February 11, 2025

ধৃত সিভিকের ‘কন্ঠরোধ’ মনে করাল ১১ বছর আগে কুণাল ঘোষের পর্ব?‌ হর্ন বাজিয়ে এবং গাড়িতে চাপড় মেরে ‘ধর্ষক-খুনি’র মুখ বন্ধ রাখল পুলিশ!‌

0
Prison Van

কী বলার চেষ্টা করছিলেন ‘ধর্ষক-খুনি’? নতুন কিছু বলতে চেয়েছিলেন? ফের ‘কৌশল’ বদল করল পুলিশ। হর্ন বাজিয়ে এবং গাড়িতে চাপড় মেরে আদালত চত্বরে জোরালো আওয়াজ তৈরি করে কার্যত মুখ বন্ধ রাখা হল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। পুলিশের এই আচরণ মনে করিয়ে পড়িয়েছে ১১ বছর আগে কুণাল ঘোষের পর্বকে। সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর কুণালও পুলিশের গাড়ি থেকে সরকার-বিরোধী নানা মন্তব্য করতেন। বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। তাঁর স্বর চাপা দিতে তখনও পুলিশকে গাড়ি চাপড়াতে দেখা গিয়েছিল। আরজি কর-কাণ্ডে ফিরে এল সেই দৃশ্যই। চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে নাম থাকার পর থেকে বার বার মুখ খোলার চেষ্টা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। কখনও ভরা এজলাসে ধৃতের দাবি, তাঁকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কখনও আবার প্রিজন ভ্যান থেকে চেঁচিয়ে দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।

শিয়ালদহ আদালতে প্রবেশের সময় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের মুখ বন্ধ রাখতে ‘কৌশলী’ কলকাতা পুলিশ। কোনও রকম ‘বাঁধন’ না থাকায় প্রথম দু’দিন চিৎকার করে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য, অভিযোগ করেছিলেন আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত ‘ধর্ষক-খুনি’। দু’দিনের একই ঘটনাক্রমের পর সতর্ক হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কালো কাচের গাড়ির ব্যবস্থা করে আটকানো গিয়েছিল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের চেঁচামেচি। পর পর তিন দিনের সেই আয়োজনের পর সোমবার ফের ‘কৌশল’ বদল করল পুলিশ। হর্ন বাজিয়ে এবং গাড়িতে চাপড় মেরে আদালত চত্বরে জোরালো আওয়াজ তৈরি করে কার্যত মুখ বন্ধ রাখা হল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। কান ‘ঝালাপালা’ করা সেই শব্দে শোনা গেল না ‘ধর্ষক-খুনি’র কোনও কথা!

আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার বিচার-পর্বের দ্বিতীয় দিন থেকে ধৃত সিভিকের ‘কন্ঠরোধ’ শুরু। সুযোগ পেলেই কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন ধৃত। কখনও মৃদু স্বরে, কখনও হাতের ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, তাঁকে ‘বলতে দেওয়া হচ্ছে না’! সোমবারও সেই চেষ্টা করেছিলেন তিনি। একই কথা বলতে চাইছিলেন ধৃত? না কি নতুন কোনও ‘বিস্ফোরক তথ্য’ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন? তৈরি হয়েও এসেছিলেন তার জন্য? এর জবাব অবশ্য মিলল না। বিচার-পর্বের পঞ্চম দিনে আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল শিয়ালদহ আদালতে। দুপুর ২টো নাগাদ ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে আদালতে পৌঁছয় পুলিশের গাড়ি। প্রবেশপথে গাড়ি থামতেই মুহূর্তের মধ্যে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নামিয়ে ভিতরে নিয়ে চলে যান পুলিশকর্মীরা। ধৃতকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার সময়েই আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়িগুলির হর্ন তারস্বরে বাজতে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশকর্মীরাও সমবেত ভাবে গাড়ির ছাদে চাপড় মারতে থাকেন। ফলে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় আদালত চত্বরে।

সোমবার বিচার শুরুর দিন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল)-র নাম বলে অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে ফাঁসিয়েছেন। ধৃত বলেছিলেন, ‘‘আমাকে কোনও কথা বলতে দেয়নি। বড় বড় অফিসার সব! আমি নাম বলে দিচ্ছি। বিনীত গোয়েল আমাকে ফাঁসিয়েছে। বিনীত গোয়েল, ডিসিডিডি স্পেশ্যাল সাজিশ করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাদের সরকারও ওদের সমর্থন করেছে।’’ চার্জ গঠনের দিনেও শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন ধৃত।

তিনি বলেছিলেন, ‘‘আসলদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সরকার ও ‘ডিপার্টমেন্ট’ (পুলিশ) তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ধৃতের কথায়, ‘‘আমি রেপ অ্যান্ড মার্ডার করিনি। আমি বললাম যে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে সেখানেও যেতে দিল না। সরকার আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমাকে ভয় দেখাচ্ছে যে তুমি কিছু বলবে না। ডিপার্টমেন্ট আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি পুরোপুরি নির্দোষ।’’

দুই ঘটনার পরেই তৎপর হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ধৃতের মুখ বন্ধ রাখতে তাঁকে কালো ‘টিন্টেড’ কাচে ঢাকা সাদা রঙের একটি এসইউভি-তে করে আদালতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। সোমবার সফল পুলিশের নতুন কৌশল! ব্যর্থ ধৃত সিভিকের কিছু বলার চেষ্টা।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed