February 11, 2025

নির্বাচনে বাবুনের হারে মুখ্যমন্ত্রী ‘অপ্রসন্ন’ নন!‌ বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে বড় হার বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের

0
Babun

এর আগে হকি অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষপদও খুইয়েছেন বাবুন। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে পরাজিত মুখ্যমন্ত্রীর ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন। সভাপতি পদে তিনি হারলেন ভারোত্তোলন সংস্থার কর্তা চন্দন রায়চৌধুরীর কাছে। অশনি সঙ্কেত দেখা গিয়েছিল গত অক্টোবর মাসেই। হকি বেঙ্গলের সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন (বাবুন) বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার বাংলার অলিম্পিক্স সংস্থা (বিওএ) থেকেও সরে যেতে হল। শুক্রবার বিওএ-র নির্বাচনে জিতে সংস্থার নতুন সভাপতি হয়েছেন চন্দন রায়চৌধুরী। বাংলার খেলাধুলোর জগতে বাবুনের খানিকটা ‘আধিপত্য’ তো ছিলই। এই নির্বাচনে হারের পরে তা অনেকাংশেই খর্ব হল। নির্বাচনে বাবুনের হারে মুখ্যমন্ত্রী ‘অপ্রসন্ন’ নন। অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচনে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় হারলেন ৪৫-২০ ভোটের ব্যবধানে। অ্যাসোসিয়েশনের দুই সদস্য ভোট দেননি।

শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বঙ্গ অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচন ছিল। চার বছর আগে এই নির্বাচনকে ঘিরে যথেষ্টই উন্মাদনা ছিল। বিশেষ করে সভাপতি পদের লড়াইকে ঘিরে। সেই পদে দাদা ও ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করেছিল গোটা ময়দান। দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই নির্বাচনে হারিয়ে বিওএ সভাপতি হয়েছিলেন ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের নির্বাচনে ‘নির্বাচনী কমিশনার’-এর ভূমিকায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর আর এক সহোদর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের ময়দানে তিনি সরাসরি প্রার্থী না থাকলেও তাঁর ‘ভূমিকা’ যে ছিল, তা বাংলার ক্রীড়ামহলের সকলে জানেন।

বাংলার ক্রীড়ামহলের সকলে জানেন। চার বছর আগে ময়দান দেখেছিল মুখ্যমন্ত্রীর এই দুই সহোদরের ভোটের লড়াই। বিওএ নির্বাচনেই দাদা অজিতের বিরুদ্ধে সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছিলেন বাবুন। এবং দাদাকে হারিয়ে জিতেছিলেন। তখন ওই নির্বাচন ঘিরে বহু বিতর্ক এবং কাদা ছোড়াছুড়ি দেখেছিল ময়দান। শোনা গিয়েছিল, দুই ভাইয়ের ‘ক্ষমতাদখলের লড়াই’ মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি। এ বার অজিত নির্বাচনী ময়দানে প্রার্থী হিসেবে নামেননি। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। নির্বাচন হওয়ার আগেই ইঙ্গিত ছিল যে, বাবুন হারতে পারেন। বাবুনকে সরানোর তোড়জোড় অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। সূত্রের দাবি, নেপথ্যে থেকে গোটা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর মদতেই বাবুনের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন রোয়িং সংস্থার কর্তা চন্দন। মমতার ‘আস্থাভাজন’ অরূপ সাধারণত ‘দিদি’র অনুমোদন বা নির্দেশ ছাড়া কোনও কাজ করেন না। যাবতীয় ঘুঁটি চেলেছেন অরূপ। সাজিয়েছেন রণকৌশলও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহলের খবর, বিওএ-র নির্বাচনের ফলাফল জেনে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনে জয়ীরা রাতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপের সঙ্গে গিয়ে দেখাও করেছেন।

ভারোত্তোলন সংস্থার কর্তা চন্দন রায়চৌধুরীই শেষ পর্যন্ত হারিয়ে দিলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুক্রবার ভোটগণনার পর দেখা গেল স্বপনবাবু মাত্র ২০টি ভোট পেয়েছেন। চন্দনবাবু পেয়েছেন ৪৫ ভোট। অর্থাৎ কার্যত একপেশেভাবেই পরাজিত বাবুন। অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচনে বাবুনের পরাজয় তাঁর জন্য বড় ধাক্কা। ক্রীড়া প্রশাসন থেকে দূরত্ব আরও বাড়ল। এর আগে হকি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদও খুইয়েছেন। হকি বেঙ্গলের শীর্ষপদে বাবুনের বদলে এসেছেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। অলিম্পিক সংস্থার শীর্ষপদও হারাতে হল বাবুনকে। আপাতত একমাত্র সম্বল, রইল পড়ে মোহনবাগানের পদটাই।

বিওএ-তে মোট ভোট ৬৮টি। জয়ী প্রার্থীকে পেতে হত ৩৫টি ভোট। নির্বাচনের আগেই নতুন সভাপতি চন্দন দাবি করেছিলেন, তিনি ৪০টি ভোট পাবেন। পেয়েছেন তার চেয়েও পাঁচটি বেশী। ৪৫টি ভোট। বাবুন পেয়েছেন চন্দনের অর্ধেকেরও কম, ২০টি ভোট। ঘনিষ্ঠমহলে বাবুন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এই বলে যে, যাঁদের বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁরাই পিছনে ছুরি মেরেছেন। বাবুন শিবিরের সাধারণ সচিব পদে কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ও হেরেছেন। পেয়েছেন ২০টি ভোট। অন্য দিকে, চন্দন শিবিরের জহর দাস ওই পদে দাঁড়িয়ে ৪১টি ভোট পেয়েছেন। গত নির্বাচনে বাবুনের সঙ্গে থাকলেও এ বার শিবির বদল করেছেন জহর। নির্বাচনের আগে দাবি করেছিলেন, গত চার বছর কাজ করতে পারেননি।

কোষাধ্যক্ষ পদে দ্বিতীয় কেউ মনোনয়ন না দেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন কমল মৈত্র। নির্বাচন কি ‘স্বচ্ছ’ হয়েছে? বাবুন বলেছেন, “কিছু তো একটা হয়েছেই। সে ব্যাপারে আমি পরে বলব।” তবে বিওএ-র সভাপতি পদ হারানোর পর পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, “খেলাধুলোয় হার-জিত রয়েছে। সে ভাবেই আমি হার স্বীকার করছি। তবে ভোট ময়দান ছেড়ে পালাব না। অন্য অনেক খেলার সঙ্গে আমি জড়িত। সেই খেলার উন্নতি করার চেষ্টা করব। যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের চেয়েও বেশি কাজ করে দেখানোর চেষ্টা করব।”

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed