দূষনের বিষের সঙ্কেত কলকাতা এবং হাওড়াতে? দিল্লির ধারে কাছে নয় শহর ও শহলতলীর দূষণ!

শহরেই বা দূষণের হাল-হকিকত? বাতাসের ‘বিষ’? কেউই সুরক্ষিত নয়? দিল্লির দূষণদাপটে নাজেহাল শহরবাসী। দেশজোড়া আলোচনার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের দুই শহর কলকাতা এবং হাওড়ার দূষণ কম যায় না। তথ্য উঠে এল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অর্থাৎ সিপিসিবি পরিসংখ্যানে? বাতাসের গুণগত মানের সূচক একিউআই। একিউআই কোথায় ভাল, কোথায় খারাপ বা অত্যন্ত খারাপ। সিপিসিবির নির্দেশিকা তালিকা অনুযায়ী, বাতাসের গুণগত মানের সূচক যদি শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে ভাল পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। ৫১-১০০ সন্তোষজনক, ১০১-২০০ সামান্য খারাপ, ২০১-৩০০ খারাপ, ৩০১-৪০০ খুব খারাপ, ৪০১-৫০০ অতি ভয়ানক।

পশ্চিমবঙ্গের দুই শহরের ছবিটা ঠিক কেমন? উদ্বেগজনক? দিল্লিতে দূষণের দোসর ঘন ধোঁয়াশাও। ফলে দৃশ্যমানতা নামছে। পশ্চিমবঙ্গে ধোঁয়াশার দাপট তেমন না দেখা গেলেও, শহর কলকাতার বাতাস নিরাপদ বলা যাবে না। সিপিসিবির তথ্য বলছে, শহরের সাতটি এলাকার বাতাসের গুণগত মানের সূচক কোথাও খারাপ, আবার কোথাও খারাপ পর্যায়ে। কলকাতার মূলত সাতটি এলাকার দূষণ পরিমাপ করে সিপিসিবি। বালিগঞ্জ, বিধাননগর, ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে সিপিসিবির ওয়েবসাইটে, সেই তথ্য বলছে, কলকাতার সাতটি এলাকার মধ্যে দু’টিতে অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম এবং বালিগঞ্জে বাতাসের গুণগত মানের সূচক যথাক্রমে ২২৭ এবং ২০৩। যা খারাপ পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। তবে শহরের বাকি পাঁচ এলাকার বাতাসের গুণগত মানের সূচক ১০০-র উপরে কিন্তু ২০০-র নীচে। সেই হিসাবে সামান্য খারাপ পর্যায়ে রয়েছে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫), ভিক্টোরিয়া (১৯০), যাদবপুর (১৭৬), বিধাননগর এবং রবীন্দ্র সরোবর (১৩৭)। অন্য দিকে, হাওড়ায় দূষণের ছবিটাও সন্তোষজনক নয়। ২০০-র উপরে, কিন্তু ৩০০-র কাছাকাছি রয়েছে এই শহরের বাতাসের গুণগত মানের সূচক। এই শহরের পাঁচটি এলাকায় দূষণ পরিমাপ করে সিপিসিবি। তার মধ্যে রয়েছে ঘুসুড়ি। এখানে বাতাসের গুণগত মানের সূচক ২৯৩। যা খারাপ পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেন (২৮১), দাসনগর (২৭৭), পদ্মপুকুর (২৫৫) এবং বেলুড় মঠ (২২২)

দিল্লিতে বাতাসের গুণমান সূচক ‘অতি ভয়ঙ্কর’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ঘন ধোঁয়াশায় ঢাকা দিল্লি। কড়া পদক্ষেপ করেও দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বৃষ্টিই একমাত্র দেশের রাজধানীকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে পারে বলে দাবি করলেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করে মঙ্গলবার চিঠি দিলেন। দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর জন্য অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েপ্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বলে গোপাল বলেন, ‘‘উত্তর ভারতের আকাশ ঢেকে রেখেছে ধোঁয়াশার একাধিক স্তর। এই ধোঁয়াশা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল কৃত্রিম বৃষ্টি। দিল্লিতে এখন মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর হস্তক্ষেপ করা উচিত। দূষণ নিয়ে পদক্ষেপ করা তাঁর নৈতিক দায়িত্ব। সর্বোপরি, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রেরই পদক্ষেপ করা উচিত।’’ দূষণ রুখতে চতুর্থ স্তরের পদক্ষেপ (গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপ-৪) চালু করা হলেও দিল্লিতে নিয়ন্ত্রণে আসেনি দূষণের মাত্রা। কানপুর আইআইটি পরীক্ষামূলক ভাবে মেঘের বীজ বুনে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটিয়েছে আগেও। প্রয়োজনে দিল্লিতে তা করা যেতে পারে বলে দাবি গোপালের। মঙ্গল সকালে দিল্লিতে বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৪৯৪ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে, যা এই মরসুমে সর্বোচ্চ। সাধারণত বাতাসের গুণমানের সূচক ৪৫০ অতিক্রম করলেই তা ‘অতি ভয়ানক’ বলে বিবেচিত হয়। আনন্দ বিহার, অশোক বিহার, ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম, জাহাঙ্গিরপুরী-সহ বেশির ভাগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে বাতাসের গুণমানের সূচক ৫০০ অতিক্রম করে গিয়েছে। রাজধানী ও সংলগ্ন অঞ্চলে বাতাসের গুণমান পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৩৫টি কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে বাতাসের গুণমান সূচক সবচেয়ে কম ছিল দ্বারকায় (৪৮০)। ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ের উপরেই রয়েছে।