বানভাসি বাংলা, ডিভিসিকে ‘ভিলেন’ বানালেও, সব জানেন মমতা! পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই ছাড়া হয় জল, জানাল জল শক্তি মন্ত্রক
বন্যার জন্য প্রতিবারের মতো এ বারেও শুরু কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই। পরিস্থিতিকে প্রথম থেকেই ‘ম্যান মেড বন্যা’ অভিহিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-কে আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। না জানিয়ে ডিভিসি পাঞ্চেত এবং মাইথন বাঁধ থেকে বিপুল পরিমাণে জল ছেড়েছে অভিযোগ জানিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা। হুগলি, দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল থইথই অবস্থা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাওড়া, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার অনেক এলাকায়। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অধীনে থাকা ডিভিসি আদৌ একার সিদ্ধান্তে জল ছাড়েনি। নিম্নচাপের দরুণ টানা বৃষ্টির জন্যই জল ছাড়তে হয়েছে। প্রতিটি জলাধারেরই জলধারণের একটা সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। যেমন পাঞ্চেতের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ৪৪৫ ফুট। ৪১০ ফুট হয়ে গেলেই জল ছাড়তে হয়। আবার মাইথনের জলাধারে ৫০০ ফুট পর্যন্ত জল ধরতে পারে। কিন্তু নিয়ম বলছে, ৪৮০ ফুট পার হওয়ার আগেই জল ছাড়া শুরু করে দিতে হবে। অঞ্জনিকুমার বলেন, ‘‘কেউ জানেন না, এমন অভিযোগ করা যাবে না। কারণ, কমিটির সকলকে নিয়ে একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে।
দামোদর অববাহিকায় বন্যার সমস্যা দীর্ঘকালের। আর সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্যই ডিভিসি তৈরি হয়েছিল। দামোদর নদের অববাহিকা বাংলা ও ঝড়খণ্ড (তখন বিহারের অংশ) মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ আমলেই বর্ধমানের মহারাজা এবং বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেখানেই ডিভিসি তৈরির পরিকল্পনা হয়। তাতে বড় ভূমিকা ছিল বিআর অম্বেডকরেরও। কাজ শুরু হয় ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই। সেই সময় থেকেই ডিভিসি কিছু নিয়ম মেনে চলে বলে জানান ওই প্রাক্তন চেয়ারম্যান। আর ডিভিসির এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) অঞ্জনিকুমার দুবে বলেন, ‘‘ডিভিসি নয়, কখন এবং কতটা জল ছাড়া হবে সেটা ঠিক করে দামোদর ভ্যালি রিসার্ভার রেগুলেশন কমিটি। সেই কমিটিতে বাংলা এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি রয়েছেন। এ ছাড়াও ডিভিসি এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের প্রতিনিধিত্ব থাকে। প্রতি মুহূর্তে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তবেই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়।’’
রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কথা বিশদে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করে তিনি লিখেছিলেন, অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়া হয়েছে। সেই চিঠির পাল্টা দিল জল শক্তি মন্ত্রক। চিঠিতে জল শক্তি মন্ত্রী সিআর পাতিল জানিয়েছেন, দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি)-র মাধ্যমে মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ পরিচালিত হয়। এই কমিটিতে ডিভিসি, জল কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটিই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পাতিল তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পশ্চিমবঙ্গের আধিকারিকদের অনুরোধে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ৫০ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছিল। কিন্তু ১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়। পাতিল লিখেছেন, “বাঁধ বিপর্যয়ের ফলে দক্ষিণবঙ্গকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে বাঁধ দু’টি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।” ডিভিসি-র বাঁধে ৪ লক্ষ ২৩ হাজার কিউসেকের বেশি জল জমলেও মাত্র আড়াই লক্ষ কিউসেকের মতো জল ছাড়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ডিভিআরআরসি দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মাত্রাছাড়া যাতে না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে প্রতিটি পর্যায়ে রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ করেছে। জল শক্তি মন্ত্রকের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ডিভিসি-কে দোষারোপ করেছেন। ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছেড়ে পরিকল্পিত ভাবে বাংলায় ‘ম্যান মেড বন্যা’ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। আগামী দিনে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা।