February 17, 2025

জুনিয়র ডাক্তারদের সর্বাঙ্গীণ ধর্মঘটের ডাক, রাজ্য সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেন,সাধারনের রক্ষাকবচ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড

0
Lal bazar

জুনিয়র ডাক্তাররা প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাঁচটি দাবি করেছিলেন। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার পর এখন ১০ দফা দাবি নিয়ে আমরণ অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে আগামী সোমবারের মধ্যে দাবিপূরণ না হলে পরেরদিন মঙ্গলবার থেকে সর্বাঙ্গীণ ধর্মঘটের ডাক দিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। এই ধর্মঘটের আওতায় থাকবে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই কথা জানান জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার।

আরজি কর হাসপাতালের জন্যও বিশেষ কাজ চলছে। সেটা আরও আগে শেষ করতে হবে। রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ‘রাত্রিরের সাথী’ অথবা নিরাপত্তার কাজ, রেস্টরুমের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর তারিখের মধ্যে। আরজি কর হাসপাতালের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় ৩১ অক্টোবর তারিখের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‌জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্সদের সংগঠনগুলির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, একটা সমাবেশ হোক। সেখান থেকে আমাদের চিৎকার মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছানো দরকার। সোমবার অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি।

পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার কাজ কেমন হচ্ছে?‌ কতদূর হয়েছে?‌ এইসব প্রশ্নের উত্তর গতকাল নিজের বাসভবনে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তার জবাব দেন মুখ্যসচিব। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজের গতি বাড়াতে নির্দেশ দেন। তাই আজ বৈঠক হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাদের দাবি না মানেন তবে মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের সব দাবি মানার জন্য আলোচনায় বসতে হবে। সব কটি দাবি মেনে নিতে হবে। যদি তা নয় তবে আগামী মঙ্গলবার সমস্ত সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সর্বাধিক ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। দেবাশিস হালদারের বক্তব্য, ‘‌এই কর্মসূচির সময় কারও প্রাণহানি হলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। গত ১৩ দিন ধরে আমাদের সহকর্মীরা অনশন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত। এখন মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে দরকার ছিল। এরপরও যদি কোনও ইতিবাচক উত্তর আমাদের কাছে না আসে তাহলে মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট হবে।’‌

দু’‌মাসের বেশি সময় ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন কর্মবিরতির জেরে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। যাঁরা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসছেন। আর চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মারাও গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এখন ধর্মতলায় আমরণ অনশন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের। ফলে চরম অচলাবস্থা চলছে সরকারি হাসপাতালে বলে অভিযোগ। তাই ভরসা রাখতে হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে। আর সেখানে দেদার ব্যবহার হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে চিকিৎসা না পেয়ে রাজ্যের গরিব সাধারণ মানুষ দেদার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করার ফলে একলাফে বিপুল খরচ বেড়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারের। পরিসংখ্যান বলছে, ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে খরচ হয়েছে রাজ্য সরকারের প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটেছেন। নবান্ন সূত্রে খবর, এই পরিসংখ্যান অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রত্যেকদিন গড়ে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা করে বেশি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জেরেই চিকিৎসা পাচ্ছেন বাংলার সাধারণ মানুষ। ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেকদিন গড়ে ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প খাতে খরচ করেছে রাজ্য সরকার। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের খরচ সমীক্ষা করতেই রাজ্যের হাতে উঠে এল এই বিশাল তথ্য। এবার সেটাই মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে। এই পরিসংখ্যান বেশ চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মধ্যে বলে সূত্রের খবর।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed