January 14, 2025

‘হিন্দুশূন্য’ হয়ে যাবে মহম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশ?বাংলাদেশীদের চিকিৎসা বন্ধের সিদ্ধান্ত কলকাতার হাসপাতালের

0
Iskon

ফের বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুরা। শুক্রবার নমাজের পরই চট্টগ্রামের তিনটি মন্দিরে দলে দলে হামলা চালায় কট্টরপন্থীরা! শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পদ্মাপারে বিপন্ন হিন্দুরা। বাড়িঘরের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়েছে হিন্দু উপাসনালয়গুলোতেও। চট্টগ্রামের এই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হিন্দুদের মনে। তাই ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, এবার কি ‘হিন্দুশূন্য’ হয়ে যাবে মহম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশ? হিন্দু নিপীড়ন, ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারিতে এখন উত্তাল বাংলাদেশ। একদিকে যেমন প্রতিবাদে পথে নেমেছেন হিন্দুরা অন্যদিকে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে মৌলবাদীরা। শুক্রবার চট্টগ্রামে ইসকনের বিরুদ্ধে মিছিলের পরই জুম্মার নমাজ শেষ হতেই স্লোগান দিতে দিতে হিন্দু মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায় বিএনপি ও জামাতের কট্টরপন্থীরা। হরিশচন্দ্র মুনসেফ লেনের শন্তনেশ্বরী মাতৃ মন্দির, শনি মন্দির ও শন্তনেশ্বরী কালিবাড়ি মন্দিরকে নিশানা করে। ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয় মন্দিরগুলোও। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে হিন্দুদের বাঁচায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনারও কোনও চেষ্টা করেনি। যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেখানে ৯০ শতাংশই হিন্দু। সূত্রের খবর, মন্দিরে হামলার পরই সেখানকার বেশ কিছু বাসিন্দা প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তী হিংসার আশঙ্কায় তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসে তা আরও লাগামছাড়া হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলায় এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০০টি হিন্দু মন্দির। ৫ নভেম্বর ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন চট্টগ্রামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী। ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’-এর তকমাও দেন। যার পরই স্থানীয় হিন্দুদের বিক্ষোভে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নেয় চট্টগ্রাম। সেই বিক্ষোভ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মাঝেই ইসকন মন্দিরের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভু ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আনা হয়েছে। খারিজ হয়েছে জামিন। এর পরই ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। মামলা খারিজ আদালতে। ক্ষোভ বেড়েছে মৌলবাদীদের মধ্যে।

ওপার বাংলায় হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদ এপার বাংলাতেও। নিজের রোজগারের পরোয়া না করেই কলকাতার এক চিকিৎসক এবং মানিকতলার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আপাতত বাংলাদেশী রোগী দেখা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল। সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানাতেই ভাইরাল সেই পোস্ট। চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে আমজনতা। তবে একজন চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রোগীকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক উসকে দিয়েছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউইটি)–র প্রবেশপথে রাস্তাতেই আঁকা হয়েছে একটি ভারতীয় পতাকার প্রতিকৃতি। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেই পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে-বেরোতে দেখা যায় একটি ছবিতে। সেই ছবিটি আপলোড করে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ তথা বন্ধ্যত্বরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল সাহা তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘বিইউইটি-র প্রবেশপথে ভারতীয় জাতীয় পতাকা বিছিয়ে রাখা! চেম্বারে বাংলাদেশের রোগী দেখা আপাতত বন্ধ রাখছি। আগে দেশ, পরে রোজগার। আশা রাখব দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়া অবধি অন্যরাও তাই করবেন।’ বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু চিকিৎসক এই পোস্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করে শেয়ার করেন। শুক্রবার বিকেলে আবার মানিকতলার জেএন রায় হাসপাতাল ফেসবুক পোস্টে লেখে-ভারতবর্ষের প্রত্যেকটা হাসপাতাল থেকে এই আওয়াজটা উঠুক। সেই পোস্টারে লেখা, ‘আপাতত বাংলাদেশী রোগী দেখা বন্ধ। ভারতের চিকিৎসায় সুস্থ থেকে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা! এটা হতে পারে না।’ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ও। এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “আমরা চিকিৎসক হিসেবে তো একথা বলতে পারি না। কারণ, রোগীর প্রথম পরিচয় তিনি অসুস্থ। তবে আগে প্রতিদিন আউটডোরে দেড়শো থেকে দুশো রোগী আসতেন, এখন সেই সংখ্যা কমে ১০-১৫ তে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশী কোনও রোগী ভর্তি নেই। শুধু এই হাসপাতাল নয়, সব হাসপাতালের ছবিই এক।” আইএমএ-র বঙ্গ শাখার স্বাস্থ্যমহল মনে করছে, কলকাতায় যদি এই প্রবণতা চিকিৎসক ও হাসপাতাল মহলে সংক্রমিত হয়, তা হলে বিপাকে পড়বেন অসংখ্য অসুস্থ বাংলাদেশী। কেননা, অপ্রতুল চিকিৎসা পরিকাঠামো ও বিপুল খরচের কারণে বাংলাদেশের বহু রোগী প্রতি বছর কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসায় ভরসা রেখেই বহু বাংলাদেশী বেঁচে রয়েছেন।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed