‘আর কত দিন সময় চাই? জবাব দাও সিবিআই!’ শাসকের মহোৎসবের মাঝে ডাক্তারদের মহামিছিলে সাধারন মানুষের ভিড়ে বিচারের দাবি
স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবির সঙ্গে লেখা, ‘‘প্রীতিলতার এই মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই নেই।’’ ডাক্তারদের মহামিছিলে আজও চেনা স্লোগান। ফের নির্যাতিতার বিচারের দাবি। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, কিংবা ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’-এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের উদ্দেশ্যেও ভেসে এল কটাক্ষ। প্রলম্বিত তদন্তপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করে স্লোগান উঠল, ‘আর কত দিন সময় চাই? জবাব দাও সিবিআই!’ ডাক্তারদের ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। আট থেকে আশি— শামিল সকলেই। রাজ্যের সমস্ত কলেজ-হাসপাতাল থেকে শুরু করে সমাজের সর্ব স্তরে ‘ভয়ের রাজনীতি’র প্রতিবাদে মিছিল।
মহালয়ার সকালে আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে উন্মোচিত নির্যাতিতা চিকিৎসকের স্মরণে গড়ে তোলা প্রতীকী মূর্তি। মূর্তিটি গতকালই স্থাপন করা হয়েছিল হাসপাতাল চত্বরে। আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচনের সময় সময় একটি পথ নাটিকার উপস্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা চালাকীলনই চিকিৎসকরা ঘোষণা করেছিলেন যে আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার স্মরণে একটি প্রতীকী মূর্তি বসানো হবে। বুধ সকাল ১১টা নাগাদ মূর্তি উন্মোচিত হয়। নির্যাতিতা চিকিৎসকের সঙ্গে এই মূর্তির চেহারার কোনও সাদৃশ্য রাখা হয়নি। মূর্তিটিতে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাস্কর অসিত সাঁই বিনা পারিশ্রমিকে ফাইবার গ্লাসের এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন।
আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতার বাড়িতে গেল সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল। সিবিআই অফিসারদের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল পৌঁছেছেন সোদপুরে নির্যাতিতার বাড়িতে। বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে সিবিআই অফিসারদের। সেগুলি যাচাই করতেই মহালয়ার দিন নির্যাতিতার বাড়িতে গেল সিবিআই। তথ্যপ্রমাণের বিষয়গুলি সম্পর্কে মুখ খোলেননি সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। নির্যাতিতার বাবা–মা বিষয়গুলি জানলেও তদন্তের স্বার্থে এসব বাইরে আনতে চাইছেন না। আরজি কর হাসপাতালে যাতায়াত করার পর নতুন কিছু তথ্য হাতে পান সিবিআই গোয়েন্দারা। যা নিয়ে নির্যাতিতার বাবা–মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মিলিয়ে নিতে এই ঝটিকা সফর। পাওয়া তথ্যের বাইরে নিহত ডাক্তারি ছাত্রীর বাবা–মার কাছে অন্য কোনও তথ্য রয়েছে কিনা সেটাও জানতে চায় সিবিআই।
আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ভবনের ঠিক উল্টো দিকের রাস্তায় রাজ্য সরকার প্রদত্ত ‘দুর্গার ভান্ডার’ অর্থাৎ ৮৫ হাজার টাকা পুজো অনুদান প্রত্যাখ্যাত। বেলগাছিয়া যুব সম্মিলনী শারদোৎসব সমিতির সিদ্ধান্ত। তাদের দোরগোড়ায় যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যা নিয়ে গোটা রাজ্য, দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত নাগরিক আন্দোলনে উত্তালয ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য সরকার প্রদত্ত ৮৫ হাজার টাকা নেবে না। পুজো কমিটির তরফে আর্থিক কিছু অসুবিধা স্বীকার করেই সিদ্ধান্ত। বেলগাছিয়া যুব সম্মিলনীর পুজো ৮০ বছরে পদার্পণ করছে। ভৈরব মুখোপাধ্যায় লেনে তাঁদের ক্লাবের পাশেই চায়ের দোকানে, পুরনো বাড়ির রোয়াকে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারেরা বসেন, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবও করেন। নির্যাতিতা চিকিৎসকও ওই পাড়ায় আসতেন, বসতেন। তাঁর নৃশংস এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে ‘মানবিক এবং সংবেদনশীল’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তাঁরা এ বার অনাড়ম্বর ভাবে পুজো করতে চলেছেন। ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রত্যাখ্যান। বার্তায় স্পষ্ট ‘‘দুয়ারে দুঃসময়।’’ আরজি করের উল্টো দিকের পাড়ায় শুধুই ‘পুজো’ হবে। ‘উৎসব’ নয়।