গতি আর বাউন্সে ভারত কাবু! ৭ উইকেট হারিয়ে চেকমেট অস্ট্রেলিয়া

গতি আর বাউন্সে ভারতকে কাবু করার ছক কষেছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারতের ১৫০-র জবাবে বুমরার ধাক্কায় চাপে অসিরা। পার্থ টেস্টের প্রথম দিনেই দাপট দু’দলের বোলারদের। বিশ্বের দ্রুততম ২২ গজে শুক্রবার পড়ল ১৭ উইকেট। বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটিং লাইনআপের আত্মসমর্পণ কিছুটা অপ্রত্যাশিত। নিউজিল্যান্ডে বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ০-৩ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারা ভারতীয় দলকে অস্ট্রেলিয়া স্বাগত জানিয়েছে পার্থের ২২ গজে।
রানে না থাকা কোহলি স্টান্স বদলে নেমেছিলেন পার্থে ব্যাট করতে। তাতেও রান এল না। ফর্মে ফেরার জন্য ব্যাটারেরা অনেক সময় স্টান্স পরিবর্তন করেন। উইকেটের সামনে একটু অন্য ভাবে দাঁড়ান ব্যাট হাতে। অনেকে সুফল পেয়েছেন। কোহলিও রানে ফেরার জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরে নিজের স্টান্স বদলেছেন। কোহলি ব্যাট করার সময় সাধারণত মিডল এবং অফ স্টাম্প পরিষ্কার দেখা যায়। শুক্রবার ব্যাট করার সময় তাঁর শুধু অফ স্টাম্প দেখা যাচ্ছিল। মিডল স্টাম্প চলে গিয়েছে পায়ের আড়ালে। কোহলির ডান পা থাকে পপিং ক্রিজ়ের লাইনের উপরে বা ঠিক বাইরে। পার্থে কোহলি দাঁড়ালেন পপিং ক্রিজ়ের বেশ খানিকটা বাইরে। ব্যাটিংয়ে এত কিছু বদলেও ব্যাটে রানে ফিরতে পারলেন না। করলেন ৫ রান। কোহলির শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাসের অভাব। ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ের সময়ও। চনমনে থাকার চেষ্টা করলেও লাভ হচ্ছে না। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে বুমরার বলে মার্নাস লাবুশেনের ক্যাচ ধরেও ফেলে দিলেন। কঠিন ছিল না ক্যাচটি। সতীর্থেরা নিশ্চিত সাফল্যের আনন্দে মেতে উঠতে শুরু করতে কোহলি নিজেই শুকনো মুখে হাতের ইশারায় জানিয়ে দেন লাবুশেন আউট নন। পার্থ টেস্টে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বুমরা নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি, কোহলি সহজ ক্যাচ ধরেও ফেলে দিয়েছেন।
অধিনায়ক বুমরার সিদ্ধান্ত। ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা। ৪৯.৪ ওভারে শেষ বুমরার দলের প্রথম ইনিংস। ঋষভ পন্থ ৩৭ এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি ৪১ ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারলেন না। ওপেন করতে নামা লোকেশ রাহুলের ২৬ আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকল। বাকিরা ২২ গজের গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেন না। ১৫০ রানে শেষ হল ভারতের ইনিংস। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম চার ঘণ্টাতেই কোণঠাসা ভারত। টস জিতে বুমরা কার ভরসায় প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকল। কোহলির মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে বড় ভুল করেছেন। অধিনায়ক হিসাবে কঠোর এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও সাহসী মনোভাব পরিলক্ষিত হতেও পারত।
মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সেরা অস্ট্রেলিয়াকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। দিনের শেষে বুমরা, হর্ষিত রানা, সিরাজদের পাল্টা দাপটে সেই সুবিধা ধরে রাখতে ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়া। কোহলি সহজ ক্যাচ ফেলে না দিলে, আরও সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে পারত অস্ট্রেলিয়া। লাবুশেন ৫২ বল খেলে ২ রান করে আউট হলেন প্রায় শেষ বেলায়। ভারতের জোরে বোলারদের বিরুদ্ধে অস্বস্তিতে থাকলেও মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। রান করার ঝোঁক নেই তাঁর ইনিংসে। বলের পালিশ তুলে দ্রুত পুরনো করে ফেলাই যেন লক্ষ্য। লাবুশেন সম্ভবত দ্বিতীয় দিন সকালের কথা মাথায় রেখে খেলছেন। সেই সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য উইকেট বাঁচিয়ে রাখতে হত অস্ট্রেলিয়াকে। পারলেন না উসমান খোয়াজা, স্টিভ স্মিথ, ট্র্যাভিস হেডরা। ফলে দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৬৭। এখনও ভারতের থেকে ৮৩ রানে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। আয়োজকদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান অ্যালেক্স ক্যারের অপরাজিত ১৯। কোহলির মতোই দশা স্মিথের। রান নেই। কোহলির মতোই দলকে চাপে ফেলে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়কও। বোলারদের দাপটে ব্যাটারদের আত্মসমর্পণ। বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির প্রথম টেস্টকে সম্ভবত পাঁচ দিন গড়াতে দেবে না। বুমরা বল হাতে ১৭ রানে ৪ উইকেট নিলেন। হ্যাজলউডও ৪ উইকেট নিয়েছেন ২৯ রান খরচ করে। কামিন্স, স্টার্কেরা যেমন হ্যাজলউডকে সঙ্গ দিলেন, তেমনই বুমরাকে সিরাজ, হর্ষিতেরা। লড়াই বোলারে বোলারে।