এ বছর আর আলো জ্বলবে না সেই বাড়িতে! ষষ্ঠী থেকে বাড়ির সামনে ধর্নায় আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা

দারুন হইচই করে কাটত দুর্গাপুজোর চার দিন। বাড়ির পুজো বলে কথা! সকাল থেকে লোকজনের আনাগোনা। আলোয় সাজত গোটা বাড়ি। এ বছর আর আলো জ্বলবে না সেই বাড়িতে। ঢাক বাজবে না। ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ঘটনা বদলে দিয়েছে সব কিছু। বাড়ির সামনে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। ষষ্ঠী থেকে চার দিন সেখানেই ধর্নায় বসবেন আরজি করের চিকিৎসকের বাবা-মা। পাশে থাকবেন আত্মীয়-পরিজনেরা। নির্যাতিতার বাবা-মা জানিয়েছেন, চাইলে যে কেউ আসতে পারবেন এই ধর্নাস্থলে। মঞ্চে থাকবেন শুধুই আত্মীয়েরা।
নির্যাতিতার মায়ের কথায়, তিন বছর আগে মেয়ের আবদারে বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। বাড়ির গ্যারাজে রাখা হয়েছিল প্রতিমা। বাড়িটা আলোয় ঝলমল করত। সকাল থেকে মেলা বসে যেত। এ বছর পরিবারের সকলের সঙ্গে একটু অন্য ভাবেই পুজো কাটাতে চাইছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘বাড়িতে চার দিন পুজো হত। খুব আনন্দ হত। এ বার খুব কষ্টে রয়েছি। তাই ঘরের সামনে ধর্নামঞ্চ করেছি। ষষ্ঠী থেকে চার দিন সেখানেই বসব। পরিবারের লোকজন থাকবেন। যাঁরা আসতে চাইবেন, আসবেন। রাজনীতিকেরাও চাইলে আসতে পারেন সেখানে। তবে মঞ্চে তাঁদের স্থান হবে না।’’ নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘রাজনীতির রং আমরা চাই না।’’ নিহত চিকিৎসকের বাবা মা বলেন, ‘আমরা পুজোয় বাড়িতে আনন্দে থাকতাম। এই বাড়িতে তো আর কোনও দিন পুজো হবে না। তাই সাধারণ মানুষের মতো আমরা পুজোর ৪ দিন উঠোনে থাকব। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী। সেজন্য বাড়ির উঠোনে একটা মঞ্চ বেঁধেছি। ওই মঞ্চে আমাদের পরিবারের লোকেরা থাকবেন। আমরা কাউকে আমন্ত্রণ জানাইনি। তবে যার ইচ্ছা করবে আসবেন। যে কেউ আসতে পারেন।’
এদিকে, আরজি করের নির্যাতিতার বিচার এবং সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেছেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। নির্যাতিতার মা বলেন, তাঁর মেয়ের বিচারের দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা সকলেই এখন তাঁর সন্তান। ওঁদের কথা ভেবে তিনি এখন কষ্ট পাচ্ছেন। মেয়েকে হারিয়েছি। জুনিয়র ডাক্তারেরা যে আন্দোলন করছেন, তা দেখে ঘরে বসে আমার কান্না পাচ্ছে। ওরা না খেয়ে আছে। আমি তো এখন ওদেরও মা। ওরা আমার সন্তান। মুখ্যমন্ত্রীকে ওদের সমস্যার সমাধান করার জন্য অনুরোধ করব।’’ নির্যাতিতার বাবা রাজ্য সরকারের ‘মানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়ে সরকার কোনও কথা বলেনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। উল্টে অসহযোগিতা করছে। অনশনকারীরা আবেদন করলেও তাঁদের জন্য বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করেনি। সরকার কেন মানবিক হচ্ছে না?’’ জয়নগর, পটাশপুরের কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘‘সরকার মানবিক ভাবে চিন্তাভাবনা না করলে জয়নগর, পটাশপুরের মতো ঘটনা থামবে কী করে? থামার লক্ষণ দেখছি না।’’ জয়নগরে নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। পটাশপুরে বধূকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘মা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, হাসপাতালের ভিতরে কী করে আমার মেয়ের সঙ্গে ওই কাণ্ড হয়েছিল? তথ্যপ্রমাণ লোপাটও কি দুর্ঘটনা?’’