February 11, 2025

লাল হলুদের সামনে কাজে দিল না সন্দীপ-সাবিরের ‘পেপ-টক’!‌ ৭০ মিনিট ন’জনে লড়াইয়ে স্ম্লান সাদা কালো, ডার্বিতে ড্র করল মহামেডান

0
EB vs Md sporting

ইস্টবেঙ্গল ০
মহমেডান ০

জোসেফ আদজেইয়ের অনুপস্থিতিতে রক্ষণ সামলানোর গুরুদায়িত্ব ফ্লোরেন্ট অগিয়েরের উপরে। একজন ১৯৮৩-র বিশ্বজয়ী দলের সদস্য, যা ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক সাফল্য। অন্যজন ১৯৭৪ সালে এএফসি যুব চ্যাম্পিয়নশিপে যুগ্মজয়ী দলের নেতা, যা ভারতীয় ফুটবলের শেষ আন্তর্জাতিক সাফল্য। সেই দুই কিংবদন্তি– ক্রিকেটের সন্দীপ পাটিল আর ফুটবলের সাবির আলির ‘ভোকাল টনিক’ নিয়েই শনিবার ডার্বিতে মহামেডান স্পোর্টিং। শুক্র সন্ধ্যায় নিউটাউনের টিম হোটেলে পৌঁনে এক ঘণ্টা চলা সাদা-কালো ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার পর্ব বৃথাই। কী ‘মন্ত্র’ দিয়েছিলেন দুই কিংবদন্তি? ‘‘আমরাও বিশ্বকাপে শুরুটা ভালো করতে পারিনি। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বজয় করেছি,ইএসএল সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। তোমাদেরও ভালো জায়গায় পৌঁছানোর সুযোগ আছে। অতীত নিয়ে না ভেবে সেদিকে মন দাও। আমি ক্রিকেটের লোক, ফুটবলের কোচ নই। তবে মহামেডান ফুটবলারদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পেরে ভালোই লাগল।’’ বলছিলেন সন্দীপ পাটিল।

২৯ মিনিটে জোড়া লাল কার্ড। শনিবার যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডানের মিনি ডার্বির করুন অবস্থা। রেফারি হরিশ কুন্ডুর ‘সৌজন্যে’। অতিরিক্ত সময় ধরে ৭০ মিনিট ন’জনে খেলেও এক পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের। যে ম্যাচে তাদের হার ছিল কার্যত নিশ্চিত, সাহসী ফুটবল খেলে সেখান থেকেই তারা এক পয়েন্ট সংগ্রহ করল। এ বারের আইএসএলে এটাই ইস্টবেঙ্গলের প্রথম পয়েন্ট। এই ড্র-ও জয়ের থেকে কম নয়। আইএসএলে একটানা হেরে দলের মনোবল যে ভাবে তলানিতে নেমে গিয়েছিল, সেখান থেকে এই পারফরম্যান্স গোটা দলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে আঘাত করার জন্য ২৯ মিনিটে রেফারি লাল কার্ড দেখান নন্দকুমার সেকারকে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় পরের মিনিটেই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখেন নাওরেম মহেশ। জোড়া লাল কার্ডে মাথায় হাত পড়েছিল লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজ়োর। তবে তাঁর ছেলেরা মাঠে দলের মান রাখলেন। কাজটা সহজ ছিল না। ৬০ মিনিট দশ জনে খেলতে হতই। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা অকারণে অনেকটা সময় নষ্ট করলেন বলে আরও দশ মিনিট খেলতে হল।

হারের হ্যাটট্রিকের কথা ভুলে ডার্বিতে মন দেওয়ার কথা শুনিয়ে মহামেডানের প্রাক্তন তারা সাবির আলি বলেন ‘‘১৯৭৪ সালে প্রথমে আমাদের ব্যাঙ্কক যাওয়া নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু ফেডারেশন ভরসা রেখে জানিয়েছিল, এই দল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবেই। সেখানে আমরা প্রতিটা ম্যাচেই ভালো পারফর্ম করি। খেলায় হার-জিত আছেই। ইস্টবেঙ্গলও ম্যাচ হেরেছে। সব ভুলে জয়ের উপর ফোকাস করতে হবে।’’

নিটেই দেখে বিপক্ষে ন’জন হয়ে গিয়েছে, তারা বাকি ম্যাচে যে দাপট দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক। শনিবার যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলকে ঠিক সেই অবস্থাতেই পেয়েছিল মহমেডান। তবে যে দাপট তাদের থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা দেখাতে পারেনি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় মহমেডানের ফুটবলারদের পায়েই বলের দখল ছিল বেশি। ইস্টবেঙ্গলের সব ফুটবলারই রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন। মাঝেমাঝে আক্রমণে উঠলেও মহমেডানের ফুটবলারেরা দ্রুত ঘিরে ফেলায় তা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে মহমেডানের ফুটবলারেরা যে ভাবে একের পর এক সুযোগ নষ্ট করে গেলেন তা চোখে লাগতে বাধ্য। বিরক্ত হয়ে প্রথমার্ধে আলেক্সিস গোমেজ়কে তুলেই নেন কোচ আন্দ্রেই চের্নিশভ। পরিবর্ত হিসাবে নামা সিজার মানজোকিও দাগ কাটতে পারেননি। ফুটবলারদের মান এবং মানসিকতা নিয়ে এ বার গুরুত্ব দিয়ে ভাবতেই হবে মহমেডানকে।

ম্যাচ শেষে কোচ স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময়ই দেখা গেল তাঁদের রাগের বহিঃপ্রকাশ। চেরনিশভকে দেখে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তুললেন কিছু সাদা-কালো সমর্থক। তিনি স্টেডিয়ামের বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত টানা স্লোগান দিয়ে গেলেন ওই সমর্থকরা।হামেডানের অন্যতম সেরা পারফর্মার অ্যালেক্সিস গোমেজকে হঠাৎ করে তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে চেরনিশভের জবাব, “ও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিল। তাই তুলে নিয়েছিলাম।” মহামেডান এদিন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোর স্ট্র্যাটেজির সামনে আটকে গেল বলেই মনে করছেন প্রাক্তন তারকা সাবির আলি। সেখানে ক্লাবের ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস আবার জানিয়ে গেলেন, অ্যাওয়ে ম্যাচ হিসাবে এদিন এক পয়েন্ট প্রাপ্তি একেবারেই খারাপ নয়!এদিন সাদা-কালো জার্সিতে অভিষেকেই নজর কাড়লেন গোলকিপার ভাস্কর রায়ও। ২০২১-’২২ মরশুমে রাজস্থান ইউনাইটেডের জার্সিতে আই লিগের সেরা গোলকিপার হয়েছিলেন জলপাইগুড়ির এই যুবক। সেবার এই মহামেডানের বিরুদ্ধেই নিজের শেষ ম্যাচটা খেলেছিলেন তিনি। কারণ তারপর মুম্বই সিটি এফসি-তে যোগ দিলেও একটা ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি। প্রায় আড়াই বছর পর এবার মহামেডানের জার্সিতে মাঠে ফিরে বেশ ভালোই পারফর্ম করলেন ভাস্কর।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed