February 17, 2025

১২৪ বছরের তফাৎ!‌ ইতিহাসের পাতার সেই মেয়ে, মানুষের মুখে মুখে হরিয়ানার ঝাঁঝের গ্রামে মানুর স্কুল

0
Manu Bhaker

১২৪ বছরের তফাৎ। একই অলিম্পিকের মঞ্চে জোড়া পদক। এখনও পর্যন্ত ইতিহাসে দুই ভারতীয়। ১৯০০ সালে নরম্যান প্রিচার্ড এবং ২০২৪ সালে পেলেন মানু ভাকের। ১২৪ বছরের তফাতে দুটি অলিম্পিকই অনুষ্ঠিত হয়েছে প্যারিসে। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং ২০০ মিটার হার্ডলে রূপো জিতেছিলেন প্রিচার্ড। তখন ভারত ছিল ব্রিটিশদের দখলে। ভারতের হয়ে পদক জিতলেও আদতে নরম্যান ছিলেন ব্রিটিশ। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একই অলিম্পিকে কোনো অ্যাথলিট জোড়া পদক জিতেছেন এমন সৌভাগ্য হয়নি। এর আগে পিভি সিন্ধু ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক এবং ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে পদক জিতেছিলেন।

সুশীল কুমার ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে পদক জিতেছিলেন। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের মিক্সড টিম ইভেন্ট এবং সিঙ্গল ইভেন্ট দুটি ম্যাচেই ব্রোঞ্জ জিতেছেন হরিয়ানার শুটার মানু ভাকের। একই অলিম্পিকে একই অ্যাথলিট জোড়া পদক পেলেন এমন ঘটনা ঘটল ১২৪ বছর পর। তাও আবার প্যারিসের মাটিতেই।

একই অলিম্পিক্সে দু’টি পদক। মনু ভাকের ছোটবেলায় শুটিং নয়, অন্য পাঁচটি খেলাকে ভালবেসেছিলেন। বিভিন্ন খেলায় জাতীয় গেমসে পদকও জিতেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বেছে নেন শুটিংকে। কারণ তাঁর চোখে চোট লেগেছিল। সেই চোট না লাগলে হয়তো অন্য কোনও খেলায় অলিম্পিক্সে ভারতের জার্সি পরতেন মনু। ১৪ বছর বয়সে শুটিং শুরু করেন মনু। তার আগে বক্সিং, টেনিস, স্কেটিং, ভলিবল, মার্শাল আর্টসের মতো খেলায় যুক্ত ছিলেন। জাতীয় গেমসে বক্সিং, টেনিস এবং স্কেটিংয়ে পদকও আছে মনুর। স্কুলে ভলিবল খেলতে গিয়ে চোখে চোট লাগে মনুর। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী হলেও তিনি বাধ্য হয়েছিলেন এমন খেলা বেছে নিতে যেখানে শারীরিক সংঘর্ষ নেই। তাই বক্সিং, টেনিস, স্কেটিং, ভলিবল ছেড়ে মনু বেছে নেন শুটিং।

চোখে চোট লাগলেও লক্ষ্য স্থির মনুর। দ্রুত উন্নতি করেন শুটিংয়ে। মনুর বয়স এখন ২২ বছর। মাত্র আট বছর শুটিং করেই দেশকে অলিম্পিক্স পদক এনে দিলেন। ২০০২ সালে হরিয়ানার ঝাঁঝরে জন্ম মনুর। তাঁর বাবা রামকিশন ভাকের ছিলেন মার্চেন্ট নেভির ইঞ্জিনিয়র। মা সুমেধা একটি স্কুলের প্রিন্সিপল।

সেই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন মনু। ২০১৬ সালে প্রথম বার বন্দুক হাতে নেন তিনি। সেই বন্দুকটার দাম ছিল এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি শুটিং রেঞ্জে অনুশীলন করতে যেতেন মনু। প্রতি দিন পাঁচ ঘণ্টা করে অনুশীলন করতেন।‌

গ্রামের নাম গরিয়া। হরিয়ানার ঝাঁঝের গ্রামের অভ্যন্তরে এক ছোট্ট গ্রাম। ঝকঝকে পাকা রাস্তা। দুধারে গাছগাছালি বেষ্টিত। কোথাও সবুজ প্রান্তর। কোথাও বজরার চাষ। তারই মাঝে অবস্থিত সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি। হ্যাঁ এটাই মানু ভাকেরের বাড়ি। পাশেই বিশাল স্কুল। ইউনিভারসাল মানু ভাকের। তাঁরই ইউনিভারসাল স্কুল।

স্কুল জুড়ে মানুর পদক জয়ের নানান মূহুর্তের ছবি। পদক জেতার আগে এই স্কুলের নাম তেমন কেউ না জানলেও, এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিভারসাল স্কুলের নাম। দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ছাত্রছাত্রীরা, শুধু মানুর স্কুলে পড়বেন বলে। এক ঝটকায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ শতাধিক।

পড়াশোনা ও কোচিং চলে স্কুলেই। সদ্যসমাপ্ত অলিম্পিকে জোড়া পদক জয়ী সোনার মেয়ে। আপাতত তিনি বাড়িতে নেই। অলিম্পিকে দীর্ঘ ধকল সামলেছেন। এবার ডেসটিনেশন গোয়া। একটু ছুটি কাটাতে গোয়ায়। হোটেলে থেকে কখনও ব্লিচ ফেসিয়াল। কখনও সি বিচের ধারে বসে পোজ দিচ্ছেন অলিম্পিকে পদক জয়ী। বিন্দাস মেজাজে মানু ভাকের।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed