সূর্যাস্তের পরই চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহের পোস্ট মর্টেম! ৯ আগস্ট আর জি করের মর্গে আটটি ময়নাতদন্ত হয়েছিল, তিলোত্তমার দেহ সূর্যাস্তের পর, কেন?

তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, ৯ আগস্ট আর জি করের মর্গে আটটি ময়নাতদন্ত হয়েছিল। চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ ছাড়া বাকি সাতটি হয়েছিল সূর্যাস্তের আগে। আটটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সমেতই অপূর্বকে তলব করা হয়েছিল। পরস্পরবিরোধী তথ্য উঠে এসেছে এবং অপূর্বের আগের বয়ানের সঙ্গে এ দিন ওই ক্লার্কের বয়ানের পার্থক্য রয়েছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের মামলায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস এবং হাসপাতালের মর্গের এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআই এর। শুক্রবার থেকে অপূর্বকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। ময়নাতদন্ত এবং রিপোর্টের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতিগত ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
আর জি করের মর্গের ‘ক্লার্ক’ পর্যায়ের এক কর্মীকেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের পরের পর্যবেক্ষণ লেখায় ওই কর্মীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওই দিন ময়নাতদন্ত কী ভাবে হয়েছিল, সে বিষয়েও ওই কর্মীকে অপূর্বের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সুশান্ত রায়কেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ‘মগজ’ বলে পরিচিত সুশান্ত এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগডোগরা হয়ে বিমানে কলকাতা পৌঁছন। মঙ্গলবার রাতে সিবিআই ইমেল করে সুশান্তকে ডেকে পাঠায় বলে সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, জলপাইগুড়ির চক্ষু চিকিৎসক সুশান্ত ৮ আগস্ট কলকাতায় এসেছিলেন। ৯ আগস্ট সকালে সন্দীপ তাঁকে ফোন করে আর জি করে ডাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন সুশান্ত। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং ময়নাতদন্তের ত্রুটি-বিচ্যুতিতে সন্দীপের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন চিকিৎসকের কী ভূমিকা ছিল, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুশান্তকে প্রয়োজনে ফের ডাকা হতে পারে। আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, টালা থানায় এই মামলা সংক্রান্ত কিছু ভুয়ো নথি বানিয়ে সেগুলি অদল-বদল করা হয়েছিল। দুই অভিযুক্তকে (সন্দীপ ও অভিজিৎ) হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই তথ্য তাঁদের হাতে উঠে এসেছে বলে আদালতে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। টালা থানার সিসি ফুটেজ-সহ ডিভিআর ও হার্ড ডিস্কও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই তথ্যও দিন দুয়েকের মধ্যে চলে আসবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
দু’জনের নারকো ও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানো হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলকাতা অফিসের বিশেষজ্ঞ ভিন্রাজ্যে একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে গিয়েছেন। বুধবার তিনি আসতে পারেননি আদালতে। সন্দীপের আইনজীবীর দাবি, দেরিতে এফআইআরের অভিযোগ তাঁর মক্কেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাঁর যুক্তি, ৯ আগস্ট ঘটনার কথা জানতে পেরে সকাল ৯টা ৫৮মিনিট নাগাদ টালা থানার তৎকালীন ওসিকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন সন্দীপ। এর পর দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাসপাতালের সুপারের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। সে ক্ষেত্রে দেরিতে এফআইআর করার অভিযোগ কী ভাবে সন্দীপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি কার এক্তিয়ারভুক্ত— সে বিষয়টি নিয়েও মন্তব্য করেন সন্দীপের আইনজীবী। আদালতে তিনি জানান, মেডিক্যাল কলেজে কিছু হলে তার দায়িত্ব সরাসরি অধ্যক্ষের উপর বর্তায়। হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্ব হাসপাতালের সুপারের।