দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ম্যাকলারেনের, মহমেডানকে উড়িয়ে ডার্বি জয় মোহনবাগানের

মোহনবাগান-৩(ম্যাকলারেন, শুভাশিস, স্টুয়ার্ট)
মহমেডান স্পোর্টিং-০
বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা। দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। শনিবার যুবভারতীতে মহমেডান স্পোর্টিংকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিল মোহনবাগান। সবুজ মেরুন জার্সিতে প্রথম গোল জেমি ম্যাকলারেনের। ম্যাচের শুরুতে নেমেই মোলিনার বাগানে ফুল ফোটালেন অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপার। বাকি দুটো গোল শুভাশিস বসু এবং গ্রেগ স্টুয়ার্টের। ইস্টবেঙ্গল না পারলেও, করে দেখাল গঙ্গাপারের আরেক ক্লাব। কলকাতা থেকে সদ্য বিদায় নিয়েছেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। জোসে মোলিনার মাথার ওপরও খাড়া ঝুলছিল। মিনি ডার্বি হারলে হয়তো পুজোর আগেই বিমানের টিকিট হাতে ধরিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু বাঙালিদের সেরা উৎসবের আগে সমর্থকদের উপহার দিলেন স্প্যানিশ কোচ। চলতি আইএসএলে সেরা ম্যাচ খেলল মোহনবাগান। তিনের বদলে গোল সংখ্যা আধ ডজন হতে পারত। প্রথমার্ধেই তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলে সবুজ মেরুন। বিরতিতে তিন গোলে এগিয়ে ছিল বাগান। দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন মনবীর, লিস্টন, ম্যাকলারেন। তবে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল মোহনবাগানের। ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ডার্বির আগে মনোবল বাড়িয়ে রাখল ম্যাকলারেন, স্টুয়ার্টরা। চারে উঠে এল মোহনবাগান। অন্যদিকে হারের ফলে দশে নেমে গেল মহমেডান। গ্যালারিতে বসে দলের এই কামব্যাক দেখলেন কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা।
চেন্নাই থেকে জিতে ফেরায় মিনি ডার্বির আগে মানসিকভাবে কিছুটা এগিয়ে থেকে নেমেছিল মহমেডান। তবে ম্যাচের আগে আন্দ্রে চের্নিশভ জানিয়েছিলেন, বেঙ্গালুরুর কাছে বড় ব্যবধানে হারায় মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে মোহনবাগান। রুশ কোচের কথাই সত্যি হল। পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ। প্রথম তিন ম্যাচে ভাল খেলা মহমেডান, এদিন জঘন্য ফুটবল খেলল। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় শনিবাসরীয় রাতে প্রথম থেকেই অলআউট ঝাঁপায় বাগান। এই প্রথম ম্যাকলারেনকে প্রথম একাদশে রাখেন মোলিনা। রিজার্ভে রাখা হয় দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং জেসন কামিন্সকে। তার ফল পেল দল। একেবারে ‘ফক্স ইন দ্য বক্স।’ নিজের জাত চেনালেন অজি বিশ্বকাপার। অসাধারণ টাচ।
ম্যাকলারেনকে সামনে রেখে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দল সাজান মোলিনা। আলেক্সিস, কাসিমভদের পুরোপুরি বোতলবন্দি করে দেন। যার ফলে মাঝমাঠ ছিল বাগানের দখলে। তাতেই যাবতীয় কারিকুরি শেষ সাদা কালো ব্রিগেডের। প্রথমার্ধে একটাও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মহমেডান। শনি রাতে সবুজ মেরুনের রিং মাস্টার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। গোল করলেন এবং করালেন। শুধু তাই নয়, গোটা মাঠ দাপিয়ে খেলেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কার তারই প্রাপ্য ছিল। ৮ মিনিটে বাগানকে এগিয়ে দেন ম্যাকলারেন। লিস্টনের কর্নার হেড করেন স্টুয়ার্ট। আবার হেড করে গোলে পাঠান অজি বিশ্বকাপার। সবুজ মেরুন জার্সিতে প্রথম থেকে শুরু করেই গোল। তার চার মিনিট আগেও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাগান। কিন্তু আপুইয়ার শট ফিস্ট করে বাঁচান পদম ছেত্রী। ১৩ মিনিটে আবার পতন রোখেন মহমেডানের কিপার। স্টুয়ার্টের পাস থেকে লিস্টনের শট বাঁচান। প্রথমার্ধেই গোল সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যাকলারেন। কিন্তু মনবীরের মাইনাসে পা ছোঁয়াতে পারেননি বিশ্বকাপার। প্রথমার্ধেই কলকাতার আরেক প্রধানকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় স্টুয়ার্টরা। সেই জায়গা থেকে ফিরতে পারেনি চের্নিশভের দল। ম্যাচের ৩১ মিনিটে ২-০। স্টুয়ার্টের ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল করেন শুভাশিস। মহমেডান কিপারের হাতের তলা দিয়ে বল গলে যায়। তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার গোল। এবারও একই যুগলবন্দিতে। শুভাশিসের পাস থেকে অনেকটা জমি পার করে শরীরের ভাঁজে দু’জনকে কাটিয়ে গোল করেন স্টুয়ার্ট। বিরতির পরও ম্যাচের রাশ বাগানের হাতেই ছিল। কিন্তু একাধিক গোল মিস। ৭৫ মিনিট মাঠে ছিলেন ম্যাকলারেন। শেষদিকে দিমিত্রিকে নামান মোলিনা। গোল সংখ্যা বাড়ানো সুযোগ পেয়েও মিস করেন।