বিদ্যাসাগরের জীবনের অজানা ঘটনা, ঈশ্বরচন্দ্র মহাশয়ের জন্মদিনে মানুষটিরপরিচিত কিছু তথ্য

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় শুধু যে বাঙালি নবজাগরণের এক যুগপুরুষ। তাঁর অবদান বাঙালি জীবনের বহু কিছুতে। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে’র পাতা দেশের আসল চিত্র তুলে ধরত দেশবাসীর সামনে। সারা দেশ বুঝতে পারল, নীলকরদের অত্যাচার কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে’র দুঁদে সম্পাদক ছিলেন হরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু অকালেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর। হরিশের মৃত্যুর পর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে’র ছাপাখানা বিক্রি কয়ে দেওয়া ছাড়া হরিশচন্দ্রের পরিবারের আর কোনও উপায় ছিল না। হরিশের মা শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের। বিদ্যাসাগর গিয়ে ধরলেন কালীপ্রসন্ন সিংহকে। তিনি পাঁচ হাজার টাকায় প্রেস আর কাগজের সত্ত্ব, দুটোই কিনে নিলেন। অনশনে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল হরিশচন্দ্রের পরিবার।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন এক বিধবার সঙ্গে। পরিবারের সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাজ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সেই ছেলেকেই করেছিলেন ত্যাজ্য। কেন সেই কাজ করেছিলেন, তা নিয়েও আছে নানা ধরনের তত্ত্ব। যোগেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি কথায় লিখেছেন তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বিদ্যসাগর। বসার জন্য বৈঠকখানায় ঢালা বিছানা পাতা, দুটো তাকিয়াও রাখা ছিল। বিদ্যাসাগর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কি বিয়ে করতে এসেছি যে আমার জন্য বরাসন পেতে রেখেছ? তাকিয়া কী হবে? আমি তো কখনও হেলান দিয়ে বসি না। কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘বিদ্যাসাগর বরাবর চেয়ারে বসিতেন।’ অথচ, কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে কিংবা সুরেন্দ্রনাথ পার্কে তাঁর যে মূর্তি আছে, সেগুলোতে তিনি আসনপিঁড়ি হয়ে বসে আছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’র দুটি সনেট ঈশ্বরচন্দ্রকে নিয়ে লেখা। যদিও প্রথমটিতে (নাম: ‘বঙ্গদেশে এক মান্য বন্ধুর উপলক্ষে’) কিছুটা রাখঢাক ছিল, কিন্তু পরেরটিতে (নাম: ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’) তা শিরোনামে প্রকট হয়ে উঠেছে। ১৮৬৯ সালে বিদ্যাসাগরের গ্রামেই একটি বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষ কোনও কারণে সেটি হয়নি। এ জন্য তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন। এবং আর কখনও নিজের গ্রামে ফিরে যাননি।