এখনও আছি, শেষ সিদ্ধান্ত আমিই নেব : মমতা, ‘শৃঙ্খলা না মানলেই ব্যবস্থা’ বিধায়কদের কড়া বার্তা মমতার

সোমবার বিধানসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের বিধায়কদের জানিয়ে দেন, তৃণমূলে শেষ সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। দলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র যে তিনিই, তা নিজমুখেই স্পষ্ট করে দেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’য় বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন ‘টিমওয়ার্কে’। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, তৃণমূলে শেষ সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন! উপনির্বাচনে জয়ী রাজ্যের ছয় তৃণমূল বিধায়ককে সোমবার বিধানসভায় শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার পরে বিধানসভার অন্দরে নৌসাদ আলি কক্ষে তাঁদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের অন্য বিধায়কেরাও। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকেই মমতা বিভিন্ন ‘জল্পনা’ এবং ‘গুজবের’ প্রতি ইঙ্গিত করে জানান, কে কী বলছে ভাবার দরকার নেই। যত দিন তিনি আছেন, তত দিন দলের বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। মমতার সঙ্গে বিধায়কদের বৈঠকে থাকা প্রবীণ নেতা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রত বক্সীর সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ নয় বলে দলের অন্দরে সকলেই জানেন। বক্সী মমতার ‘আস্থাভাজন’। মমতা বিধায়কদের বৈঠকে বলেন, তিনি এবং বক্সী মিলে দল চালিয়ে নিতে পারবেন। বিধানসভায় মমতার বৈঠকে নিজে আরও এক বার ঘোষণা করেছেন, তিনি তৃণমূলের ‘চেয়ারপার্সন’। শেষ সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।
বৈঠকে দলের ছাত্র এবং যুব সংগঠনেও রদবদলের ইঙ্গিত দিয়ে মমতা জানান, যত দ্রুত সম্ভব তিনি তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠনকে নতুন করে সাজাবেন। দলের বিধায়কদের নির্দেশ দেন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে। বিধায়কদের বলেন, বিধানসভা ভোটের আগাম প্রস্তুতি হিসাবে তাঁরা যেন তাঁদের এলাকার প্রতিটি বাড়িতে যান। সদ্যনির্বাচিত বিধায়কেরাও যেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের ধন্যবাদ জানান। সংখ্যালঘু এবং তফসিলি ভোটারদের গুরুত্ব দেওয়ারও নির্দেশ দেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। বিধায়কদের ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’ হওয়ার কথাও বলে মমতা হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দেন, পর পর তিন দিন বিধানসভায় সময়মতো না-এলে চতুর্থ দিনে সেই বিধায়ককে ‘শো কজ’ করা হবে।
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে একের পর এক ক্ষেত্রে পর্যটনের উন্নতিতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সোমবার বিধানসভায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বাংলার পর্যটন ও আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানান। ট্যুরিজম বড় জায়গা। আমরা চা বাগানের কিছু জমি ট্যুরিজমের জন্য় দিচ্ছি। হোম স্টে হচ্ছে। ইউনেস্কো আমাদের ট্যুরিজমে সেরা ডেস্টিনেশন দিয়েছে। মমতা বলেন, আমাদের রিলিজিয়ন ট্যুরিজম হয়েছে। মন্দির, মসজিদ, গীর্জার কাজ হয়েছে। স্কাইওয়াক হয়েছে দক্ষিণেশ্বরে। কালীঘাটে হচ্ছে। আমি দিঘা যাচ্ছি শীঘ্রই। সেখানে পুরীর মতো জগন্নাথ মন্দির। আমি ট্রাস্টি বোর্ড গড়ছি। নিমকাঠের ঠাকুর প্রতিনিয়ত পুজো হবে। মার্বেল দিয়ে প্রতিমা হচ্ছে। চৈতন্য দ্বার হচ্ছে। আমি এটা লামাহাটা দিয়ে শুরু করেছি। বাড়িতে বাড়িতে হোম স্টে হয়েছে। গঙ্গাসাগর সেতুর ডিপিআর হয়েছে। ১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প। কুম্ভ মেলার সাথে সাগর মেলা লড়ছে। সুন্দরবন থেকে গজলডোবা যেখানে যা আছে, পাহাড় থেকে সাগর। আপন বৈশিষ্ট্য আছে। এখন প্রচুর হোটেল, হোমস্টে হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে। বক্সা ট্যুরিজম আমরাই একমাত্র উত্তরবঙ্গে ট্যুরিজম সাজিয়েছি। দিঘা থেকে দার্জিলিং, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পর্যটন নিয়ে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, চেয়ারম্যান পদে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন না। ওই চেয়ারে বসবেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। তবে সদস্যদের মধ্যে একজন করে জনপ্রতিনিধি থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা মাফিক সোমবার ঘোষিত হল রোগী কল্যাণ সমিতির জনপ্রতিনিধিদের নাম। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হলেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। এর আগে সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। রাজ্যের ২৪ মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির জনপ্রতিনিধি সদস্যের তালিকা—
এসএসকেএম- অরূপ বিশ্বাস
এনআরএস- সুপ্তি পাণ্ডে
আর জি কর- অতীন ঘোষ
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ- শশী পাঁজা
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ- জাভেদ খান
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ- মদন মিত্র
মালদা মেডিক্যাল কলেজ- কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ- খোকন দাস
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ- গৌতম দেব
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ- অরূপ চক্রবর্তী
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ- অপূর্ব সরকার
রায়গঞ্জ জিএমসিএইচ- কৃষ্ণ কল্যাণী
রামপুরহাট জিএমসিএইচ- আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
কোচবিহার জিএমসিএইচ- অভিজিৎ দে ভৌমিক
প্রফুল্ল চন্দ্র সেন জিএমসিএইচ- মিতালী বাগ
পুরুলিয়া জিএমসিএইচ- শান্তিরাম মাহাতো
তাম্রলিপ্ত জিএমসিএইচ- সৌমেন মহাপাত্র
বারাসত জিএমসিএইচ- কাকলি ঘোষ দস্তিদার
ঝাড়গ্রাম জিএমসিএইচ- দুলাল মুর্মু
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জিএমসিএইচ- পুলক রায়
জলপাইগুড়ি জিএমসিএইচ- মহুয়া গোপ
কল্যাণী জেএনএম- মহুয়া মৈত্র
চিত্তরঞ্জন সেবা সদন- সুব্রত বক্সি
বি সি মেমোরিয়াল- স্বপন সমাদ্দার