February 11, 2025

আইপিএলে ১৩ বছরের কোটিপতি তরুন বৈভব!‌ ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা বৈভব সূর্যবংশী

0
Baibhab

আইপিএলের নিলামে রাজস্থান এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে লড়াই বৈভবকে নিয়ে। ৩০ লক্ষ থেকে তার দাম পৌঁছে গেল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকায়। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা বৈভব সূর্যবংশী। বিহারের সমস্তিপুরের বাড়ি থেকে পটনার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। বাবা ছেলেকে অ্যাকাডেমিতে নিয়ে আসতেন এক দিন অন্তর। ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করার স্বপ্ন দেখা এবং তার জন্য জমি বিক্রি করে দেওয়া বাবা যে দিন নিয়ে আসতেন, সে দিন সেই ছেলে ৫০০ বল না খেলে নেট ছাড়ত না। ১৩ বছরের সেই বৈভব সূর্যবংশী সাধারণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে রাজস্থান রয়্যালসের নেটে। ছ’দিনের মধ্যে ঢুকে পড়ল আইপিএলে। রাজস্থান নিল ১৩ বছর ২৪৩ দিনের বৈভবকে।

বৈভবের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরের তাজপুরে। চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট শেখা শুরু তার। সাড়ে সাত বছর বয়সে বৈভবের বাবা সঞ্জীব তাকে নিয়ে যান পটনার এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। কোচ সৌরভ কুমার প্রথম দেখেন বৈভবকে। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত কম বয়সে তার ব্যাটিং দেখে। নেটে নামার জন্য ছটফট করত বৈভব। ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের ট্রায়ালে গিয়েছিল বৈভব। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। বাবা কৃষক। একটি দোকানও আছে। জমি বিক্রি করে ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ জুগিয়েছেন সঞ্জীব। সমস্তিপুর থেকে ভোর ৪টের সময় বেরোতে হয়। পাটনা পৌঁছতে সাড়ে ৭টা বেজে যায়। কোচ মণীশ ওঝার কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বৈভব। কাকভোরে খাবার বানিয়ে দেন বৈভবের মা।

নিজের সঙ্গে কিছু বোলার নিয়ে আসত বৈভব। বিভিন্ন শট খেলার অনুশীলন চলত সারা দিন ধরে। খেলার এবং শেখার ইচ্ছা এতই প্রবল ছিল যে, সময়ের হিসাব থাকত না। নিলামের আগেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিহারের কিশোর ব্যাটারের নাম। নিলামের তালিকায় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে ছিল বৈভবই। ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি কর্তৃপক্ষ। রাজস্থান রয়্যালসকে নিলামে নেতৃত্ব দেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজে। দিল্লির হাতে সে সময় ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১৮ জন ক্রিকেটারকে নেওয়া ছিল তাদের। রাজস্থানের হাতে ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাদের কেনা হয়েছিল ১৬ জন ক্রিকেটার। ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দামে রাজস্থান রয়্যালস নিতেই নতুন ইতিহাস তৈরি হল আইপিএলে।

বৈভবের দুই কোচ উচ্ছ্বসিত দ্রাবিড়কে তাঁদের ছাত্র কোচ হিসাবে পাওয়ায়। দ্রাবিড় মানেই তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনার কাহিনি। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে থাকার সময় দ্রাবিড়ের হাত ধরেই তৈরি হয়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিলের মতো ক্রিকেটার। ভারতীয় দলের কোচ থাকার সময়ও তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়েছেন। রাজস্থান রয়্যালস ইতিমধ্যেই বৈভবকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছে। দ্রাবিড় হয়তো চাইছেন না বৈভবের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটুক। তার যত্ন নেওয়া শুরু করে দিয়েছে রাজস্থান। ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড গড়া হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। তার আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল সে। ভাল খেলেছিল বিনু মাঁকড় ট্রফিতেও। প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে সে। ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে আলোচনায় উঠে আসে ১৩ বছরের বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪।

এত কম বয়সে বড় বড় কীর্তি গড়ে ফেলা বৈভবকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্কও। অনেকের অভিযোগ সে নাকি বয়স ভাঁড়িয়ে খেলছে। অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়াও হল। কারণ,ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ২০১৯ সালে ওর বয়স পরীক্ষা করেছে। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বি দলে খেলেছে। অর্থাৎ, ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে বয়সের পরীক্ষা দিয়েছে বৈভব। প্রয়োজনে আবার পরীক্ষা দেবে। ওর বয়সে কোনও ভুল নেই। ভাল ক্রিকেট খেলছে বলে সুযোগ পাচ্ছে। আইপিএলের কোনও দল তো ও কম বয়সের বলে নেয়নি। ভাল খেলতে পারে বলে নিয়েছে। অবশ্যই বৈভবের খেলাটাকে সম্মান করা উচিত বলে মনে করেন প্রত্যেকেই।

বরাবর নিজের বয়সের থেকে বড় বোলারদের বিরুদ্ধে খেলেছে বৈভব। তবে আইপিএলে তার বিপক্ষে থাকবেন মিচেল স্টার্ক, যশপ্রীত বুমরা, যুজবেন্দ্র চহাল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো বোলারেরা। বৈভব ভাবেই না উল্টো দিক থেকে কে বল করছে। বোলার তো বলই করবে। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের গতি, সুইং, বাউন্স বেশি থাকতে পারে। দিনের শেষে তাঁরা বল করবেন আর বৈভব ব্যাট করবে। বিপক্ষের পরিকল্পনা বুঝে মোকাবিলা করতে হবে। বৈভবের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। হাতে নানা ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। বয়সের থেকে বড়দের বিরুদ্ধে খেলার সাহস রয়েছে। একাগ্রতা, শেখার ইচ্ছা, মনোযোগ এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা প্রবল। খেলাই ওর ধ্যানজ্ঞান। রাজস্থানের ট্রায়ালে এক ওভারে ১৭ রান করতে বলা হয়েছিল। বৈভব প্রথম তিনটে বলেই ছক্কা মারে।

তবে আইপিএল খেলার বিষয়ে ছাড়পত্র প্রয়োজন। ২০২০ সালে নতুন নিয়ম এনেছিল আইসিসি। যেখানে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্য অন্তত ১৫ বছর বয়স হতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বয়সের বিধিনিষেধ আনা হচ্ছে। আইসিসির সমস্ত প্রতিযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, অনুর্ধ্ব ১৯ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অন্তত ১৫ বছর বয়স হলে তবেই ছাড়পত্র পাবে’। নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই বোর্ডকে আইসিসির কাছে আবেদন করতে হবে ১৫ বছরের কম ক্রিকেটারকে খেলানোর জন্য। তখন দেখা হবে ওই ক্রিকেটারের আগের খেলার অভিজ্ঞতা, মানসিক বিকাশ এবং শারীরিক সমক্ষতার। আইপিএলের ক্ষেত্রে এরকম কোনও বিধিনিষেধ নেই। সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে ওই ফ্রাঞ্চাইজির উপর। অতএব, বৈভব সুযোগ পান কিনা, সেটার জন্য নজর রাখতে হবে রাহুল দ্রাবিড় ও কুমার সাঙ্গাকারা কী সিদ্ধান্ত নেন তার দিকে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed