দুর্গাপুজোর মণ্ডপে ‘বিচার’ চেয়ে লিফলেট বিলি, চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে দিতে কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে পরিক্রমা
আমরণ অনশন ধর্মতলায়। আন্দোলন থেকে সরছেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। নতুন নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বৃদ্ধি করতে চাইছেন। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে নামা জুনিয়র ডাক্তারেরা।
বুধ সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নির্যাতিতার স্মরণে রক্তদান শিবির। দুর্গাপুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে বিলি হবে চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকবে আরজি কর এবং জয়নগরের নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি। ষষ্ঠীতে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে পরিক্রমা করবেন। মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে দেবেন দাবির বার্তা। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকদের গণইস্তফা আমাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তারেরাও ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। তাঁরাও গণইস্তফা দিতে পারেন। বড়দের এই পদক্ষেপ আমাদের সাহস জোগাচ্ছে। আমাদের আন্দোলনে পাশে দাঁড়াতেই আমাদের সিনিয়েরা গণইস্তফার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু, আমরা শুনছি, তার পর থেকেই তাঁদের উপর প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি সত্যি তেমন কিছু হয় তবে আমাদের আন্দোলন তীব্রতর হবে।’’
এদিকে, আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্টকে ‘ক্লিনচিট’ দিল সিবিআই। সোমবার শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সিবিআই যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ক্ষেত্রে কোনও কারচুপির কথা বলা হয়নি। সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিটে বলা হয়েছে, কল্যাণী এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিলজি’-র বিভাগীয় প্রধান বলেছেন, ইনকোয়েস্ট প্রক্রিয়া এবং পোস্ট-মর্টেমের ভিডিয়োগ্রাফির সঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দশমী পর্যন্ত ধর্নায় নির্যাতিতার মা-বাবা। প্রতীকী মূর্তি নিয়ে বেরোবেন জুনিয়ররা। একেবারে সাদামাটা একটা মঞ্চ। সেখানে লেখা স্মৃতিভারে মোরা পড়ে আছি, ভারমুক্ত, সে এখানে নেই- শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ।
গত বছরেও পুজোটা এমন ছিল না। কিন্তু এবছর যেন সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। অন্যান্যদিনের মতো ডিউটিতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। কিন্তু আর ফিরে আসা হয়নি। সেই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল আরজি করের সেমিনার রুমে একেবারে ভয়াবহ কাণ্ড।
মৃতা চিকিৎসকের উদ্যোগেই প্রতিবার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। কিন্তু এবার আনন্দ উৎসব থেকে অনেক দূরে পরিবার। এবার বাড়ির কাছে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। সেখানেই বসবেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা, বাবা সহ পরিবারের অন্যরা। প্রতিবার এই সময়টা বাড়ি একেবারে গমগম করত। কিন্তু এবার আর সেই ছবিটা নেই।
এবারের পুজো গোটা বাংলা জুড়েই অন্যরকম। নির্যাতিতার বাবা মা জানিয়েছেন, মেয়ের উদ্যোগেই বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। আর হয়তো কোনওদিন বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে না। কিন্তু এই উৎসবের কয়েকটা দিন বাড়িতে থাকতে দমবন্ধ লাগছে। বার বার মেয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেকারণে বাড়িতে থাকতে ভালো লাগছে না। মেয়ের ন্যায় বিচারের জন্য বাড়ির সামনেই ধর্নায় বসে পড়লেন নির্যাতিতার বাবা মা।