‘দানা’র প্রভাব বাংলায় পড়ল না! আশঙ্কা থাকলেও প্রস্তুতি ছিল, নবান্নে অতন্দ্র প্রহরী মুখ্যমন্ত্রী, কর্পোরেশনে ফিরহাদ, বিদ্যুৎ ভবনে অরূপ রাতজাগা
আশঙ্কা থাকলেও এই রাজ্যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি ‘দানা’। এমনকি রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির হয়নি। মৌসম ভবনের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, ভোর সাড়ে ৫টা নাগার ঘূর্ণিঝড় দানার বাইরের অংশটি ওড়িশর ধামরার ২০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তরপশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং সেটি ভিতরকণিকার ৪০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তরপশ্চিমে অবস্থন করছিল। গত কয়েক ঘণ্টায় এই ঘূর্ণিঝড় ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার বেগে এগিয়ে গিয়েছে ভূভাগের দিকে। সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানার ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া সম্পন্ন। অর্থাৎ, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির বাইরের অংশও পুরোপুরি ভূভাগে প্রবেশ করে যাবে। এরপর সেই ঘূর্ণিঝড় ক্রমেই শক্তি হারিয়ে ওড়িশার পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসরমান।স্থলভাগে ঢুকেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র ‘লেজের অংশ’। মৌসম ভবনের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, এই ঘূর্ণিঝড়ের কোনও ‘চোখ’ থাকবে না। সমুদ্রের উপর থেকে ঘূর্ণিঝড় ঘুরতে ঘুরতে যখন স্থলভাগের দিকে এগোয়, তখন তার কেন্দ্রে একটি আপাত শান্ত অঞ্চল তৈরি হয়। সেখানে হাওয়ার বেগ তুলনামূলক কম থাকে। ‘ল্যান্ডফলের’ সময় ঝড়ের ওই কেন্দ্র যখন স্থলভাগে প্রবেশ করে, তখন ঘূর্ণিঝড়ের দাপট হয় সবচেয়ে বেশি। আবহবিদদের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই ‘চোখ’ তৈরি হয় না ঘূর্ণিঝড়ের। অন্য দিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ‘লেজ’ বলতে বোঝায় ঘূর্ণিঝড়ের শেষের অংশ। এই অংশটি পুরোপুরি স্থলভাগে ঢুকতেই ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া শেষ। দুর্বল হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ওড়িশার ১৬টি জেলায় হড়পা বান আসতে পারে। ওড়িশার ধামরায় রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। উপড়ে গিয়েছে গাছ। বর্তমানে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ সহ পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব দিকের বাইরের অংশটি দক্ষিণবঙ্গের ওপর দিয়ে যাওয়ায় কলকাতা সহ গাঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গ এবং বিশেষ করে উপকূলীয় পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে ভোররাত থেকেই। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনায় কমলা সতর্কতা জারি আছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে জারি লাল সতর্কতা। পশ্চিমের ঝাড়গ্রামে জারি লাল সতর্কতা, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় জারি কমলা সতর্কতা। ঘূর্ণিঝড় দানা যদি, স্থলভাগে প্রবেশ করে পূর্বভাস অনুযায়ী, পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে ঝাড়খণ্ড সহ পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের জেলাগুলিতেও। সতর্কতা জারি করা হয়েছে এই সব জেলায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মাইথনে ৬ মিলিমিটার এবং পাঞ্চেতে ৫.৪ মিলিমিটারই বৃষ্টি হয়েছে। তবে আজ ঘূর্ণিঝড়ের জেরে পূর্ব বরাকর এবং পূর্ব দামোদর উপত্যকায় ৫০ মিলিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝড়বৃষ্টি চলছে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রামে শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ল্যান্ডফলের প্রভাব শহর কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাতেও। শহরে নজরদারি। নবান্নে খোলা কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন এবং বিদ্যুৎ ভবনেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সারারাত নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবও ছিলেন। কর্পোরেশনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও বিদ্যুৎ ভবনে থাকবেন অরূপ বিশ্বাসও। নবান্নে বসে নিজেই ডানার গতি প্রকৃতির দিকে নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুরসভায় খোলা কন্ট্রোল রুমে মনিটরিং লালবাজারের সাহায্য। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার যে সমস্ত রাস্তায় জল জমার আশঙ্কা সেই সমস্ত রাস্তার ছবি চলছে সিসিটিভি ফুটেজে। পাশাপাশি, গাছ ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা থাকে। সেই দিকেও ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে। ঝড়ের সময় কারেন্ট গেলেও যাতে ঝড় থেমে গেলে বেশিক্ষণ সমস্যা না থাকে সে কারণে নজর বিদ্যুৎ ভবন থেকে। নবান্নে দুটি হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২২১৪-৩৫২৬ এবং ১০৭০। নবান্নতেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে ভয়ে না থেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আতঙ্কে থাকবেন না, কোনও গুজবেও কান দেবেন না। সতর্ক থাকুন।