December 4, 2024

“সামি এক জন শিল্পী’‌’‌! খালি পায়ে কাদায় দৌড়, মাঠে ফেরার রহস্য!

0
Sami

আরও তিন বছর খেলবেন মহম্মদ সামি। এনসিএ তাঁকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে সামি নিজেই নিজের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। সামির কঠোর পরিশ্রমের কথা। প্রত্যাবর্তনের রহস্য। ফাঁস করলেন ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি। মহম্মদ সামি নিজেই নিজের পরীক্ষা নেন। শরীর দিচ্ছে কি না বোঝার চেষ্টা করেন নিজে নিজে। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার খামারবাড়িতে ফিরে কাদার উপর দৌড়ে বুঝে নিয়েছিলেন তিনি কতটা ফিট।

সামির যখন ১৫ বছর বয়স, তখন থেকে তাঁকে দেখছেন বদরুদ্দিন। মোরাদাবাদের ক্রিকেট কোচ জানেন আপাতত ভারতীয় দলের বাইরে থাকা এই পেসার কতটা পরিশ্রমী। সেই সঙ্গে দেখেছেন ছাত্রের মনের জোরও। ৩৪ বছরের সামির মধ্যে এখনও সেই মানসিক কাঠিন্য লক্ষ্য করছেন কোচ। বিশ্বাস করেন আরও তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন সামি।

এক বছর পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সামি। গত বছর ১৯ নভেম্বর ভারতের হয়ে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিলেন। তার পর থেকেই চোট নিয়ে ভুগছিলেন শামি। ফিরলেন বাংলার জার্সিতে। ইনদওরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে খেলছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন চার উইকেট। ছাত্রকে ভাল মতো চেনেন বদরুদ্দিন। জানেন ১০০ শতাংশ ফিট না হলে শামি কখনও খেলার সিদ্ধান্ত নিতেন না। নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য এবং কতটা সুস্থ হয়েছেন বোঝার জন্যই কাদামাটিতে দৌড়।

এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সামির অস্ত্রোপচার হয়। তার পর ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়েছিল বেশ কিছু মাস। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার পর এনসিএ-তে রিহ্যাব করেন। সামি শেষ পর্যন্ত ফেরেন রঞ্জির পঞ্চম ম্যাচে, মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে। সামি বাংলার হয়ে খেললেও তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশে। সেখানেই তাঁর ক্রিকেট জীবন শুরু। ক্লাব ক্রিকেট খেলার জন্য কলকাতায় আসেন। জায়গা করে নেন বাংলা দলে। সেখান থেকে ঢুকে পড়েন ভারতীয় দলেও। দেশের জার্সিতে ৬৪ টেস্টে ২২৯টি উইকেট নিয়েছেন। ১০১টি এক দিনের ম্যাচে নিয়েছেন ১৯৫টি উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের হয়ে ২৩টি ম্যাচে সামি নিয়েছেন ২৪ উইকেট। তাঁর সুইং যে কোনও ব্যাটারের কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। শেষ এক দিনের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়েছিলেন সামি। আইপিএলেও বিভিন্ন দলের হয়ে বল হাতে সফল।

উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় একটি খামারবাড়ি রয়েছে সামির। ১৫০ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি করেছেন সেই বাড়ি। সেখানে বানিয়েছেন ক্রিকেট পিচ। অনুশীলনের সব রকমের সুবিধা রয়েছে সেখানে। কোভিডের সময় যখন সব জায়গায় ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা যখন অনুশীলন করতে পারছিলেন না, তখন সামি পুরোদমে অনুশীলন করেছেন তাঁর নিজের তৈরি নেটে। ২০১৫ সালে শামি এই খামারবাড়িটি কেনেন। সেখানে ক্রিকেট পিচ তৈরি করেন। খেলা না থাকলে সেখানেই নিজের মতো অনুশীলন করেন তিনি। শুধু নিজে নন, শামির ওই খামারবাড়িতে অনুশীলন করে গিয়েছেন সুরেশ রায়না, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো ক্রিকেটারেরাও। সেখানেই কাদামাটিতে দৌড়ে নিজের ফিটনেস যাচাই করে মাঠে ফিরলেন সামি।

সামি চার উইকেট পেতেই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর ভাবনা শুরু বোর্ডের, অপেক্ষা রঞ্জির দ্বিতীয় ইনিংসের, গত বছর গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন সামি। এই বছর তাঁর হাঁটু ফুলে যায়। যে কারণে মাঠে ফিরতে বেশি সময় লাগে। অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য যখন ভারতীয় দল ঘোষণা করা হয়, শামি তখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। যে কারণে ১৮ জনের দলে তাঁর নাম ছিল না। রঞ্জিতে খেলে নিজের ফিটনেসের প্রমাণ দিয়েছেন সামি। অস্ট্রেলিয়া সফরে দ্বিতীয় টেস্টের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে সামিকে।

২২ নভেম্বর থেকে শুরু প্রথম টেস্ট। শনিবার রঞ্জি ম্যাচ শেষ হলেও সামিকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে প্রথম টেস্টে নামিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি হয়তো নেবে না ভারতীয় দল। দ্বিতীয় টেস্টের আগে প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচ রয়েছে। সেখানে সামিকে খেলিয়ে দেখে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় টেস্টে অ্যাডিলেডে গোলাপি বল হাতে দেখা যেতেই পারে সামিকে। অস্ট্রেলিয়া সফর পুরোপুরি নির্ভর করছে বাংলার রঞ্জি ম্যাচ দেখতে আসা নির্বাচক অজয় রাত্রা এবং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মেডিক্যাল দলের প্রধান নিতিন পটেলের উপর। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর ভাববেন সামিকে পাঠানোর কথা। কোচ বদরুদ্দিন বললেন, “সামি এক জন শিল্পী। ওর বোলিংয়ের শিল্প কখনও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। মাঠে ফেরার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল ও। যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারে তা হলে এখনও তিন বছর খেলবে বলে বিশ্বাস করি।”

ক্রিকেট মাঠে দুরন্ত কামব্যাক মহম্মদ শামির। বাংলার হয়ে বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট। পারফরম্যান্স দেখার পর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলার অধিনায়ক এবং কোচ। দীর্ঘ ৩৬০ দিন মাঠের বাইরে থাকার পর আগুন ফর্ম।। বাংলার অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার জানতেন সামি কামব্যাকের জন্য কতটা উদগ্রীব ছিলেন। রজত পতিদার এবং শুভ্রাংশু সেনাপতি জুটি যখন ক্রিজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তখন নিজেই অধিনায়কের থেকে বল চেয়ে নিয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের অধিনায়ক শুভম শর্মাকে বোল্ড করে নিজের উইকেট নেওয়ার খাতা খোলেন সামি। এরপর সারাংশ জৈন, কুমার কার্তিকেয়ন এবং কুলবন্ত খেজরোলিয়াকে আউট করেন।

বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার কথায়, ‘আমার কিছু বলার নেই… একজন এক বছর পর ক্রিকেট মাঠে ফিরে এলো তারপর এতগুলো উইকেট নিল, অসাধারণ! ও কোনও রকম ম্যাচের প্রস্তুতি ছাড়া সরাসরি মাঠে নেমেছিল। আপনি ভাবতে পারছেন? তবে অবশ্যই ও যত বেশি ম্যাচ খেলবে তত বেশি ভালো হবে। সে একটা ৬ ওভারের স্পেল করে এবং পরে ৫ ওভারের স্পেল করে, এখন -এর কারণে বেশিরভাগ বোলারই ৪ ওভারের বেশি স্পেল কী ভাবে করতে হয় জানে না। আমি আমার জীবনে এর আগে কোনও ক্রিকেটারকে এতো শক্তিশালী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে দেখিনি। ও আজ যেটা করেছে সেটা কল্পনার বাইরে।’

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed