November 2, 2024

রনজির শুরুতেই দুর্বল বঙ্গ ব্রিগেড!‌ অভিমন্যু, আকাশ, মুকেশেরা ভারতীয় দলে?‌

0

আকাশ এবং মুকেশের পেস আক্রমণে রঞ্জিতে ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করছিল বাংলা। ব্যাট হাতে ভরসার নাম অভিমন্যু ঈশ্বরণ। আকাশদীপ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেছেন। আগামী দিনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ডাক পেতে পারেন। আকাশদীপকে প্রথম ম্যাচে বাংলা না-ও পেতে পারে। মুকেশ কুমারও ভারতীয় দলে ডাক পাবেন। বাংলার পেস আক্রমণের সেরা দুই অস্ত্রকে পাওয়া যাবে না রঞ্জি ট্রফিতে। ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরণও ডাক পেতে পারেন ভারতীয় দলে।

রঞ্জিতে ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করছিল বাংলা। ট্রফি জিততে না পারলেও ফাইনাল এবং সেমিফাইনাল খেলেছিল। গত মরসুমে যদিও নক আউট পর্বে উঠতে পারেনি বাংলা। গত মরসুমে আকাশ এবং মুকেশকে সব ম্যাচে পাওয়া যায়নি। আকাশ গত মরসুমে রঞ্জিতে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছিলেন। মুকেশ খেলেছিলেন একটি ম্যাচ। দু’জনেই ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন।

আকাশদের ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া নিয়ে গর্বিত কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা বলেন, “আমার দলের ছেলেরা যদি ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পায়, তা হলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না। এটা তো বাংলার জন্য গর্বের। আমি চাই আকাশ, মুকেশ, অভিমন্যুরা ভারতীয় দলের জার্সিতে ভাল খেলুক। তাতে আমাদের বাংলার নাম উজ্জ্বল হবে। সমস্যার বিষয়। কিন্তু এটাকে সমস্যা হিসাবে দেখা উচিত নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেই তো ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যায়। আর সেটাই সুযোগ করে দেয় তরুণদের। এক জন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ভারতীয় দলে যাওয়া মানে, এক জন তরুণ সেই জায়গায় ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাবে।”

বাংলার পেস আক্রমণ কারা সামলাবেন। অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার বললেন, “সূরয সিন্ধু জয়সওয়াল রয়েছে, মহম্মদ কইফ রয়েছে। সেই সঙ্গে ঋষভ বিবেক এবং যুধাজিৎ গুহ রয়েছে। মুকেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে। সেই সঙ্গে বাকিদের তৈরি করতে হবে। ওদের কাছে তো এটাই তৈরি হওয়ার সেরা সুযোগ।” ভারতীয় পিচ সাধারণত পেস সহায়ক নয়। কিন্তু সেই পিচেই উইকেট তুলেছেন আকাশ এবং মুকেশ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আকাশ ৩৪টি ম্যাচে নিয়েছেন ১২১টি উইকেট। তাঁর সতীর্থ মুকেশ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৭টি ম্যাচে ১৮৬টি উইকেট নিয়েছেন। মহম্মদ শামি এবং অশোক দিন্দার জুটির পর বাংলা পেয়ে গিয়েছিল আকাশ-মুকেশের জুটি। পাটা পিচেও উইকেট নিতে পারেন তাঁরা। তেমনই বোলার খুঁজে নিতে চাইবে বাংলা।

এ বারের রঞ্জিতে বাংলার লক্ষ্য থাকবে এ বারে আকাশ, মুকেশের পরিবর্ত খুঁজে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে বাংলার ভরসা হতে পারেন সূরয এবং কইফ। গত মরসুমে তাঁরাই ছিলেন বাংলার প্রধান পেসার। সূরয ৬ ম্যাচে নেন ৩১টি উইকেট। মহম্মদ শামির ভাই কইফ ৬ ম্যাচে নেন ১৭টি উইকেট। গত মরসুমে দু’জনের রঞ্জিতে অভিষেক হয়েছিল। এই মরসুমে মুকেশের সঙ্গে থেকে দায়িত্ব নিতে হবে কইফদের। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা যুধাজিতের কাছে সুযোগ বাংলার হয়ে খেলে নিজেকে প্রমাণ করার।

বাংলার পেস আক্রমণে ঈশান পোড়েল প্রথম দলে নেই। লক্ষ্মী বলেন, “ঈশানের চোট রয়েছে। ওকে প্রথম দু’টি ম্যাচে পাওয়া যাবে না। তবে ও দলের সঙ্গে অনুশীলন করছে। আশা করছি তৃতীয় ম্যাচ থেকে পাব ঈশানকে।” চন্দননগরের ঈশান ফিরলে অভিজ্ঞতা বাড়বে বাংলা দলে তবে গত মরসুমে ছন্দে ছিলেন তিনি। ৪ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। যদিও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৪ ম্যাচে ১১৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলা চাইবে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।

অনিশ্চিত অভিমন্যুও। গত মরসুমে তাঁকে রঞ্জিতে সব ম্যাচে পাওয়া যায়নি। তিনি ভারত এ দলের হয়ে খেলতে ব্যস্ত ছিলেন। ফিরেছিলেন রঞ্জির গ্রুপ পর্বের ষষ্ঠ ম্যাচে। খেলেছিলেন দু’টি ম্যাচ। তাতেই ৩৩৭ রান করে গত মরসুমে বাংলার হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তৃতীয় স্থানে শেষ করেন। গত মরসুমে তরুণ সৌরভ পাল পাঁচটি ম্যাচ খেলেছিলেন। মোট সংগ্রহ ১৮৮ রান। একটি মাত্র অর্ধশতরান। প্রথম ম্যাচে ৯৬ রান করে নজর কেড়েছিলেন। ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি। এ বারে সৌরভকে প্রথম দু’টি ম্যাচে দলে রাখা হয়নি। সৌরভের সঙ্গে গত মরসুমে অভিষেক হয়েছিল শ্রেয়াংস ঘোষের। পাঁচটি ম্যাচ খেলানো হয়েছিল তাঁকে। সর্বোচ্চ ৪১ রান। পাঁচটি ম্যাচে মোট সংগ্রহ ১২৬ রান। তাঁকেও এ বারের দলে রাখা হয়নি। গত মরসুমে অভিমন্যু ফেরার পর তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধেন রণজ্যোৎ খয়রা এবং হাবিব গান্ধী। তাঁরা কেউই রান করতে পারেননি।

বাঁহাতি সুদীপ বাংলার হয়ে খেলছেন ২০১০ থেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন ২০১২ থেকে। ৭৭টি ম্যাচ খেলেছেন। অভিজ্ঞ সুদীপকে বেশির ভাগ সময় খেলতে দেখা যেত তিন নম্বরে। ত্রিপুরার হয়েও মিডল অর্ডারে খেলতেন। বাংলার হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করেন সুদীপ ঘরামি। ত্রিপুরা ছেড়ে বাংলায় ফিরে তাই সুদীপ চট্টোপাধ্যায় খেলবেন ওপেনার হিসাবে। বাংলা ভরসা রাখছে তাঁর অভিজ্ঞতার উপর। ২০২২ সালে বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় চলে গিয়েছিলেন সুদীপ। ৩২ বছর বয়স তাঁর। এই মরসুমে বাংলায় ফিরেছেন। রঞ্জিতে অভিমন্যুর সঙ্গে জুটি গড়বেন। লক্ষ্মী বললেন, “সুদীপের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ও ওপেন করবে। অভিমন্যুর সঙ্গে বাঁহাতি-ডানহাতি জুটি তৈরি করা যাবে। সেই সঙ্গে শুভম দে রয়েছে দলে। ও তৃতীয় ওপেনার।”

বাংলা ছেড়ে যাওয়া ঋদ্ধিমান সাহাও দলে ফিরেছেন। রঞ্জিতে খেললে বাংলার মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞতা বাড়বে বলে মনে করছেন কোচ এবং অধিনায়ক। লক্ষ্মী বললেন, “ঋদ্ধি দলে আসায় মিডল অর্ডারের শক্তি বাড়বে। অভিষেক পোড়েল দলে থাকলে ঋদ্ধি খেলবে ব্যাটার হিসাবে। ঋদ্ধির অভিজ্ঞতা দলের সম্পদ।”
অধিনায়ক অনুষ্টুপের নতুন ইনিংস শুরু হবে এই রঞ্জিতে। বাংলাকে সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথম বারের জন্য রঞ্জিতে নেতৃত্ব দেবেন দলকে। গত কয়েকটি মরসুমে অনুষ্টুপের ব্যাটে ধারাবাহিক ভাবে রান এসেছে। বাংলার মিডল অর্ডার দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর কাঁধেই। অনুষ্টুপ বলেন, “আমি চাপ নিয়ে খেলতে ভালবাসি। নতুন দায়িত্ব এ বার কাঁধে। আগে শুধু নিজের খেলা নিয়ে ভাবলেই হত, এখন আমার দায়িত্ব সকলের মধ্যে থেকে সেরাটা বার করে আনা। সেটাই আমার প্রধান লক্ষ্য।”

প্রথম দুই ম্যাচের বাংলা দল

অনুষ্টুপ মজুমদার (অধিনায়ক), ঋদ্ধিমান সাহা (উইকেটকিপার), অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ কুমার ঘরামি, শাহবাজ আমেদ, অভিষেক পোড়েল (উইকেটকিপার), ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, অভিলীন ঘোষ, শুভম দে, আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার, সূরয সিন্ধু জয়সওয়াল, মহম্মদ কাইফ, প্রদীপ্ত প্রামাণিক, আমির গনি, যুধাজিৎ গুহ, রোহিত কুমার ও ঋষভ বিবেক।

বাংলার রঞ্জি সূচি

উত্তরপ্রদেশ (লখনউ, ১১ অক্টোবর), বিহার (কলকাতা, ১৮ অক্টোবর), কেরল (কলকাতা, ২৬ অক্টোবর), কর্নাটক (বেঙ্গালুরু, ৬ নভেম্বর), মধ্যপ্রদেশ (ইনদওর, ১৩ নভেম্বর), হরিয়ানা (কলকাতা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫) এবং পঞ্জাব (কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি)

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed