্যাতিতার বাবার। হতাশা ঝেড়ে নতুন করে লড়াইয়ের জন্যে তৈরি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে চাই না। সকলকেই নিয়েই চলব। মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তার বিচার পাওয়াই মূল লক্ষ্য।’
নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘বৃন্দা গ্রোভারের খবর অনেক রাতে পেয়েছিলাম। এর পরে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে আমাদের একই কথা জানানো হয়। তবে তিনি কেন এমন করলেন, তা জানি না। তবে এর আগে যখন বৃন্দার মতো আইনজীবীকে পেয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল খুব উপকার হবে, দ্রুত বিচার পাব। তবে তেমন কিছুই হল না। সিবিআই চার্জশিট পড়ে সেটা কলকাতা পুলিশের চার্জশিট মনে হচ্ছে। শুনছি সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবে। কিন্তু কবে তা দেওয়া হবে, তা নিয়ে কেউ কিছু জানে না। বারবার কেস রিপোর্ট জানতে চেয়েও কিছু জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটা। মামলার থেকে আলো সরাতেই এই চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে হয়। তবে কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে চাই না। সকলকেই নিয়েই চলব। মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তার বিচার পাওয়াই মূল লক্ষ্য।’
আরজি কর মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। বৃন্দার পরিবর্তে আইনজীবী করুণা নন্দীকে নিয়োগ করেছেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবার। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলায় ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ অর্থাৎ চিকিৎসকদের তরফে আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করছিলেন করুণা নন্দী। শিয়ালদা আদালতে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে দেখা করেন রাজদীপ হালদার এবং অমর্ত্য দে নামে দুই আইনজীবী। আইনজীবী বদল নিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, ভালো কিছু কি আর হবে না? হতাশ লাগছিল খুবই। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম। পরে গুছিয়ে নিয়েছি নিজেকে। নতুন আইনজীবীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই ছাড়ব না। নতুন লড়াইয়ের জন্যে এখন তৈরি হচ্ছি।’
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলা নিয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছিল বৃন্দা গ্রোভারের কাছ থেকে। এরপরই তিনি এবং তাঁর দল এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সিবিআইয়ের হয়ে দাবি করেছিলেন, তদন্তের গতিবিধি নিয়ে প্রতিনিয়ত নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তদন্তকারীরা। সলিসিটর জেনারেলের দাবির বিরোধিতা করেননি নির্যাতিতার হয়ে সওয়াল করা আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। এই নিয়েই নাকি বৃন্দার কাছে জবাবদিহি চেয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই নিয়ে দুই পক্ষের কথাবার্তার পরে বৃন্দা এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা দাবি করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে সিবিআই মিথ্যে বলেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সিবিআই মোটেও তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে না। তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। যদিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে যখন সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সিবিআই যোগাযোগ রেখে চলেছে, তখন তা নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি নির্যাতিতা চিকিৎসকের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশ করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। সঙ্গে বৃন্দার ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বৃন্দা গ্রোভার এবং তাঁর দল এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।