‘অনশন অস্ত্রের’ মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কাঁধে স্টেথোস্কোপের বদলে তুলে নিলেন চৌকি! উৎসবের রাজপথে চিকিৎসকদের শিরদাঁড়ার জোরের কাছে হার কলকাতা পুলিশের
অদ্ভূত এক ছবি দেখল কলকাতা। বউবাজার থানা থেকে ধর্মতলা। বউবাজার থানায় চৌকি, টেবিল, চেয়ার আটকে দিয়েছিল পুলিশ। এরপর বউবাজার থানার সামনে বিক্ষোভ জুনিয়র চিকিৎসকদের। ঠিক সন্ধ্যা সাতটা। দীর্ঘ টানাপোড়েন। রাত ১০টা নাগাদ জুনিয়র চিকিৎসকরা বউবাজার থানা থেকে ধর্নামঞ্চ পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে চৌকি বয়ে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের জেদের কাছে হার মানল পুলিশ। জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু আমরাও দেখিয়ে দিয়েছি ভ্যান আটকালেও আমরা ঘাড়ে করে চৌকি বয়ে নিয়ে যাব। পথচলতি মানুষও জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে থাকেন।
আটটি চৌকি কাঁধে চিকিৎসকদের শুরু হয় হাঁটা। অনেকটা রাস্তা। তাতে কি! চিকিৎসকরাই কিছুদিন আগে তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অফিসে শিরদাঁড়ার একটি রেপ্লিকা দিয়ে এসেছিলেন। দেখিয়ে দিয়েছিলেন শিরদাঁড়ার জোর। সেদিন চিকিৎসকদের আন্দোলনের চাপে ব্যারিকেড সরাতে বাধ্য হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ফের সেই শিরদাঁড়ার জোর দেখল গোটা কলকাতা।
একদিকে সতীর্থরা অনশন করছেন। অনশনমঞ্চে ভ্যানে চাপিয়ে চৌকি নিয়ে আসা হচ্ছিল। সেই চৌকি আটকে দিয়েছিল পুলিশ। ওই রাস্তা দিয়ে কম গতির যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না এই কথা জানিয়ে ভ্যান আটকে দেওয়া হয়। পিছু হঠতে রাজি নন চিকিৎসকরা। গোটা কলকাতা উৎসবের আলোয় ভাসছে। তার মাঝেই চেয়ার টেবিল, চৌকি সব কাঁধে তুলে নেন চিকিৎসকরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, ধর্নাস্থলে জল আনতে দিচ্ছে না। বায়ো টয়লেট রাখতে দিচ্ছে না পুলিশ। দাবি, বার বার নানাভাবে আন্দোলনকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, আমরা বার বার বলেছিলাম এই খাট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধর্নামঞ্চে। তবুও ওরা শুনলেন না। দমানো গেল না। রাজপথে ঘাড়ে করে চৌকি নিয়ে চললেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনের সমর্থনে জুনিয়র ডাক্তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিমিং হবে অনশনের।
‘অনশন অস্ত্রের’ মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে জাতীয় সড়কে মঞ্চ বেঁধে ২১ দিন একটানা পড়ে থেকেছেন। মমতার পথের রাজনীতির উদাহরণ অনেক। তবে আন্দোলনের অনেক মাইলফলকের মধ্যে উজ্জ্বলতম ২০০৬ সালে মেট্রো চ্যানেলে টানা ২৬ দিনের অনশন। সেই আন্দোলনে প্রবল চাপে পড়তে হয়েছিল তখনকার বামপন্থী শাসকদের। জাতীয় রাজনীতির আলোও কেড়ে নিয়েছিল মমতার সেই অনশন। মমতার অনশনের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে এক করে দেখতে চাইছে না সাধারন মানুষ। বক্তব্য, ‘‘ওটা অনশন ছিল না কি! রাতে পর্দার আড়ালে কী হত তা নিয়ে তো ওঁর দলের লোকেরাই নানা কথা বলেন। এখন যে অনশন চলছে, তার সঙ্গে রয়েছে গোটা রাজ্যের মানুষের সমর্থন। অনশনকে মমতার ‘অস্ত্র’ বললে আন্দোলনের এই পথকে অসম্মান করা হবে। অনশনের অনেক ঐতিহাসিক নজির রয়েছে আমাদের দেশে।’’