ফের লজ্জার হার রোহিত-বিরাটদের! ২৪ বছর পর ঘরের মাঠে চুনকাম, সিংহাসন খোয়াল ভারত
বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল! বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। স্পিন বলের বিরুদ্ধে বিশ্বের সেরা ভারতীয় ব্যাটারেরা? সেই বেঙ্গালুরুতে ৪৬ রানে অলআউট হওয়া ভারতীয় দল ওয়াংখেড়ের ২২ গজে চতুর্থ ইনিংস ১২১ রানেই শেষ। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঘরের মাঠে ভারতীয় ব্যাটারেরা সাজঘরে ফেরার শোভাযাত্রা তৈরি করলেন। কিউইদের কাছে আড়াই দিনে ভারত তৃতীয় টেস্ট হারল ২৫ রানে। ২৪ বছর পর দেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ়ে চুনকাম হল ভারতীয় দল। ২০০০ সালে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দক্ষিণ আফ্রিকা দুই টেস্টের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল ভারতের মাটিতে। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ হারল ভারত।
ওয়াংখেড়ে রোহিত, যশস্বী, সরফরাজদের ঘরের মাঠ। প্রতিটি ঘাস তাঁদের চেনা। সেই ২২ গজে তিন জনে এমন ভাবে আউট হলেন, তা অবিশ্বাস্য। রোহিত ১১ এবং সরফরাজ ১ যশস্বী ৫ বলের লাইন মিস্ করে এলবিডব্লিউ। শুভমন ১ রানে অজাজ পটেলের বলে জাজমেন্ট দিয়ে বোল্ড। কোহলি ১ রানে ধরা পড়লেন অজাজেরই স্পিনে। ৭.১ ওভারে ভারতের স্কোর ৫ উইকেটে ২৯। পন্থ এবং রবীন্দ্র জাডেজা সেই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করলেন ভারতীয় ক্রিকেটকে। ব্যাটিং ধস। চাপের মুখে পন্থ প্রয়োজনে আগ্রাসী শট খেলেছেন। জাডেজা ২২ গজের এক দিন আগলে রেখেছিলেন। দু’ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে বেশ সাবধানি ছিলেন। জাডেজাকেও ৬ রানে আউট করলেন অজাজ। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাটিংয়ে চাপের ছাপ স্পষ্ট। পন্থের লড়াই শেষ ৬৪ রানে। অজাজের বলে ক্যাচের আবেদন। মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নেন টম লাথাম। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাট একই সঙ্গে পন্থের প্যাড এবং বলের কাছে এসেছে। আত্মবিশ্বাসী পন্থ দাবি করেন বল তাঁর ব্যাটে লাগেনি। ব্যাট এবং প্যাডের সংঘর্ষের শব্দ ধরা পড়েছে স্নিকোমিটারে। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সাজঘরে ফিরতে হয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৮, আকাশ দীপ ০, ওয়াশিংটনে ১২ রানে পরপর আউট। মুম্বইয়ের ২২ গজে আবারও বিপজ্জনক হয়ে উঠলেন অজাজ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিলেন নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় বংশোদ্ভুত স্পিনার। ৫৭ রানে ৬ উইকেট নিলেন। গ্লেন ফিলিপস ৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ১০ রানে ১ উইকেট ম্যাট হেনরির। রবি সকালে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১৭৪ রানে। ৫৫ রানে ৫ উইকেট নেন জাডেজা। ৬৩ রানে ৩ উইকেট অশ্বিনের। ১টি করে উইকেট পান আকাশ এবং ওয়াশিংটন।
শেষমেশ সত্যি হল আশঙ্কা। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের শীর্ষস্থান খোয়াল টিম ইন্ডিয়া। বর্ডার গাভাসকর ট্রফির আগেই ডব্লিউটিসি-র পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেমে যায় ভারতীয় দল। রোহিতদের পতনে বিরাট সুবিধা হল অস্ট্রেলিয়ার। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুম্বই টেস্টে পরাজিত হওয়ার পরে ভারত ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে নেমে যায়। ১৪ ম্যাচে ভারতের সংগ্রহ ৯৮ পয়েন্ট। টিম ইন্ডিয়ার পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৫৮.৩৩। যদিও ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এখনও। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ক্রমতালিকা তথা ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয় সংগৃহীত পয়েন্টের নিরিখে নয়, বরং পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার অনুযায়ী। লিগ টেবিলের প্রথম ২টি দল নিজেদের মধ্যে খেতাবি লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। ভারতকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে নিউজিল্যান্ড লিগ টেবিলের চার নম্বরে উঠে আসে। ১১ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহে রয়েছে ৭২ পয়েন্ট। কিউয়িদের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৫৪.৫৫। ভারত দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাওয়ায় লিগ টেবিলের এক নম্বরে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়া। তারা বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির আগেই মানসিকভাবে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যায় নিশ্চিত। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহে রয়েছে ১২ ম্যাচে সাকুল্যে ৯০ পয়েন্ট। অজিদের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৬২.৫০। লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। আপাতত ৯ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দখলে রয়েছে ৬০ পয়েন্ট। তাদের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৫৫.৫৬। আট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার খাতায় রয়েছে ৫২ পয়েন্ট। তাদের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৫৪.১৭। দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের পাঁচ নম্বরে। ইংল্যান্ড রয়েছে লিগ টেবিলের ছয় নম্বরে। ১৯ ম্যাচে ব্রিটিশদের খাতায় রয়েছে ৯৩ পয়েন্ট। তাদের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৪০.৭৯। পাকিস্তান রয়েছে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের ৭ নম্বরে। তারা ১০ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। পাকিস্তানের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ৩৩.৩৩। বাংলাদেশ রয়েছে লিগ টেবিলের আট নম্বরে। ১০ ম্যাচে তাদের খাতায় রয়েছে ৩৩ পয়েন্ট। বাংলাদেশের পয়েন্ট সংগ্রহের শতকরা হার ২৭.৫০। ওয়েস্ট ইন্ডিজ লিগ টেবিলের একেবারে শেষে অর্থাৎ, নয় নম্বরে অবস্থান করছে। ৯ ম্যাচে ১৮.৫২ শতাংশ হারে ২০ পয়েন্ট সংগ্রহে।