জেল থেকে জেলায় তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল, ‘‘পাঙ্গা নিতে এসো না। হাতে চুড়ি পরে বসে নাই। যে দিন গোটাব, সে দিন একদম গুটিয়ে দেব’’
‘‘আমি দাবা খেলতে জানি। হাডুডু-ও জানি। খেলা হবে, গান শুনিয়ে লাভ নেই। পাঙ্গা নিতে এসো না। হাতে চুড়ি পরে বসে নাই। যে দিন গোটাব, সে দিন একদম গুটিয়ে দেব।’’ কাজল শেখ নিজের বক্তৃতায় কারও নাম করেননি। কাজল হুঁশিয়ারি দিতে চেয়েছেন নানুরেরই ‘অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল নেতা করিম খানকে বলে মনে করছেন অনেকেই। দু’বছর পর মঙ্গলবার জেল থেকে জেলায় ফেরেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। বুধে বোলপুরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠকও করেন। বৈঠকে ছিলেন না জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ।
কে এই করিম? অনুব্রত তিহাড় জেলে থাকার সময়ে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ রাখতেন করিম। দিনের পর দিন গিয়ে দিল্লিতে থাকতেন। আদালতে অনুব্রতের মামলার শুনানিতেও নিয়মিত হাজির থাকতেন করিম। জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে অনুব্রতের সম্পর্ক আগে থেকেই ‘মধুর’। বুধ রাতেই কাজলের নিজের ‘এলাকা’ নানুরে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে তাঁর বক্তৃতায় ভিন্ন সুর। বীরভূম জেলার রাজনীতিতেকাজলেরও ‘উত্থানভূমি’ নানুরই। অনুব্রত জেলায় ফিরতে সেই করিমের দাপট দেখে পাল্টা সভা করে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন কাজল।
করিম বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। ভোটের সময়ে অনুব্রত ছিলেন জেলবন্দি। জেলা সংগঠন চালাত দলীয় কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কাজল। ভোটের পরে ‘অনুব্রত-বিরোধী’ কাজলকেই জেলা সভাধিপতি করে দল। অনুব্রত জেলায় ফেরা ইস্তক বীরভূমের গোষ্ঠী-রাজনীতির বিভিন্ন সমীকরণ প্রকাশ্যে। মঙ্গলবার সকালে অনুব্রত বাড়িতে ঢোকার পরে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীরা দেখা করতে গেলে দুয়ার থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অনুব্রত। অথচ নলহাটির বিধায়ক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ, বোলপুর পুরসভার পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ, তাঁর স্বামী দেবাশিস ঘোষদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এতেই বীরভূমের তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী-ব্রত’ প্রকট।
বুধে নানুরের কর্মী-বৈঠকে কাজল এ-ও বলেছেন, ‘‘গ্রুপবাজি করতে এসো না। গ্রুপবাজি করতে এলে ভাল হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে আমি কাজ করব।’’ মুখে কাজল বলছেন, অনুব্রত তাঁর ‘অভিভাবক’। বাস্তবের ঘটনাক্রম ‘অন্য’ কথা বলছে বলেই অভিমত দলের। তাঁদের বক্তব্য, অভিভাবকের ‘ঘনিষ্ঠ’কে লক্ষ্য করে এমন হুঁশিয়ারি কেন! তৃণমূলের প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘অনুব্রত জেলে থাকার সময় পঞ্চায়েত ও লোকসভায় তৃণমূল বীরভূমে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ফলে তিনি না থাকলে দল ভোটে জিতবে না, সেই ‘মিথ’ ভেঙে গিয়েছে। এর মধ্যে কাজলেরাও নিজেদের মতো করে সংগঠন গড়েছেন। ফলে সংঘাত থাকবেই। তা কতটা ঠিকরে বার হয়, সেটাই দেখার।’’ অনুব্রত জেল থেকে জেলায় ফিরতেই আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চলছেই।