November 2, 2024

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সরছে সেনা? নিশ্চিত হতে যৌথভাবে কাজ ভারত-চিনের

0

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা LAC থেকে সরছে সেনা? নিশ্চিত হতে যৌথভাবে ‘যাচাই পর্ব’ চালাচ্ছে ভারত-চিন। ২০২২ সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে গোগরা হট স্প্রিং এলাকার প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল দুই দেশ। এরপর থেকে ভারত-চিন আলোচনা একপ্রকার থমকেই গিয়েছিল। লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা প্রত্যাহার প্রায় সম্পন্ন। ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে যেখানে যার অবস্থান ছিল, প্রায় সেখানেই ফিরে গিয়েছে ভারত ও চিনা সেনার জওয়ানরা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যে সব অস্থায়ী তাঁবু খাটানো হয়েছিল, তা খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই আবহে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া দুই পক্ষের তরফ থেকই সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতেই দুই দেশের সেনা যৌথ ভাবে সেই এলাকায় ‘ভেরিফিকেশন’ করছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে জওয়ানদের পাঠানোর পাশাপাশি এই ভেরিফিকেশনে ড্রোনেরও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অর্থাৎ এলএসি সমস্যার পুরোপুরি সমাধানে ভারত এবং চিনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাল আমেরিকা। জো বাইডেন সরকার মনে করে, সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত ভারত-চিন সীমান্তে ‘উত্তেজনা হ্রাস’ করবে। তবে আমেরিকা এ-ও স্পষ্ট করে, এই বিষয়ে তারা কোনও ভূমিকা পালন করেনি। আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারত-চিন সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ের দিকে ওয়াশিংটন নজর রাখছে। ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের ‘উত্তেজনা হ্রাসে’র ব্যাপারে তাঁরা কোনও ভূমিকা নেননি।

লাদাখে সেনা অবস্থান নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় পৌঁছেছে ভারত এবং চিন। চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থা কেটেছে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই দেপসাং, ডেমচক এলাকা থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই চার বছরে যে সব অস্থায়ী সেনা ছাউনি তৈরি হয়েছিল, তা-ও সরিয়ে ফেলা হবে। আগের মতোই দু’দেশের সেনাই টহল দেবে সীমান্তে। ‘টহলদারি সীমানা’ নিয়ে যাতে কোনও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়, নজর থাকবে সে দিকেও। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, সেনা প্রত্যাহারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মঙ্গলবার চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানিয়েছেন, সেনা প্রত্যাহারের কাজ ‘মসৃণ ভাবে’ চলছে।

দু’দেশের সেনা সরানোর প্রক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে। আমেরিকার ম্যাক্সার টেকনোলজির নেওয়া উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট, ডেপসাং ও ডেমচক এলাকায় বিভিন্ন অস্থায়ী সেনা ছাউনি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এলএসি পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গলওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা।

২০২২ সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে গোগরা হট স্প্রিং এলাকার প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল দুই দেশ। এরপর থেকে অবশ্য ভারত-চিন আলোচনা একপ্রকার থমকেই গিয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ঘোষণা করে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের টহলের অধিকার মেনে নিয়েছে চিন। এই আবহে প্রায় পাঁচ বছর পরে লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে জট কেটেছে। কয়েক বছর ধরেই ডেপস্যাং এবং ডেমচকে ভারতীয় সেনাকে টহলে বাধা দিচ্ছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। তবে রিপোর্টে দাবি করা হয়, এই দুই জায়গায় ভারতীয় সেনার টহলদারির অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই। রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ডেমচকে এর আগে চিন তাঁবু খাটিয়ে বসেছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় দিকে। তবে সেই সমস্যা কিছু দিন আগেই মিটেছে। তবে এরই মধ্যে ডেপস্যাঙের সমস্যারও সমাধাম সূত্র বেরিয়ে আসে সামরিক পর্যায়ের আলোচনায়। উল্লেখ্য, এই ডেপস্যাঙের ওয়াই জংশনে স্থায়ী স্থাপত্য গড়েছে চিনা সেনা। এই ওয়াই জংশন হয়েই প্যাট্রলিং পয়েন্ট ১১, ১১এ, ১২ এবং ১৩-তে যেতে হয় ভারতীয় সেনাকে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থাতেই ফিরছে ডেপস্যাং এবং ডেমচক। এই আবহে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। এর ফলে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের চিড় কিছুটা মিটতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সরানো এবং টহলদারি নিয়ে নয়াদিল্লি এবং বেজিং যে ঐক্যমতে পৌঁছেছে, সেটার মানেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়নি এখনও।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed