‘ক্ষমার প্রশ্ন নেই’ তন্ময়কে সাসপেন্ড করল সিপিএম, মহিলা সাংবাদিকের ‘কোলে বসে পড়া’ ‘ইয়ার্কি তো’, সাফাই সিপিআইএম নেতা তন্ময়ের

মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। রবিবার সন্ধ্যায় ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি এ-ও জানান, তন্ময়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হবে দলে। যত দিন তদন্ত হবে, তত দিন সাসপেন্ড থাকবেন তন্ময়। পরে সেই তদন্ত কমিটি যে প্রস্তাব দেবে, সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান সেলিম। ঠিক তার পরেই সিপিএম বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেয়, তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তন্ময়ের বিরুদ্ধে বরাহনগর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই মহিলা সাংবাদিক। তার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার এক পুলিশ আধিকারিক।
সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা করার অভিযোগ মহিলা সাংবাদিকের। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে হেনস্থার ঘটনার বিবরণ দেন ওই মহিলা সাংবাদিক। ঘটনায় রাজ্য–রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। ফেসবুক লাইভে ওই সাংবাদিক অভিযোগ করেন, সকালে তিনি তন্ময় ভট্টাচার্যের বাড়ি যান সাক্ষাৎকার নিতে। তখন সিপিএম নেতা তাঁর কোলে বসে পড়েন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফফর আহমেদ ভবনে পদক্ষেপ। মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেন, আগেও নানাভাবে তন্ময় ভট্টাচার্য তাঁর সঙ্গে ‘কুৎসিত’ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আজ, রবিবার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন সিপিএম নেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘চার বছর সাংবাদিকতা করছি। কিন্তু এত খারাপ অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। আসলে পোটেনশিয়াল রেপিস্ট এরাই। এদের চিনে রাখা দরকার। আমি বিষয়টাকে কোনওভাবে কন্ট্রোল করে ইন্টারভিউ নিই। কারণ এটাই আমার কাজ। মানসিকভাবে এত ইরিটেশন হচ্ছিল যে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারব না।’
গোটা বিষয়টি ইয়ার্কি বলে চালাতে চেয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতা বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে ইয়ার্কি করে থাকি। আগে ওই মেয়েটি অন্তত দশবার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ওর সঙ্গে আমি আগেও ইয়ার্কি করেছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ কী হল আমি জানি না। একটা বাচ্চা মেয়ে। ওকে আমি মা বলে ডাকি। ও একথা বলবে ভাবতে পারছি না।’ পাল্টা ফেসবুক লাইভে মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেন, ‘ইন্টারভিউ নেওয়ার আগে যখন উনি আমার কোলে বসে পড়েন তখন আমি তখনই বলি, এরকম করবেন না। আমি পছন্দ করি না। আপনি ইয়ার্কি করেছেন আমি মানছি। কিন্তু এসব আমার সঙ্গে করবেন না। তাও তিনি আমার কোলে বসে পড়েন। ক্যামেরা যদি তখন অন থাকত তাহলে কি ভাল হত?’
তন্ময় ছিলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি। ঘটনাচক্রে যে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ব্যক্তিগত ভাবে তন্ময় ছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী। বেশ কয়েক বছর হল তিনি অবসর নিয়েছেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত উত্তর দমদমের বিধায়ক ছিলেন তন্ময়। পরাস্ত করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। তবে ২০২১ সালে চন্দ্রিমার কাছেই পরাজিত হন তন্ময়। সম্প্রতি বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েও তন্ময় হেরেছিলেন। অতীতে কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্য, দলের নির্দেশ অমান্য করে কংগ্রেসের মিছিলে চলে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে দলের মধ্যে তন্ময়কে নিয়ে বিতর্ক ছিল। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার গোষ্ঠী রাজনীতিতেও তন্ময় অন্যতম একটি নাম।