ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন হাসিনা? ইউনূস প্রশাসনকে ‘গণহত্যাকারী’ বলে দাবি আন্তজার্তিক মহলের

মুজিব-কন্যার দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও তুঙ্গে জল্পনা। ভারতে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোর বিরোধী বাংলাদেশের ইউনূস সরকার ও মুজিব-কন্যার দলের ঘোর বিরোধী বিএনপি এবং জামাতেরও। চার মাস পেরিয়ে এখনও অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ প্রকট। নতুন উদ্যমে ঘর গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় ফেরাতে চাইছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার ক্ষমতায় ফেরা অসম্ভব কিছুই নয় বলে মনে করছে বিশ্ব। ঢাকার অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।

পদ্মাপারের নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টার দাবি, মুজিব-কন্যার সঙ্গে রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে লড়াই করবে দেশের অন্যান্য দল। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে লীগের কোনও বাধা নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর জোর দিয়ে পুরনো ধ্যানধারণা বদলে মাইক্রো ফিন্যান্স এবং সামাজিক ব্যবসাকে দৃঢ় করার চেষ্টায় ইউনূস। বর্ষীয়ান নোবেলজয়ী বলেন, ‘‘আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কারণ এ ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’-এর (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপি) আপত্তি রয়েছে। এটি দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল। ফলে বিএনপির মতামতকে আমরা কখনওই অস্বীকার করতে পারব না।’’ বিএনপি ও বিরোধী কট্টরপন্থী ‘জামাত-ই-ইসলামি’ও। উল্টে পদ্মাপারের রাজনীতিতে মুজিব-কন্যার দল সক্রিয় থাকুক, এমনটাই চাইছেন। বিএনপি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পার্টি। বিএনপির দাবি, মিথ্যা মামলায় তাদের ৫০ লক্ষ কর্মীকে জেলে পুরেছিল হাসিনা প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্তমানে লীগের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ চাইছে খালেদা জ়িয়ার দল। শুধু তাই নয়, জামাত আবার মুজিব-কন্যার দলকে ‘আমাদের পরিবারের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে। জামাতের মতো কট্টরপন্থী এই রাজনৈতিক দলকে পদ্মাপারের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাতেও খামতি রাখেননি বলে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে লীগকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ করা কখনওই গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়।’’

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞেরা পদ্মাপারে মুজিব-কন্যার ফেলে যাওয়া কুর্সিতে বসতে বদ্ধপরিকর জামাত ও বিএনপি। দেশটির জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশেরই বয়স ৩৫ বছরের কম। অভিযোগ, হাসিনার আমলে এই যুব সমাজের খুব অল্প সংখ্যকই নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিয়াকে অধিকাংশই পছন্দ করেন না। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে কী ভাবে ক্ষমতা দখল করা যায়, তার ছক কষছেন জিয়া ও জামাতের শীর্ষ নেতৃত্ব। মিষ্টি কথায় আমজনতা এবং আওয়ামী লীগের ভরসা পাওয়ার চেষ্টা করছেন । দ্বিতীয়ত, হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়া ইস্তক গত চার মাসে তাঁর দলের প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এ ক্ষেত্রে আঙুল উঠেছে বিএনপি এবং জামাতের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের প্রতি ‘নরম’ মনোভাব দেখিয়ে বিএনপি ও জামাত দায়মুক্ত হওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তা ছাড়া লীগের আস্থাভাজন হতে পারলে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের দলের অন্দরেই চাপ তৈরি করা যাবে বলে মনে করছেন। বিএনপি ও জামাত নেতৃত্ব যদি লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলে তাঁদেরও অবস্থা মুজিব-কন্যার মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা।

গত দেড় দশক ধরে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে কম চেষ্টা করেনি জামাত ও বিএনপি। বাংলাদেশি জনতা যে দারুণ ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে এমনটা নয়। দু’টি দলেরই বহু নেতা এখনও মনে করেন বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং সমাজমাধ্যমের রমরমার যুগে আমজনতার নাড়ি বুঝতে ঢের সময় লাগবে। সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ না হলেও পদ্মাপারে যে ভাবে লীগকে কোণঠাসা করা হয়েছে, তাতে পরবর্তী নির্বাচনে হাসিনার দলের পক্ষে পূর্ণশক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কার্যত অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক শত্রুর পরাজয় এবং ভোটে জেতার সুযোগ ছাড়তে নারাজ বিএনপি। কিছু বিএনপি নেতা-নেত্রীর সন্তান বা আত্মীয়ের সঙ্গে আবার বৈবাহিক সূত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ক্রমাগত মুজিব-কন্যার দল আক্রান্ত হলে জিয়ার দলেও ফাটল ধরার আশঙ্কা থাকবে। জামাত এই সুযোগে ১৯৭১ সালের ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবিতে অনড়। লীগের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধপরাধ’-এর মতো অভিযোগ আনতে চাইছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, নিকট ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফিরবে না আওয়ামী লীগ। বছর ৭৭-এর হাসিনা দাবি করেছেন, দেশের খুব কাছেই রয়েছেন। ঠিক সময়ে পদ্মাপারে পা পড়বে তাঁর। দুর্বৃত্তদের কাউকে ক্ষমা করবেন না বলেও জানিয়েছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে চলা বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চলা একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন মুজিব-কন্যা। সেখানে ইউনূস প্রশাসনকে ‘গণহত্যাকারী’ বলে তোপ দেগেছেন হাসিনা।