গবেষণাপত্র ‘অভয়া’কে উৎসর্গ ডাক্তারি পড়ুয়াদের! ‘আমি আমার গবেষণাপত্র শেষ করলাম, তিলোত্তমা পারল না…’ আরজি করের নিগৃহীতাকে থিসিস উৎসর্গ জুনিয়র ডাক্তারের
ভুলিনি, ভুলছি না…। জুনিয়র চিকিৎসকদের এহেন মৌন প্রতিবাদে খুশি সিনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা তাঁদের উত্তরসূরিদের এই মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নিগৃহীতা, নিহত চিকিৎসক পড়ুয়াকে তাঁদের গবেষণাপত্র উৎসর্গ করলেন অন্তত ১২ জন জুনিয়র চিকিৎসক। আর জি করের নির্যাতিতা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার বেঁচে থাকলে এবার চেস্ট মেডিসিনে এমডি চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দিতেন। থিসিস পেপার তৈরি করেছিলেন। ‘অভয়া’র মতো কয়েক হাজার পিজিটিও গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন। সেগুলি তাঁদের বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমাও দিতে শুরু করেছেন। এবার সেই নির্যাতিতাকে স্মরণ করে দেশের অন্তত এক ডজন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পিজিটি তাঁদের গবেষণাপত্র ‘অভয়া’র নামে উৎসর্গ করলেন। স্বাধীন ভারতে জুনিয়র চিকিৎসকদের এমন পদক্ষেপে আপ্লুত সিনিয়র চিকিৎসকরা।
আগস্টেরই এক রাত। এক নির্মম ও পৈশাচিক ঘটনার শিকার না হতে হলে আরজি করের নির্যাতিতাও তাঁর তৈরি করা গবেষণাপত্র জমা দিতেন। কিন্তু, নিষ্ঠুর নিয়তি তাঁকে তাঁর সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে দেয়নি। চেস্ট মেডিসিন বিভাগের ওই তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়া তাঁর গবেষণাপত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন। এমনও অভিযোগ উঠেছিল যে, তৎকালীন কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সেই গবেষণাপত্র জমা করা নিয়েও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেই নিগৃহীতাকে সম্মান জানিয়ে নিজেদের গবেষণাপত্র তাঁকে উৎসর্গ করলেন অন্তত ১২ জন চিকিৎসক পড়ুয়া।
দুই জুনিয়র চিকিৎসকের একজন হলেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস-এর জুনিয়র চিকিৎসক। এবং অন্যজন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্য়ান্ড পাবলিক হেল্থ-এর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের পিজিটি। তাঁরা দু’জনই তাঁদের পোস্ট ডক্টোরাল থিসিস বা গবেষণাপত্র আরজি করের নিগৃহীতাকে উৎসর্গ করেছেন। প্রথম জন দেবরূপ দাস সম্প্রতি তাঁর গবেষণাপত্রটি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সার্ভিসেস-এ জমা করেছেন। তাঁর গবেষণাপত্রের কভার পেজে লেখা রয়েছে, ‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের পিজিটি, অভয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্য়ে উৎসর্গীকৃত। তাঁর আত্মার শান্তি এবং তাঁর জন্য সুবিচার কামনা করি।’অন্য পিজিটি, রুমেলিকা কুমার তাঁর তৈরি করা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘আমি আমার গবেষণাপত্র শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু, তিলোত্তমা পারেনি।’
একাধিক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তত ১২ জন চিকিৎসক পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসক এভাবেই তাঁদের গবেষণাপত্র আরজি করের নিগৃহীতাকে উৎসর্গ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা এবং এই নারকীয় অপরাধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের এহেন মৌন প্রতিবাদে খুশি সিনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা তাঁদের উত্তরসূরিদের এই মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে।