অনশনের ২০০ ঘণ্টা পার!‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ? আমরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাই”
মুখ্যমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ? আমরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাই। এত দিন হয়ে গেল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনও কথা শুনতে পাচ্ছি না। আমরা শুনতে পাচ্ছি মুখ্যসচিবের থেকে একটা মেল, কোনও ছুটকো-ছাটকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া।’’ সিবিআইকে চাপে রাখতে রাজভবন অভিযানের প্রস্তুতি জুনিয়র ডাক্তারদের, অপেক্ষা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার জন্যও।
প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অনিকেত মাহাতোরা। এমন অবস্থাতেও দুই পক্ষই অনড়। তাই মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন বাংলার কিছু বিদ্বজনেরা। আবেদন মানলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তাঁদের কোনও মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। আরজি কর নিয়ে অন্যতম আন্দোলনকারী দেবাশিস হালদার জানিয়ে দেন তাঁরা মধ্যস্থতা চাইছেন না। ধর্মতলা থেকে তিনি এদিন সাফ সাফ জানিয়ে দেন, ‘ বিশিষ্টজনেরা আমাদের পাশে আছে জেনে আমাদের খুব ভালো লাগছে। তাঁরা আমাদের এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে যাঁরা অনশন করছেন তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিন দিন। সেই বিষয়েই তাঁরা উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁরা বলছেন আমরা যেন অনশন তুলে নিই। কিন্তু আমরা বলতে চাই যাঁরা এত বড় আন্দোলনে নেমেছেন তাঁদের মনোবল এত দুর্বল নয়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও আমরা এই লড়াই থেকে সরে আসব না কখনও।’
অপর্ণা সেনরা তাঁদের সই করা চিঠি ইমেল করে পাঠান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টকে। লেখেন, ‘অনশনরত চিকিৎসক বন্ধুদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, নাগরিক সমাজের সক্রিয়তার উপর আস্থা রেখে, আপনারা অনশন প্রত্যাহার করুন।’ রাজ্য সরকারের প্রতি বিদ্বজ্জনদের বক্তব্য, ‘অনশনরত চিকিৎসকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনুন। আর তাঁদের দাবিপূরণ করার জন্য সততার সঙ্গে সচেষ্ট হন।’
প্রসঙ্গত রবিবার জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন মঞ্চ থেকে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তাঁরা আপত্তি জানিয়েছেন আরজি কর ঘটনার সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিট নিয়ে। কেবল মাত্র সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সোমবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
এ বার অসুস্থ জুনিয়র ডাক্তার তনয়া পাঁজা। তবুও অনশনমঞ্চ ছাড়তে নারাজ তিনি। ঘন ঘন মাথা ঘুরছে তনয়ার। উঠে বসার চেষ্টা করলে তো মাথা ঘুরছেই, শুয়ে থাকলেও তা-ই হচ্ছে। অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই দুর্বল। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ অনশনকারীদের যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তনয়ার রক্তচাপ কমে হয়েছে ৯৮/৭০। নাড়ির গতি ৭৮ এবং ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ (সিবিজি) ৬৩। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সিবিজি ৬০-এর নীচে নেমে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কিডনিও বিকল হয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি (নাক, কান, গলা সংক্রান্ত) বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট তনয়াকে নিয়ে। জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘তনয়ার শরীরটা খারাপ। মাথা ঘুরছে। আমাদের মেডিক্যাল টিম ওঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। অন্যদের শরীরের অবস্থাও খারাপ।’’ অনিকেত মাহাতো, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়ের পর রবিবার রাতে ধর্মতলার মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য। ভর্তি করানো হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (এনআরএস)। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন।
অনশনমঞ্চে শূন্যস্থান পূরণ করতে অন্য জুনিয়র ডাক্তারেরা এগিয়ে আসছেন। সোমবার থেকে শিলিগুড়িতে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেছেন জুনিয়র ডাক্তার সন্দীপ মণ্ডল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের নাক-কান-গলা বিভাগের পিজিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সোমবার সকাল থেকে সন্দীপ অনশনে বসায় এই মুহূর্তে কলকাতা ও শিলিগুড়ি মিলিয়ে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল আট জন। অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন স্নিগ্ধা হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, তনয়া পাঁজা। তনয়াও সোমবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১১ অক্টোবর থেকে আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার আলোলিকা ঘোড়ুই এবং পরিচয় পণ্ডাও যোগ দিয়েছেন অনশনে।