February 11, 2025

‘‌সাংসদ প্রসূন ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন’‌?‌ অতীতের শেফিল্ড থেকে বর্তমানের রুগ্ন শিল্পনগরী হাওড়ার ছোট বড় ব্যবসায়ীরা ‘‌টোটো’‌ চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন!‌

0
Prasun  Banerjee

প্রাচ্যেরর শেফিল্ড হাওড়া এখন মৃতপ্রায় শিল্পনগরী৷ হাওড়ার সিংহভাগ অংশই পড়ে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে৷ ২০১৩ সাল থেকে সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এতগুলো বছরে কী কী কাজ করেছেন তিনি? অতীতের শেফিল্ড থেকে বর্তমানের রুগ্ন শিল্পনগরী হাওড়া। হাওড়া নিজের শিল্পনগরীর তকমা অনেক আগেই হারিয়েছে৷ একে বন্ধ হয়েছে ছোট-বড় কারখানা৷ যেগুলো আছে, সেগুলোর অবস্থায় ‘মৃতপ্রায়’৷ ভোট এলেই হাওড়ার অতীতের গৌরব আর বর্তমান দুর্দশার ছবির তুলমূল্য বিচার শুরু হয়ে যায়৷

শিল্পের জন্যই একসময় হাওড়ার পরিচিত ছিল৷ ছোট-বড় অনেক কারখানাই ছিল সেখানে৷ তথ্য বলছে, সাতের দশকের পর থেকে সেভাবে হাওড়ার শিল্পোন্নয়নের কাজ সেভাবে হয়নি। হাওড়ার শিল্পের যা কিছু ছিল, তা সবই সাতের দশকের সময়ে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, জে কে ডব্লিউ, হুগলি ডক, গ্যাসকিং-সহ, ইন্ডিয়া মেশিনারী, ভারত জুট মিল এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্প। যে নগরীর জন্য প্রণীত হয়েছিল বিশেষ আইন। যদিও সবই এখন ইতিহাসের পাতাতেই সীমাবদ্ধ।

একদা প্রাচ্যের শেফিল্ড তকমা পাওয়া হাওড়া শিল্পনগরীর দশা বড়ই বেহাল। এই কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে আরতি কটন মিল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, রেল প্রিন্টিং প্রেসের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা, একইভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা বার্ন স্ট্যান্ডাড, হুগলি ডক, গ্যাসকিং-সহ বহু মাঝারি ও ছোট শিল্প। হাওড়ার দাস নগর এলাকা তথা ইছাপুর এলাকাতে ছোট বড় লেদ মেশিনের কারখানা রয়েছে। সেখানেও ব্যবসার হাল মন্দ হওয়ার জন্য শ্রমিকদের সংখ্যাও দিনের পর দিন কমেছে। এই সকল লেদ কারখানাতে অতীতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাওড়ার শিল্পের জৌলুশ তলানিতে এসে ঠেকার কারণে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম। অধিকাংশ ছোট বড় ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে ‘‌টোটো’‌ চালাচ্ছেন।

অথচ হাওড়ার শিল্পনগরীর উত্থান ও অর্থনীতির বিকাশে ছোট-বড় সব সংস্থারই অবদান ছিল। এই কেন্দ্রে এই সমস্ত অতীতের কারখানাগুলোকে চালু করানোর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কেন্দ্রের জীবিকা সংস্থানে এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হতে পারতো। সেই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার কি এই ‘‌ঘুমিয়ে থাকা’‌ সাংসদের পক্ষে সম্ভব? স্থানীয় সাংসদ তথা প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বেশ ক্রুদ্ধ হাওড়ার জনসাধারন। অনেকেই তাঁর মিথ্যাচারিতার কথা তুলে ধরছেন বলে অভিযোগ।

আগামীদিনে হাওড়ার শিল্পে সুদিন ফেরানোর আশ্বাসও দিচ্ছেন৷ সমানিকপুর ডেল্টা জুটমিলের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার অবস্থা খুব করুণ। রাজগঞ্জ, আরতি কটন মিল চললেও সেখানে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নেই। হুগলি ডক বন্ধ! হাওড়া 600 বছরের প্রাচীন শহর। এই শহরকে বিশেষ পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়েছে। এখানে থাকা বড়, মাঝারি, ছোট সব শিল্প শেষ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। হাওড়াতে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, জিকে ডব্লিউ মতো শিল্প ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রেলমন্ত্রী হলেও বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বাঁচাতে অক্ষম ছিলেন। রেলের সবচেয়ে বড় ওয়াগন তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, বাঁচাতে পারেননি। একদা ৬০০ বছর পুরানো শেফিল্ড নগরী থেকে বর্তমানে জঞ্জাল নগরীর তকমা পেতে চলেছে বলে অভিযোগ। শিল্পের বেহাল দশার পাশাপাশি সাংসদ হিসেবে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারফরম্যান্স নিয়েও অভিযোগের পাহাড়৷ ভারত সরকারের এমপিল্যাড (সাংসদের জন্য বরাদ্দ তহবিল) সংক্রান্ত পোর্টালে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাংসদ উন্নয়ন তহবিলে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাওয়ার কথা ছিল ১৭ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ভারত সরকার থেকে টাকা এসেছে সাত কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ০.‌৮৭ কোটি টাকা তিনি খরচ করতে পারেননি৷

তিনবারে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল হাওড়ার সাংসদের জন্য৷ প্রথমবার আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ হয় ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর৷ ২০২১ সালের ১৪ জুন বরাদ্দ হয় বরাদ্দ হয় আরও আড়াই কোটি টাকা৷ ২০২২ সালের ৯ জুন বরাদ্দ হয় আরও ২ কোটি টাকা৷ প্রথমত:‌ বাকি টাকা কেন বরাদ্দ হয়নি? এই নিয়ে সরকারি পোর্টালে লেখা রয়েছে যে প্রয়োজনীয় এমআরপি ও প্রভিশনাল ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা পড়েনি৷

টানা ১৫ বছর সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হাওড়ায়। সিপিএমের সমর মুখোপাধ্যায়ের হাওড়ার সাংসদ ছিলেন ১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩ বছর৷ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার সাংসদ ২০১৩ সালে৷ ২০০৯ সালে জয়ী অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর উপ-নির্বাচনে জয়ী অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন এই ক্রীড়াবিদ টানা হাওড়ার সাংসদ৷ ‘প্রসূন ঘুমিয়েই কাটিয়েছেন।’ হাওড়ার তৃণমূলের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘কুম্ভকর্ণ’ বলেছিলেন হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এই অভিযোগ হাওড়াবাসীর অধিকাংশের চাপা ক্ষোভও রয়েছে। এই কারণেই হাওড়া শিল্পনগরীর অধিকাংশ ছোট বড় ব্যবসায়ীকে টোটো চালিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে বলে পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ। সময়মতো প্রসূন বড় খুঁটি ধরে নিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করার অভিযোগও রয়েছে। অতীতে তিনি সিপিএম। পরে রঙ বদলে তৃণমূল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করে কার্যসিদ্ধি। এরপর নিজের ছেলে প্লাতিনি বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাইফ-‌সেট্‌ল করার কার্যকরী প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ দলের অন্দরমহলেই। আপাতত বড় খুঁটি হিসাবে প্রসূন দ্বারস্থ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনটাই অভিযোগ হাওড়া তৃণমূলের বড় অংশ!‌

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed